পদ্মা সেতু ও বাংলাদেশের উন্নয়নে মুগ্ধ ভারতীয় সাংবাদিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

নতুনের সাথে আমরা

প্রকাশিত : ১০:২৬ এএম, ১৮ জুন ২০২২ শনিবার

সংগৃহীত

সংগৃহীত

আর মাত্র কয়েকদিন। পূরণ হতে চলেছে বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের স্বপ্ন। উদ্বোধন হচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। শত প্রতিকূলতা পেরিয়ে এ প্রকল্পকে বাস্তবে রূপ দেওয়ায় বিশ্বজুড়ে প্রশংসার জোয়ারে ভাসছে বাংলাদেশ। উদ্বোধন সামনে রেখে গত সপ্তাহে একদল সাংবাদিককে পদ্মা সেতু পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার। এই দলে বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতের কয়েকজন সাংবাদিকও ছিলেন, যাদের মধ্যে অন্যতম দ্য প্রিন্টের সিনিয়র কনসাল্টিং এডিটর জ্যোতি মালহোত্রা। পদ্মা সেতু ও বাংলাদেশের উন্নয়ন সচক্ষে দেখে নিজের মুগ্ধতার কথা জানিয়েছেন তিনি।

গত বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) দ্য প্রিন্টে প্রকাশিত মতামতে ভারতীয় এ সাংবাদিক লিখেছেন, পদ্মা সেতু বাংলাদেশের স্থির সংকল্পের পরিচায়ক এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দর্শনের ভার বহন করছে এটি।

জ্যোতি মালহোত্রা লিখেছেন, পদ্মা সেতুতে বিনিয়োগ করা থেকে বিশ্বব্যাংক ২০১২ সালে সরে যাওয়ার প্রায় এক দশক পরে আগামী ২৫ জুন অবকাঠামোটি উদ্বোধন করতে চলেছেন শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া, নোবেল বিজয়ী মোহাম্মদ ইউনূসের মতো আরও অনেককে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। গুরুত্বপূর্ণ এসব ব্যক্তি উপস্থিত থাকবেন কি না তা স্পষ্ট নয়. তবে শেখ হাসিনা স্পষ্টতই অন্য কিছুর দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। আন্তর্জাতিক চাপ ও অভ্যন্তরীণ সমালোচনার মুখে তিনি এমন এক অবকাঠামো তৈরি করতে সফল হয়েছেন, যা বাংলাদেশের মানুষের জীবন বদলে দেবে।

এই সংকল্পের ভিত্তি ২০২৩ সালের নির্বাচনে মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। শুধু এই ‘গর্বের সেতু’ নয়, কিংবা ভারত, চীন, রাশিয়া, জাপানসহ বিভিন্ন দেশের সহায়তায় গৃহীত উন্নয়ন কর্মসূচির আধিক্যও নয়, বাংলাদেশকে নতুন করে সাজানোর যে দৃঢ় ইচ্ছা দেখিয়েছেন শেখ হাসিনা, সেটিই তাকে পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হতে সাহায্য করতে পারে।

জ্যোতি মালহোত্রা জানিয়েছেন, ভারতীয় সাংবাদিকদের একটি দল গত সপ্তাহে পদ্মা সেতু প্রকল্প পরিদর্শন করেছে। এটিকে ‘প্রকৌশলের অবিশ্বাস্য বিস্ময়’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন ওই দলে থাকা দ্য প্রিন্টের এই সাংবাদিক। তার কথায়, এটি শুধু পদ্মার ওপর নয়, গোটা গঙ্গা অববাহিকায় তৈরি দীর্ঘতম সেতু।

সবচেয়ে বড় কথা, পদ্মা সেতু কেবল বাংলাদেশ সরকারেরই নয়, জনগণেরও সাহস বাড়িয়েছে যে- আমরা করতে পারি। নিশ্চিতভাবে এটি সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলা অপমানজনক বর্ণনাকে কবর দিয়েছে।

মতামতে ভারত-পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের জিডিপি ও মাথাপিছু আয়ের অবিশ্বাস্য পার্থক্যের কথা উল্লেখ করে ভারতীয় এ সাংবাদিক লিখেছেন, পরিবর্তন স্পষ্টতই দৃশ্যমান। গত সপ্তাহে ঢাকা ও বাংলাদেশের কিছু অংশ ভ্রমণ করে এটি স্পষ্ট যে, কিসিঞ্জার একসময় যেভাবে (বাংলাদেশের) বর্ণনা করেছিলেন, তেমন ভয়াবহ দারিদ্র্যের অস্তিত্ব আর নেই। এটি শুধু রাজধানীর গুলশানের মতো চকচকে অংশের জন্য নয়, যেখানে হুয়াওয়ে, ফারজি ক্যাফে ও ম্যারিয়ট হোটেলের মতো আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলো দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য প্রতিযোগিতা করে। কারওয়ান বাজার-যাত্রাবাড়ীর মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোতেও বিষণ্ণ মানুষের সংখ্যা দ্বিগুণ হতে দেখা যায় না।

এসময় প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শিতার ভূয়সী প্রশংসা করে জ্যোতি মালহোত্রা বলেন, রাজনৈতিকভাবে বিচক্ষণ শেখ হাসিনা খুব ভালোভাবেই জানেন, উচ্চাকাঙ্ক্ষী বাংলাদেশিরা যে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি চায়, তা এনজিও দিতে পারবে না। তাই গত ১৪ বছরে তার দেশে সবধরনের সাহায্যের পাশাপাশি বিনিয়োগের দরজা খুলে দিয়েছেন। তিনি শ্রীলঙ্কাকে দেখে শিক্ষা নিয়েছেন এবং বিভিন্ন দেশের সঙ্গে চুক্তিতে বৈচিত্র্য এনেছেন।

যেমন- পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছে একটি চীনা কোম্পানি; রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করছে রুশরা; রামপালে মৈত্রী তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পে ভারতের এনটিপিসির সঙ্গে ৫০:৫০ চুক্তি রয়েছে; ঢাকা মেট্রো নির্মাণে উল্লেখযোগ্য সহায়তা দিচ্ছে জাপান; এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সংযোগের জন্য একটি চীনা কোম্পানি চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ করছে; ঢাকার সংস্কারকৃত বিমানবন্দর জাপানিদের অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছে; আংশিকভাবে পায়রা সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করবে একটি চীনা কোম্পানি; পায়রায় ৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ চ্যানেল ড্রেজিং করছে বেলজিয়ামের একটি কোম্পানি।