১৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: সিলেটে সুতারকান্দি গোয়ালীপাড়ার পাকঘাঁটির উপর আক্রমণ করে মুক্তিবাহিনী

ফিচার ডেস্ক

নতুনের সাথে আমরা

প্রকাশিত : ০৮:৪০ পিএম, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ শনিবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

১৯৭১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর দিনটি ছিল শনিবার। সিলেটে মুক্তিবাহিনী সুতারকান্দি গোয়ালীপাড়ার পাকঘাঁটির উপর ২” মর্টার ও এলএমজিসহ আক্রমণ করে। পাকসেনারা পাল্টা ৩” মর্টার ও মেশিনগানের সাহায্যে প্রতিরোধ করলে উভয়পক্ষের মাঝে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষে পাকবাহিনীর ২ জন সৈন্য নিহত হয়। শাহবাজপুর চা বাগানে টহলরত পাকসেনাদের উপর মুক্তিযোদ্ধারা আকস্মিক হামলা চ্যালায়।

অপর দুটি গেরিলাদল সরাপাড়ের পাক নিয়ন্ত্রিত এলাকায় সোনাই নদীতে ফেলে আসা একটি ২” মর্টার, দুটি এসএলআর ও দুটি ৩০৩ রাইফেল উদ্ধার করে নিয়ে আসে। ২ নম্বর সেক্টরে মুক্তিবাহিনীর টহলদার দল কসবার চারগাছা বাজারের কাছে পাকবাহিনীর একটি টহলদার দলকে অ্যামবুশ করে। এই অ্যামবুশে ২০ জন পাকসেনা হতাহত হয়। এ সংবাদ পেয়ে পাকসেনাদের একটি শক্তিশালী দল তিন নৌকা বোঝাই করে পাকসেনাদলের সাহায্যার্থে অগ্রসর হয়। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের পৌঁছনোর আগেই শিরাইলের কাছে অ্যামবুশ করে দুটি নৌকা ডুবিয়ে দেয়। এতে নৌকা দুটির অধিকাংশ পাকসেনা নিহত হয়। এই সংঘর্ষে একজন মুক্তিযোদ্ধা শহিদ হন।

কোম্পানি কমান্ডার মোমতাজউদ্দিন খানের নেতৃত্বে ময়মনসিংহের বান্দিয়া এলাকায় রাজাকারদের সঙ্গে  মুক্তিযোদ্ধাদের ৪ ঘন্টাব্যাপী লড়াই হয়। গুলি বিনিময়ে ১২ জন রাজাকার নিহত হয়। চট্টগ্রামের গৌরাঙ্গপাড়ার পাক অবস্থানের উপর মুক্তিযোদ্ধারা অতর্কিত আক্রমণ চালায়। এতে  কয়েকজন পাকসৈন্য নিহত হয়।

মুক্তিযোদ্ধাদের বড়পঞ্জি ক্যাম্পের উপর গভীর রাতে পাকসৈন্যরা প্রায় ২৫ রাউন্ড ১০৫ এমএম শেল নিক্ষেপ করে। পূর্ব সতর্কতার কারণে মুক্তিযোদ্ধাদের তেমন কোন ক্ষতি হয়নি। ঘোড়াঘাটের ফিলিপসের নেতৃত্বে স্থাপিত মাইন বিস্ফোরণে পাকসেনাদের একটি বেডফোর্ড গাড়ী ধ্বংস হয়। ৭ নম্বর সেক্টরে মুক্তিবাহিনী ইপিআর কমান্ডার সালেক বেঙ্গল রেজিমেন্টের মান্নান, ঢাকা পুলিশের হাবিলদার রজব আলী এবং ছাত্র রঞ্জিত কুমার মহন্ত, প্রদীপ কুমার করসহ একটি গেরিলাদল হিলির কাছে পাকসেনাদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এই সংঘর্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের পেতে রাখা মাইনে একটি জিপসহ বহু পাকসৈন্য হতাহত হয়।

রাজশাহীর ফারসিপাড়ায় মুক্তিবাহিনী পাকসেনাদের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। এই যুদ্ধে পাকবাহিনীর ৫ জন সৈন্য নিহত হয়। মুক্তিবাহিনী কোনো ক্ষতি ছাড়াই নিরাপদে নিজ ঘাঁটিতে ফিরে আসে। মুক্তিবাহিনী যশোরের টুঙ্গী এলাকায় পাকবাহিনীর অবস্থানের ওপর আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণে পাকসেনাদের একটি বাঙ্কার ধ্বংস হয়। এবং ২ জন পাকসেনা নিহত হয়। সিলেটের জৈন্তাপুরে মুক্তিবাহিনী পাকসেনাদের ওপর অতর্কিত আক্রমণ চালালে ২ জন পাকসেনা নিহত হয়। ঢাকার একটি গেরিলাদল লৌহজং থানার কাছে লৌহজং থেকে নারায়ণগঞ্জগামী কয়েক হাজার মণ পাটসহ কয়েকটি নৌকা ডুবিয়ে দেয়।

বাংলাদেশ প্রশ্নে আলোচনার জন্য বিশ্বের ২৪টি দেশ থেকে ১৫০ জন প্রতিনিধি দিল্লী আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। সম্মেলনে বাংলাদেশ সমস্যার সন্তোষজনক সমাধানের লক্ষ্যে বেশ কিছু প্রস্তাব গৃহীত হয়। আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী সবক’টি দেশ বাংলাদেশের জনগণের মুক্তিসংগ্রাম সমর্থন করেন। বাংলাদেশ সরকারের কর্মকাণ্ড ও ভারতে শরণার্থীদের আশ্রয়দানকে তারা অভিনন্দন জানান। সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সহযোগিতা প্রদানেরও আশ্বাস দেয়।