বক্তৃতা দিচ্ছেন, ঘুরে বেড়াচ্ছেন, ক্যামেরাটাই যেন বঙ্গবন্ধু

বিনোদন ডেস্ক

নতুনের সাথে আমরা

প্রকাশিত : ০৯:২৭ এএম, ১৪ মে ২০২২ শনিবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

ক্যামেরাটাই যেন বঙ্গবন্ধু, ঘুরে বেড়াচ্ছেন, বক্তৃতা দিচ্ছেন। এমন একটা ঘোর লাগা দৃশ্যই মনের ভেতর ঘুরছিল জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র নির্মাতা গৌতম ঘোষের।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কলকাতা পর্বের ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরতে একটি তথ্যচিত্রের নির্মাণ পর্বের এই গল্পটা শুনিয়েছেন তিনি।

চল্লিশের দশকে উপমহাদেশে রাজনীতির উত্তাল সময়ে কলকাতায় ছয় বছর ছিলেন বঙ্গবন্ধু। তৎকালীন ইসলামিয়া কলেজের তরুণ ছাত্রনেতা শেখ মুজিব সেই সময়ের ঘটনাপ্রবাহে জড়িত ছিলেন নিবিড়ভাবে।

১৯৭২ সালে নিজের ‘প্রিয় শহর’ কলকাতায় যখন শেষবারের মতো যান, তখন তিনি পরিণত রাষ্ট্রনায়ক, বঙ্গবন্ধু থেকে হয়ে উঠেছেন জাতির জনক।

‘কলকাতায় বঙ্গবন্ধু’ নামে তথ্যচিত্রটিতে ইতিহাসের পাতা থেকে ঠাঁই পাবে সেসব ঘটনা। বাংলাদেশে এর কিছু অংশের চিত্রায়ণের জন্য এসে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ‘ব্যক্তিগত আবেগের’ কথা শোনালেন ভারতীয় এই নির্মাতা।

“আমার যখন তরুণ বয়স, তখন ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে বঙ্গবন্ধু যখন আসেন, তখন আমার ২২ বছর বয়স। তখন আমরা হাজার-হাজার ছাত্র-যুবক গিয়ে ভিড় করেছিলাম, বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতা শোনার জন্য।

“একটি অসাধারণ এক ভাষণ দিয়েছিলেন। তার মধ্যে কলকাতার আবেগও মিশ্রিত ছিল। তার কারণ, তিনি বহুদিন পরে কলকাতায় ফিরে গেলেন।”

স্বাধীন দেশ গঠনের পর কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে ১৯৭২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ঐতিহাসিক সমাবেশে ভাষণ দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

গতকাল শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ওই তথ্যচিত্রটি নির্মাণের বিভিন্ন দিক তুলে ধরার সময় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দেন গৌতম ঘোষ।

“তার প্রিয় শহর কলকাতা। যেখানে তিনি ফিরে গিয়েছিলেন আবার, এখনো আমার কানে বাজে সেই বক্তৃতা।”  

তরুণ বঙ্গবন্ধুর ছয় বছরের কলকাতাবাস                                                         

সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানান, প্রায় ৩০ মিনিটের এই তথ্যচিত্রটি কলকাতা এবং বাংলাদেশে শুটিং শেষে আগামী জুনের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করার লক্ষ্য রয়েছে।

গত ৪ এপ্রিল বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত কলকাতার মৌলানা আজাদ কলেজ (যেটি পূর্বে ইসলামিয়া কলেজ নামে পরিচিত ছিল) সেখানে এই তথ্যচিত্র নির্মাণের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ আগামী এক সপ্তাহ ঢাকা এবং টুঙ্গিপাড়ার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে এই তথ্যচিত্র নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় শুটিংয়ের কাজ সম্পাদন করবেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ, ভারত চ্যাপ্টারের যৌথ উদ্যোগে এই তথ্যচিত্রের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি সাক্ষাৎকারও নেবেন গৌতম ঘোষ।

মৌলানা আজাদ কলেজে শ্যুটিংয়ের কথা স্মরণ করে গৌতম ঘোষ বলেন, “যেটা বলা হল ইসলামিয়া কলেজে উনি পড়তেন। তার নাম বদলে মৌলানা আজাদ কলেজ হয়েছে।

“আমরা যখন শুটিং করলাম। শুটিং করতে করতে আমার ক্যামেরা যখন চলছিল, আমার মনে হয় যেন ওই ক্যামেরাটা যেন বঙ্গবন্ধুই, যেন ঘুরে বেড়াচ্ছেন করিডোরের মধ্যে। সেই হলে বক্তৃতা দিচ্ছেন।”

বিভিন্ন জনের সাক্ষাৎকার, স্মৃতিবিজড়িত বিভিন্ন স্থান এবং বক্তৃতাকে তুলে ধরার পাশাপাশি তথ্যচিত্রটিতে ‘সিনেম্যাটিক ইমপ্রেশান’ তৈরি করা হবে বলে জানান তিনি।

“এটাতো তথ্যচিত্র। আমরা তো আর অভিনয় করে দেখাব না… আমাদের আনতে হবে ইমপ্রেশান। পর্দার ওপরে নদী বা ওনার গলা; বঙ্গবন্ধুর যে লেখা তার থেকে ধারাভাষ্য। এইভাবে তৈরি করতে হবে ছবিটা।

“যে সময়টায় বঙ্গবন্ধু নিজেকে তৈরি করেছেন। একটা বিরাট স্বপ্ন দেখেছেন এবং সেই স্বপ্নের বাকিটা এখন ইতিহাস। কিন্তু ওই পর্বটা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা পর্ব। সেটাকে আমি ধরার চেষ্টা করছি।”

বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনে কলকাতার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্লেখ করে পরিচালক গৌতম ঘোষ বলেন, “অনেক লেখালেখি হয়েছে, অডিওভিজ্যুয়াল কাজ কম হয়েছে এই বিষয়ের উপর।”

জাতির পিতার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিভিন্ন লেখার উপর ভিত্তি করে তথ্যচিত্রের স্ক্রিপ্ট তৈরি করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

বিভিন্ন পত্রপত্রিকা, বইপত্র এবং ভারত-বাংলাদেশের বিভিন্ন আর্কাইভ থেকেও তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

তথ্যচিত্রের স্ক্রিপ্ট তৈরিতে ভূমিকা রেখেছেন ভারতের দীপঙ্কর চক্রবর্তী ও তাপশ্রী গুপ্ত এবং বাংলাদেশের সোহেল আহমেদ সিদ্দিকী।

তথ্যচিত্রের জন্য কলকাতার ৯৮ বছর বয়সী বাসিন্দা নীহার চক্রবর্তীর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয় জানিয়ে গৌতম ঘোষ বলেন, “তিনি ওই সময়ে বঙ্গবন্ধুর কিছু স্মৃতি আমাকে ক্যামেরায় বলেছেন।

“কি অপরিসীম সাহস ছিল! কোনো একটা ঘটনা ঘটলে পুলিশ অত্যাচার করলে তিনি রুখে দাঁড়াতেন এবং সবাইকে আটকাতেন। এইগুলো উনার চোখে দেখা, নীহার বাবুর।

“ওই সময়ে ওনার বেকার হোস্টেলে যাতায়াত ছিল। আমরা ভাগ্যবান, কোনো একটি মানুষ এখনো জীবিত রয়েছেন এবং তার খুবই পরিষ্কার মাথা।”

কলকাতার ৪০ নম্বর থিয়েটার রোডে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর তৎকালীন বাড়িটি এখন না থাকায় মনোকষ্টের কথা জানিয়ে গৌতম ঘোষ বলেন, “যখন শুটিং করতে যাই, তখন বাড়িটা নাই।

“শপিংমল ইত্যাদি উঠে গেছে। ২০ বছর আগেও সেই বাড়ি দেখেছি বলে মনে হয়। ওই বাড়িতে বঙ্গবন্ধু নিয়মিত যেতেন বিভিন্ন পরামর্শের জন্য।”

পরিচালক গৌতম ঘোষ বলেন, “আসলে ওনার জীবনের ব্যপ্তি এতটাই বড়, তার একটা অংশ যদি আমরা ফোটাতে পারি, তাহলে কিন্তু বঙ্গবন্ধুর কতগুলো ঘটনা যেটা কলকাতায় ঘটেছিল বা ওই সময়ে ঘটেছিল, মানুষ অনুধাবন করতে পারবে এই মানুষটি ভবিষ্যতে কী করবে?”

সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, “কলকাতার সময়, এটা তার গড়ে উঠার অন্যতম পর্ব। সেখানে তার রাজনীতির হাতেখড়ি। সেই সময়টাকে পরিচালক গৌতম ঘোষ তুলে ধরবেন।”