অতীতের কর্মকাণ্ডসহ সব বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে ইভ্যালির বোর্ড সদস্য করা হবে

নিউজ ডেস্ক

নতুনের সাথে আমরা

প্রকাশিত : ০৪:৩৩ পিএম, ১৩ অক্টোবর ২০২১ বুধবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির পরিচালনা পর্ষদ গঠনে যাদের নাম উঠে এসেছে, তাদের অতীতের কর্মকাণ্ডসহ সব বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে বোর্ডে পাঠানো হবে বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।

প্রতারণার অভিযোগে ইভ্যালির সিইও ও চেয়ারম্যান গ্রেফতার হওয়ায় চার সদস্যের বোর্ড গঠন এবং নথি নিয়ে পরিচালনা পর্ষদ গঠনে হাইকোর্টের আদেশের নির্ধারিত দিন বুধবার (১৩ অক্টোবর) বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন।

আদালতে আজ আবেদনকারীর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী এ এম মাছুম ও সৈয়দ মাহসিব হোসেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও প্রতিযোগিতা কমিশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তাপস কান্তি বল। রেজিস্ট্রার ফর জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এ কে এম বদরুদ্দোজা।

গত ২২ সেপ্টেম্বর ইভ্যালিকে কেন অবসায়ন করা হবে না, তা জানতে চেয়েছিলেন হাইকোর্ট। এরপর গত ৩০ সেপ্টেম্বর নথিও তলব করেন আদালত। নথি আসার পর ১২ অক্টোবর এ বিষয়ে শুনানিতে ইভ্যালি লিমিটেড পরিচালনার জন্য চার সদস্যের অন্তর্বর্তীকালীন বোর্ড গঠনের পক্ষে মতামত দেন হাইকোর্ট।

আদালত বলেন, বিচারপতি, সচিব ও চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসহ চারজন রাখা যেতে পারে। বেসরকারি কোম্পানিতে চারজনের বেশি সদস্যের দরকার নেই।

এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার (১৩ অক্টোবর) সংশ্লিষ্ট হাইকোর্টের বেঞ্চে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি পরিচালনার জন্য যে কমিটি গঠনের কথা বলেছেন, তার জন্য তিনজন সাবেক সচিবের নাম পাঠায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষে আইনজীবী তাপস কান্তি বল এ তালিকা আদালতে জমা দেন।

প্রস্তাবকৃত তিনজনই সাবেক সচিব। তারা হলেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মাকছুদুর রহমান পাটোয়ারী, স্থানীয় সরকার (স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন বিভাগের) মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. রেজাউল আহসান ও সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং সাবেক সচিব ইয়াকুব আলী পাটোয়ারী।

এর মধ্যে একজনকে রাখা হবে কমিটিতে। সে হিসেবে নামের এ তালিকা আদালতে দাখিল করা হয়েছে। এখান থেকে নাম নির্বাচন করে আদালত একজনকে বোর্ডে পাঠাবেন। আদালত চাইলে এর বাইরে থেকেও নাম অন্তর্ভুক্ত করতে পারবেন বলেও জানান তাপস বল।

তিনি জানান, এছাড়া একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, একজন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস ও একজন আইনজীবী নির্বাচন করবেন আদালত।

এ বিষয়ে আগামী ১৭ বা ১৮ অক্টোবর শুনানি করে ওইদিন কমিটি গঠন করতে পারেন হাইকোর্ট। বিষয়টি আদালতে আজ শুনানি করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ভোক্তা অধিকার, প্রতিযোগিতা কমিশনের আইনজীবী তাপস কান্তি বল।

অন্যদিকে রিট আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার সৈয়দ মাহসিব হোসাইন।

এসময় আদালত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি গঠনে নাম আসা কর্মকর্তাদের অতীত জেনে তারপর বোর্ডে নিয়োগ দেওয়ার আদেশ দেবেন হাইকোর্ট।

আইনজীবী এ কে এম বদরুদ্দোজা বলেন, ‘কোম্পানিটি অবসায়নের আবেদন করেছে। এটা নিষ্পত্তি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে কে? যেহেতু প্রতিষ্ঠানটির দুজন পরিচালকই কারাগারে। এখন সম্পদের দায়-দেনা, হিসাব-নিকাশসহ প্রতিষ্ঠানটির ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী ফোরাম গঠন করার কথা ভাবছেন হাইকোর্ট। এ কারণে হাইকোর্ট চার সদস্যের অন্তর্বর্তীকালীন একটি বোর্ড গঠনের পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। এতে একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, একজন আইনজ্ঞ, একজন সচিব ও একজন চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্টকে রাখার কথা বলেছেন।’

এর আগে মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি পরিচালনার জন্য কমিটি করে দেওয়ার কথা বলেন হাইকোর্ট। ওইদিন একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, একজন অবসরপ্রাপ্ত সচিব, চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্ট ও একজন আইনজীবীকে কমিটিতে রাখার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন আদালত। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে এমন তিনজনের নাম উল্লেখ করে প্রস্তাব আদালতে পাঠানোর জন্য বলেছেন। পরে এ বিষয়ে আদেশ দেওয়ার জন্য বুধবার দিন ঠিক করা হয়। আজ আদেশ না দিয়ে সেটি পিছিয়ে দেন।

ইভ্যালির দুই কর্ণধার কারাগারে থাকায় এ বোর্ড বা কমিটি গঠন করতে আদেশ দিয়েছেন বলে জানান আইনজীবীরা।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর এক আদেশে ১২ অক্টোবরের মধ্যে ইভ্যালির নথিপত্র আদালতে দাখিল করতে রেজিস্ট্রার জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসকে নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। সে অনুযায়ী নথি দাখিল করা হয়।

এর আগে এক গ্রাহকের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে ২২ সেপ্টেম্বর ইভ্যালির সব ধরনের সম্পদ বিক্রি এবং হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ওই আদেশের ধারাবাহিকতায় ৩০ সেপ্টেম্বর ইভ্যালির সব ধরনের নথি তলব করা হয়।

আবেদনকারী ইভ্যালিতে গত মে মাসে একটি ওয়াশিং মেশিন অর্ডার করেন। অর্ডারের সময় তিনি অর্থ পরিশোধ করেন মোবাইল ফোনভিত্তিক ডিজিটাল আর্থিক সেবার মাধ্যমে। এরপর কোম্পানিটি অনলাইনে তাকে একটি পণ্য কেনায় ৩৩ হাজার ৩০৮ টাকার রসিদও দেয়।

কিন্তু এতদিনেও তারা পণ্যটি বুঝিয়ে দেয়নি। পণ্য বুঝে পেতে আবেদনকারী যোগাযোগ করলে তাকে বারবার আশ্বাস দেওয়া হয়, কিন্তু পণ্য বুঝিয়ে দেয়নি কিংবা টাকাও ফেরত দেয়নি। পরে এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, ই-ক্যাব, ভোক্তা অধিকারে কয়েকবার অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার না পেয়ে তিনি উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন এবং হাইকোর্টে কোম্পানিটির অবসায়ন চেয়ে আবেদন করেন।

গ্রাহক ফরহাদ হোসেন ইভ্যালি নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য একটি পরিচালনা পর্ষদ গঠনেরও আবেদন জানান।

আবেদনে ইভ্যালি লিমিটেড, রেজিস্টার জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট, কনজুমার রাইটস প্রটেকশন ব্যুরো, নগদ, বিকাশ, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন, ই-ক্যাব অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, বেসিস, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্য সচিবকে বিবাদী করা হয়।

এ আবেদনের প্রাথমিক শুনানি করে গত ২২ সেপ্টেম্বর ইভ্যালির স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি ও হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ইভ্যালিকে কেন অবসায়ন করা হবে না, তা জানতে চান আদালত। এজন্য একটি নোটিশ ইস্যু করা হয়েছিল।

এর আগে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে পণ্য সরবরাহ করছে না, এমন অভিযোগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে আরিফ বাকের নামের এক গ্রাহক গুলশান থানায় মামলা করার পরদিন বিকেলে ইভ্যালির সিইও মো. রাসেল ও প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে গ্রেফতার করা হয়। বর্তমানে তারা কারাগারে।