প্রাকৃতিক দুর্যোগ মহামারি ও ঘূর্ণিঝড় আসার কারণ

নিউজ ডেস্ক

নতুনের সাথে আমরা

প্রকাশিত : ০৪:৫৭ পিএম, ২৮ মে ২০২০ বৃহস্পতিবার

প্রাকৃতিক দুর্যোগ মহামারি ও ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সতর্ক করতে পবিত্র কোরআনুল কারিমের একাধিক আয়াতে নাজিল করেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন-

ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ لِيُذِيقَهُم بَعْضَ الَّذِي عَمِلُوا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ
‘স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে।’ (সূরা: রূম, আয়াত: ৪১)।

وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِّنَ الْخَوفْ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِّنَ الأَمَوَالِ وَالأنفُسِ وَالثَّمَرَاتِ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ
‘এবং অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের।’ (সূরা: বাকারা, আয়াত: ১৫৫)।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, মহামারি দেখা দিলে প্রিয় নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাহ বিচলিত হতেন। তিনি আল্লাহর আজাব-গজবকে ভয় করতেন। তিনি সাহাবিদের এসব আজাব-গজব থেকে মুক্ত থাকতে দিক-নির্দেশনাসহ তাওবাহ-ইসতেগফারের পরামর্শ দিতেন।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মহামারি আসার কারণ বর্ণনায় হাদিসের ঘোষণা:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসব মহামারি, ঘূর্ণিঝড়সহ যাবতীয় বিপদ-আপদ কেন হয়, সে সম্পর্কে সাহাবাদের কাছে বর্ণনা করেছেন। এমন কিছু কাজ আছে যেসব কাজের কারণে আল্লাহ তায়ালা মানুষের ওপর দুর্যোগ-মহামারি চাপিয়ে দেন। হাদিসে এসেছে-

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের দিকে এগিয়ে এসে বললেন, ‘হে মুহাজিরা! তোমরা পাঁচটি বিষয়ে পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। তবে আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি, যেন তোমরা তার সম্মুখীন না হও। আর তাহলো-

(১) যখন কোনো জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন মহামারি আকারে (নতুন-নতুন) প্লেগরোগের প্রাদুর্ভাব হয়, যা আগের লোকদের মধ্যে কখনও দেখা যায়নি।

(২) যখন কোনো জাতি ওজন ও পরিমাপে কারচুপি করে তখন তাদের ওপর নেমে আসে দুর্ভিক্ষ, কঠিন পিবদ-মুসিবত।

(৩) আর যখন কোনো জাতি জাকাত আদায় করে না, তখন আসমান থেকে বৃষ্টিবর্ষণ বন্ধ করে দেয়া হয়। যদি জমিনে চতুষ্পদ জন্তু ও নির্বাক প্রাণী না থাকতো তবে আর কখনও বৃষ্টিপাত হতো না।

(৪) যখন কোনো জাতি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, তখন আল্লাহ তাদের ওপর বিজাতীয় দুশমনকে ক্ষমতাসীন করে দেন। আর তারা (শাসকবর্গ মানুষের) সহায় সম্পদ কেড়ে নেয়।

(৫) আর যখন তোমাদের শাসকবর্গ আল্লাহর কিতাব মোতাবেক মীমাংসা করে না এবং আল্লাহর নাজিলকৃত বিধান গ্রহণ করে না, তখন আল্লাহ তাদের পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ লাগিয়ে দেন। (ইবনে মাজাহ)।

উল্লেখিত পবিত্র কোরআনের আয়াত ও হাদিসের দিক-নির্দেশনা প্রমাণ করে যে, মানুষের গুনাহের কারণেই দুনিয়াতে বিভিন্ন রকম বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে। এ বিপর্যয় কখনো সমুদ্রে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, জমিনে ঝড়-তুফান, অজানা মহামারি, রোগ-ব্যধি, অন্যায়ভাবে যুদ্ধ-বিগ্রহ তৈরি করে দেয়।

এ থেকে উত্তরণে একমাত্র উপায় হলো- দুনিয়ায় যাবতীয় অন্যায় কাজ ছেড়ে দিয়ে মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালার দিকে ফিরে আসা। বেশি বেশি তাওবাহ ইসতেগফার করা। মানুষের অধিকারের ব্যাপারে সতর্ক হওয়া। তবেই মহান আল্লাহ এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ সব বিপদ-আপদ থেকে হেফাজত করবেন। তাই মহান আল্লাহর কাছে তার আজাব থেকে বাঁচত প্রথমেই অন্যায়মূলক সব গোনাহের কাজ ছেড়ে দেয়া আবশ্যক।

ইয়া রাব্বুল আলামিন আল্লাহ সুবাহানু ওয়া তায়ালা! আপনি সারা বিশ্ববাসীকে দুনিয়ার সব বিপর্যয় থেকে হেফাজতে রাখুন ও হেদায়েত দান করুন। আমিন।