তারেকের কারণে দল ত্যাগ করছেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা

নিউজ ডেস্ক

নতুনের সাথে আমরা

প্রকাশিত : ০৩:২৩ পিএম, ২১ অক্টোবর ২০২১ বৃহস্পতিবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

বিএনপিতে পদত্যাগের বাঁশি বেজেই চলেছে। গত এক বছরে ছোট-বড় বিএনপির প্রায় ২০০ নেতা পদত্যাগ করেছেন। বিএনপি`র একাধিক সূত্র বলছে, এই পদত্যাগ কেবল সূচনামাত্র। বিএনপিতে আরো পদত্যাগ আসছে

 এমনকি বিএনপি`র একাধিক শীর্ষ নেতা শঙ্কা করছেন যে, বিএনপিতে একটি গণপদত্যাগের ঘটনা ঘটতে পারে। অবশ্য ২০১৮ এর নির্বাচনের আগেও বিএনপিতে গণপদত্যাগের শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু সেই সময় বিভিন্নভাবে সেটিকে সামাল দেওয়া হয়েছিল। সে সময় ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, প্রয়াত ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারসহ একাধিক নেতা পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন। তবে তখনকার প্রেক্ষাপট আর এখনকার প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন বলে মনে করছেন বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতা। তারা মনে করছেন যে ওই সময় গণপদত্যাগের ঘটনা ছিল একটি আবেগতাড়িত ঘটনা। নির্বাচনের বিপর্যয়ের প্রেক্ষিতে তারা হতাশ হয়ে এরকম একটি সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছিলেন। এবারের গণপদত্যাগের ঘটনা একটি নীতিগত অবস্থান থেকে। গত কিছুদিন ধরেই বিএনপি`র নিয়ন্ত্রণ তারেক রহমানের হাতে। খালেদা জিয়ার জামিনে মুক্তি পেলেও কোনো রাজনৈতিক বিষয়গুলো দেখেন না বা তার রাজনৈতিক কর্তৃত্ব দলে নেই বললেই চলে। দলের পুরো নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন তারেক জিয়া।

কিন্তু তারেক রহমান একের পর এক আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। তার বিভিন্ন বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণে দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই সময়ে অনেকেই মনে করছেন যে বিএনপিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য, বিএনপিকে সংগঠিত করার জন্য কিছুদিনের জন্য হলেও তারেককে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া দরকার। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো দেশে বিদেশ থেকে পরিচালনা করা সম্ভব নয় বলে বিএনপি`র অধিকাংশ নেতারা মনে করছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপি`র একজন নেতা বলেছেন যে, এখন জনগণ কি চাচ্ছে বা সরকার কোন কৌশল অবলম্বন করছেন বা দেশের পরিস্থিতি কি, কোন সংকটটি নিয়ে রাজপথে যাওয়া যাবে ইত্যাদি বিষয়গুলো বিদেশ থেকে বোঝা অসম্ভব ব্যাপার। ওই নেতা এটাও বলেছেন যে, তারেকের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত পরস্পর বিরোধী এবং অনেক ক্ষেত্রে সাংঘর্ষিক। আর এ সমস্ত কারণে তার সিদ্ধান্তগুলো দলের জন্য হিতে-বিপরীত হচ্ছে। বিএনপি`র অন্য একজন নেতা অভিযোগ করেছেন যে, তারেক রহমানকে কোনো যোগাযোগের জন্য পাওয়া যায় না। ওই নেতা বলেন যে, কিছুদিন আগেই বিএনপি`র একজন নারী নেতা গ্রেপ্তার হলেন। এই সময় করণীয় জন্য তারেক রহমানকে হন্যে হয়ে খোঁজা হয়। কিন্তু তাকে কেউ পান নি।

ওই নেতা আরও বলেছেন, তারেক রহমানের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করেন। ক্ষণে ক্ষণে তিনি মোবাইল বদল করেন। শুধুমাত্র যখন তার দরকার তখন তিনি বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করেন। কিন্তু যখন দলের প্রয়োজন হয় তখন তাকে প্রায়ই টেলিফোনে পাওয়া যায় না। ওই নেতা মনে করেন যে, এইভাবে একটি দল পরিচালিত হতে পারে না। কারণ বিএনপি`র মতো একটি রাজনৈতিক দল পরিচালনা করা একটি সার্বক্ষণিক বিষয়। তিনি যদি হঠাৎ হঠাৎ করে নির্দেশনা দেন কিন্তু দল কিভাবে চলছে, দল পরিচালনার অর্থ কিভাবে জোগাড় হচ্ছে এবং নেতাকর্মীদের সমস্যা-সংকট ইত্যাদি কিভাবে হচ্ছে এসব যদি তিনি না জানেন তাহলে তিনি দলের জন্য কোনো কাজ করতে পারবেন না। আর এ কারণেই একাধিক সিনিয়র নেতা এখন অসন্তুষ্ট হয়েছেন এবং এ কারণে তারা দলের কার্যক্রমের থেকে তাদের নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন। আর সবচেয়ে বড় সমস্যা বিএনপি একজন নেতা বলেছেন যে, তারেক রহমান প্রায়ই দলের সিনিয়র কর্মীদের সাথে অশালীন এবং অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। এটি দলের মধ্যে একদিকে যেমন মানসিক পীড়নের কারণ হয় অন্যদিকে তেমন নেতাকর্মীদেরকে হতাশ করে। আর এই সমস্ত কারণেই তারেকের নেতৃত্বে বিএনপি করার চেয়ে ঘরে বসে নির্ঝঞ্ঝাট জীবনযাপন করা ভালো এরকম মনোভাব ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে বিএনপিতে। আর তাই তৈরি হয়েছে একটি গণপদত্যাগের শঙ্কা।