বাংলাদেশবিরোধী আন্তর্জাতিক লবিস্ট চক্রঃ কে এই শহিদুল আলম?

নিউজ ডেস্ক

নতুনের সাথে আমরা

প্রকাশিত : ১০:৫৮ এএম, ২৯ জানুয়ারি ২০২২ শনিবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশবিরোধী ভূমিকা রাখতে আমেরিকান সরকারকে সক্রিয় করার বিএনপির ষড়যন্ত্র ইতোমধ্য ফাঁস হয়ে গেছে। প্রথমে অস্বীকার করলেও পরবর্তীতে নথিপত্র প্রকাশ হওয়ায় তা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে লবিস্ট নিয়োগ করে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের ঘটনা এটাই প্রথম নয়। ২০১৩ সালেও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে নেতিবাচক মন্তব্য করে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করে এই চক্রটি। এমনকি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে শাহবাগে আন্দোলনরত তরুণপ্রজন্মকে ‘নাস্তিক’ উপাধি দেওয়ার মাধ্যমে উগ্রবাদীদের উস্কে দেয়। ফটোসাংবাদিকের ছদ্মবেশে এসবের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড ব্যক্তিটির নাম হলো শহিদুল আলম।

নির্মাতা ও ফটোসাংবাদিক পরিচায়ের আড়ালে খালেদা জিয়ার এই সাবেক ফটোগ্রাফারের আরেকটি পরিচয় হলো- কুখ্যাত রাজাকার সবুর খানের ভাগ্নে তিনি। একারণেই জামায়াত-বিএনপির অন্যতম লবিস্ট ডেভিড বার্গম্যানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে তার। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে এই জুটি নিয়মিত আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে বাংলাদেশ সম্পর্কে ভুল বার্তা দিতে থাকে। এমনকি সেসময় সেনাবাহিনীকে নিয়ে জার্মান রেডিও ডয়চেভেলেতে নেতিবাচক মন্তব্য করে জনগণ ও এই বাহিনীকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর অপচেষ্টাও করেন। শহিদুলের উদ্দেশ্য ছিল, দেশের ভেতরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে ব্যহত করা। এছাড়াও শাহবাগে আন্দোলনরত লাখ লাখ তরুণকে ‘নাস্তিক’ আখ্যা দিয়ে তাদেরকে উগ্রবাদীদের টার্গেটে পরিণত করার মাস্টারমাইন্ডও তিনি। মূলত উগ্রবাদীদের উস্কে দিয়ে দেশে দীর্ঘমেয়াদে সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টির জন্য ফরহাদ মজহার ও মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে কাজ করেছেন এই শহিদুল আলম।

এমনকি সেসময় (২০১৩) মতিঝিলে হেফাজতের তাণ্ডবের ঘটনা অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতেও আন্তর্জাতিক লবিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন শহিদুল আলম। এছাড়াও নিজের সংগঠন ‘অধিকার’ এর মাধ্যমে দেশের সাধারণ জনগণের কাছে আলেম হত্যার গুজবকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। তবে জনগণের সচেতনতা ও সরকারের সতর্কতার কারণে খুব একটা একটা সুবিধা করতে পারেনি এই চক্র। কিন্তু নিয়মিত বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণায় লেগে আছে তারা। সেই ধারাবাহিকতায়, শহিদুল আলম ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিষয়ে উস্কানিমূলক ও মিথ্যা সাক্ষাৎকার দেন কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরায়। এমনকি পশ্চিমাবিশ্বের কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির কাছেও বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে ভূমিকা নিতে ইমেইল পাঠান তিনি। এসব ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর, আদালতে প্রকাশ্যে নিজের বক্তব্যের ভুল স্বীকারও করেন শহিদুল।

তবে এরমধ্যেই ঘটে যায় আরো একটি চমকপ্রদ ঘটনা। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে মিথ্যা ইন্টারভিউ দেওয়ার দায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শহিদুলকে আটক করার পর, তার মুক্তি দাবি করে পোস্টার প্রকাশ করে জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীর। ফলে নড়েচড়ে বসে দেশের সচেতন সমাজ।

এর আগেও শহিদুলের দেশবিরোধী ও উগ্রবাদী সংযোগ প্রকাশ্যে এসেছিল একাধিকবার। ২০১৩ সালের ৭ অক্টোবর চট্টগ্রামের লালখান বাজারের এক মাদ্রাসায় বোমা ও গ্রেনেড বানানোর সময় বিস্ফোরিত হয়ে মারা যায় তিন ছাত্র। মাদ্রাসাটির পরিচালক আফগানিস্তান-ফেরত জঙ্গি হারুন ইজহারের বাবা, এবং এই মাদ্রাসাটিতেই জঙ্গি সংগঠন হরকতুল জিহাদের জন্ম। পরবর্তীতে পুলিশের অভিযানে মাদ্রাসা ও হারুন ইজহারের বাসা থেকে প্রচুর তাজা গ্রেনেড-বোমা ও বিস্ফোরকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়। সেসময় জঙ্গিদের প্রশিক্ষক হারুন ইজহারের পক্ষেও ক্যাম্পেইনে নেমেছিলেন এই শহিদুল।

শুধু তাই নয়, রাজধানীর দৃক গ্যালারিতে ছবি প্রদর্শনের নামে নিয়মিত পশ্চিমাদের এজেন্ডা ও জনসংযোগ বাস্তবায়ন করেন তিনি। বাংলাদেশ-চীন সুসম্পর্ক নষ্ট করা এবং পশ্চিমাদের খুশি করার জন্য সেখানে ‘তিব্বত’ নিয়ে বিতর্কিত ছবি ডিসপ্লে করেন এই এজেন্ট।

ফটোগ্রাফি, ভিডিওগ্রাফি, চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রশিক্ষণের নামে ‘পাঠশালা’ নামে শহিদুলের একটি প্রতিষ্ঠান থাকলেও; এর কোনো অনুমোদন নেই। কিন্তু ঠিকই সার্টিফিকেট বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

বিভিন্ন সময় বিতর্কিত ভূমিকার কারণে শহিদুল আলমের রহস্যজনক যোগাযোগগুলোকে পর্যবেক্ষণ করে বাংলাদেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। সেই সব গোয়েন্দা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রাজাকার সবুর খানের ভাগ্নে শহিদুল আলম মূলত পাকিস্তানের আইএসআই-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত। যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য জামায়াতের টাকায় আর্ন্তজাতিক গণমাধ্যমে বিতর্কিত সংবাদ প্রকাশের সঙ্গেও যুক্ত তিনি। নিজের ফটোসাংবাদিক পরিচয় ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন শহিদুল। পরবর্তীতে সেই পরিচয়গুলোকে ব্যবহার করেন বাংলাদেশবিরোধী লবিংয়ের ক্ষেত্রে।