ওষুধ রফতানির পালে হাওয়া

নিউজ ডেস্ক

নতুনের সাথে আমরা

প্রকাশিত : ১২:৫০ পিএম, ২৬ জানুয়ারি ২০২২ বুধবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

গার্মেন্টস শিল্পের পর দীর্ঘদিন থেকেই দেশের ওষুধ শিল্পে এক ধরনের বিপ্লব চলছে। দেশের চাহিদার ৯৮ ভাগ মিটিয়ে বিদেশে রফতানি হচ্ছে বাংলাদেশের প্রায় ৬০টি প্রতিষ্ঠানের তৈরি ওষুধ। আমেরিকা, ইউরোপসহ বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে বাংলাদেশের ওষুধের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। করোনা মহামারিতে যা আরো বেড়েছে। করোনায় বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়েই বেড়েছে ওষুধের চাহিদা। বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা থাকলেও ওষুধ শিল্পের সুনাম রয়েছে বিশ্বজুড়ে। আর তাই দেশে তৈরি ওষুধের রফতানি বেড়েই চলছে। করোনা মহামারির এই সময়ে অতি জরুরি এই পণ্যের রফতানির পালে হাওয়া লেগেছে আরো একবার। রফতানি বেড়েছে বিশেষ করে করোনা প্রতিরোধী ওষুধের। করোনা রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধ রেমডেসিভির এবং ফ্যাভিপিরাভির চালান বেড়েছে বেশি।

দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও বেড়েছে ওষুধ রফতানি। এ সুযোগ কাজে লাগিয়েছে বাংলাদেশি রফতানিকারকরাও। বর্তমানে বেক্সিমকো, এসকেএফ, ইনসেপ্টা, বিকন, স্কয়ার, পপুলার, অপসোনিন, এসিআই, রেনাটা এবং জিসকা ফার্মাসিউটিক্যালসের মতো প্রায় ২০টি কোম্পানি বিশ্বব্যাপী করোনার ওষুধ রফতানি করে। যদিও শুধু করোনা প্রতিরোধী ওষুধই নয়; মান উন্নয়ন ও নীতি সহায়তার কারণে সব ধরনের ওষুধেরই রফতানি বেড়েছে। এর মধ্যে উচ্চমূল্যের ওষুধও রয়েছে। ওষুধ শিল্প থেকে মোট রফতানি আয়ের প্রায় ২০ শতাংশই অনকোলজি বা ক্যান্সারের ওষুধ।

ওষুধ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের ওষুধ আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখছে। পাশাপাশি এ দেশের ওষুধের দামও তুলনামূলক কম হওয়ায় অনেক দেশই তা নিতে আগ্রহী হয়ে ওঠছে। ফলে প্রতি বছরই বাড়ছে রফতানির পরিমাণ ও দেশের সংখ্যা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের অনেক কোম্পানিই এখন আন্তর্জাতিক মানের ওষুধ তৈরি করছে। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর সার্টিফিকেশন সনদও পেয়েছে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান। এ কারণে ওই সব দেশসহ অন্যান্য দেশে ওষুধ রফতানি পর্যায়ক্রমে বাড়ছে। করোনায় যা আরো বেড়েছে। তাদের মতে, বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) জন্য ২০৩৩ সাল পর্যন্ত ওষুধের মেধাস্বত্বে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ছাড়ের সুযোগ রয়েছে। এটাকে কাজে লাগাতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকেও ওষুধশিল্প বিকাশে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। তারা জানান, বর্তমান উৎপাদন ক্ষমতা আর বিশ্ববাজারের সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে ওষুধ রফতানিতে এশিয়ার শীর্ষে উঠে আসবে বাংলাদেশ। বর্তমানে ভারত শীর্ষে রয়েছে। যদিও সংশ্লিষ্টরা অনেক ওষুধের কাঁচামাল ও মালবাহী পণ্যের ব্যয় অতিরিক্ত ভাড়াকে বর্তমানে এ খাতের বড় চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করেছেন।

ইপিবি’র তথ্য বলছে অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এ খাতে রফতানি ১০০ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এই আয় গেল বছরের একই সময়ের তুলনায় ২২ দশমিক ২১ শতাংশ বেশি। এছাড়া, আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে রফতানি আয় বেড়েছে প্রায় ২ কোটি ডলার। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো বলছে, অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ১০ কোটি ৫৫ লাখ ডলারের ওষুধ রফতানি হয়েছে। যা গেল অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৮ কোটি ৬৩ লাখ ডলার।
সূত্র মতে, করোনা মহামারিতে অন্য সব খাত যখন বিপর্যস্ত, ঠিক তখনই চাঙ্গাভাব ধরে রেখেছে দেশের সম্ভাবনাময় ওষুধশিল্প। কাঁচামাল আমদানিতে কিছুটা প্রভাব পড়লেও অভ্যন্তরীণ ও বিশ্ববাজারে বেড়েছে ওষুধের চাহিদা। বিশেষ করে করোনাসংক্রান্ত ওষুধের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির তথ্য মতে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ২৬৯টিরও বেশি ছোট-বড় ওষুধ কারখানা রয়েছে।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ থেকে মূলত ম্যালেরিয়া, যক্ষ্মা, ক্যান্সার, কুষ্ঠ, অ্যান্টি-হেপাটিক, পেনিসিলিন, স্ট্রেপটোমাইসিন, কিডনি ডায়ালাইসিস, হোমিওপ্যাথিক, বায়োকেমিক্যাল, আয়ুর্বেদিক ও হাইড্রোসিলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ওষুধ রফতানি করে থাকে। গত অর্থবছরে এ তালিকায় করোনাভাইরাস প্রতিরোধক ওষুধ যুক্ত হয়। ফলে এ শিল্পে রফতানি আয়ের পরিমাণ আরো বেড়েছে।

খাত-সংশ্লিষ্টদের তথ্য অনুযায়ী, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ থেকে রেমডেসিভির ও ফ্যাভিপিরাভিরের জেনেরিক সংস্করণটি আমদানি করছে। ভারতে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর গত এপ্রিলে দেশটি রেমডেসিভির ও এর উপকরণ রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। এর ফলে ওষুধ রফতানিতে বাংলাদেশের আরো সুযোগ বেড়েছে।

ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব এসএম সফিউজ্জামান বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের রফতানির ওষুধ পরিমাণ দিন দিন বেড়েই চলেছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে কয়েকটি কোম্পানির সঙ্গে ওষুধ তৈরি করছে। ভবিষ্যতে ওষুধশিল্প রফতানির শীর্ষে থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

ওষুধ প্রশাসন সূত্র জানায়, স্বাধীনতা অর্জনের পর বাংলাদেশে ওষুধ প্রাপ্তি আমদানির ওপর নির্ভরশীল ছিল। মানুষ তখন অনেক উচ্চ মূল্যে ওষুধ ক্রয় করতেন। বর্তমানে দেশের চাহিদার প্রায় ৯৮ শতাংশ স্থানীয় উৎপাদনের মাধ্যমে মিটাতে সক্ষম। যদিও এখনো কিছু অসাধু কোম্পানি দেশের মধ্যে ভেজাল ওষুধ বিপণন করছে।