শেরপুরের শ্রীবরদী মুক্ত দিবস আজ

নিউজ ডেস্ক

নতুনের সাথে আমরা

প্রকাশিত : ০৯:১৮ এএম, ৬ ডিসেম্বর ২০২১ সোমবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

একাত্তরের ৬ ডিসেম্বর; খন্ড খন্ড কয়েকটি যুদ্ধের পর এদিন শেরপুরের শ্রীবরদীতে পরাজিত হয় পাকহানাদার বাহিনী। মুক্ত হয় শ্রীবরদী উপজেলা। ওই যুদ্ধে পাকহানাদারদের হাতে শহীদ হন ২৫ জন মুক্তিযোদ্ধা। হত্যা করা হয় অনেক গ্রামবাসীকে।

যুদ্ধকালীন সময়ের কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা জানান, ৪ ডিসেম্বর ধানুয়া কামালপুর মিত্র বাহিনীর আক্রমনে হেরে যায় পাক হানাদার বাহিনী। পরে পাক সেনারা ছুটে আসে শ্রীবরদীর দিকে। এ সংবাদ পান ১১নং সেক্টরের কর্ণেল আবু তাহের। তার নেতৃত্বে গেরিলা সৈনিকদের নিয়ে রাস্তার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেন মুক্তিযোদ্ধারা। কর্ণেল তাহের আরো জানতে পারেন, ৫ ডিসেম্বর রাতে কামালপুর থেকে পার্শ্ববর্তী উপজেলা বকশিগঞ্জ ও শ্রীবরদী হয়ে পাকিস্তানি মেজর আইয়ুব জামালপুর যাবে। সেই সূত্র ধরে শ্রীবরদীর হতে বকশিগঞ্জ সড়কের টিকরকান্দি এলাকায় সম্মুখ যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয় মুক্তিযোদ্ধারা।

মেজর আইয়ুব সাজোয়া গাড়ী নিয়ে সেই রাস্তায় আসার পথে শুরু হয় যুদ্ধ। রাতভর চলে মুখোমুখি যুদ্ধ। বিস্ফোরিত হয় স্থলমাইন। চলে গুলি বর্ষণ। এলাকার লোকজন ভয়ে ঘরবাড়ি ফেলে ছুটে যায় নিরাপদ আশ্রয়ে। অবশেষে এ যুদ্ধে নিহত হয় মেজর আইয়ুবসহ পাক সেনারা। পাক সেনাদের পরাজিত হওয়ার খবর ছড়ে পড়ে চারিদিকে। ভোরে শতশত লোক জড়ো হয় শ্রীবরদী হতে বকশিগঞ্জ সড়কে। সবার কন্ঠে মুখরিত হয়ে ওঠে“ আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি”। এ সময় সেখান থেকে দলে দলে উচ্ছশিত মানুষ আর মুক্তিযোদ্ধারা আসে শ্রীবরদী বাজারের পুরাতন হাসপাতাল মাঠে। এখানে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ওইসব মুক্তিকামী মানুষসহ মুক্তিযোদ্ধারা।

সেই পাক হানাদার বাহিনীর পরাজিত হওয়ার বর্ণনা দেন রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের খেতাব প্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার জহুরুল হক মুন্সী (বীর প্রতীক ‘বার’)। তিনি জানান, স্বাধীনতা যুদ্ধে এদিন ছিল শ্রীবরদীর জন্যে বিজয়ের দিন। এ যুদ্ধে মেজর আইয়ুবসহ পাক সেনারা পরাজিত হওয়ার কারণে শেরপুর ও জামালপুরের পাক সেনারা আরো দুর্বল হয়ে পড়ে। সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আমিনুল ইসলাম জানান, সেই সময় কাটাখালি, ফুলকারচর, তেনাচুড়া, টিকরকান্দি, রাঙাজানসহ বিভিন্ন স্থানে খন্ড খন্ড যুদ্ধ হয়েছে। পাক সেনারা অনেক বাড়ি ঘরে হামলা করেছে। লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে। অনেক নারী হয়েছে ধর্ষণের শিকার। শহীদ হন ২৫জন মুক্তিযোদ্ধা। একাত্তরের স্মৃতি বিজরিত দিনগুলো আজও মানুষ ভুলতে পারেনি।

সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হামিদুর রহমান জানান, স্বাধীনতা যুদ্ধে পৌর শহরের থানা রোডে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেনের বাসায়, ভায়াডাঙ্গা, বালিজুরি, রাঙাজানসহ কয়েকটি স্থানে রয়েছে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের কবরস্থান ও বধ্যভূমি।

এসব কবরস্থান আর বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণের কাজ চলছে বলে জানান সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নুরল ইসলাম হিরু। তিনি বলেন, বদ্ধভূমি ও শহীদদের কবরস্থান সংরক্ষণের কাজ চলছে।