পদ্মাসেতু; উন্নত অর্থনীতির হাতছানি

নিউজ ডেস্ক

নতুনের সাথে আমরা

প্রকাশিত : ০৮:১৮ পিএম, ৫ জুলাই ২০২২ মঙ্গলবার

স্বপ্নের বীজটি বোনা হয়েছিল অন্তত ২৫ বছর আগে, সেই স্বপ্ন এখন বাস্তব। স্বপ্নের নাম পদ্মা সেতু। খরস্রোতা পদ্মায় দুই পাড়কে বেঁধেছে এক সেতু। এই এক পদ্মা সেতুতেই দেশের দক্ষিণাঞ্চলে মানুষের ভাগ্য বদলে যাবে। দেশের সবচেয়ে বড় এই অবকাঠামোটি শুধু দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের আশীর্বাদ নয়, দেশের উত্তর, পূর্ব, দক্ষিণ ও পশ্চিম সব দিকে এর প্রভাব ছড়িয়ে যাবে। যেমন; অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাবে, বাংলাদেশ এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত হবে। বিদেশি বিনিয়োগ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, বিতরণ ও বিপণনে সাশ্রয় হবে, পণ্য আমদানি সহজ হবে, মোংলা ও পায়রা বন্দরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হবে, অর্থনীতিকে নতুন মাত্রা দেবে। এছাড়াও পর্যটন খাতেও ব্যাপক উন্নয়ন হবে। কর্মসংস্থান বেড়ে এলাকার বেকারত্ব দূর হবে। যার ফলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়ে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হবে। তথা উন্নয়নশীল দেশগুলোর সঙ্গে টেক্কা দেওয়ার ক্ষমতা রাখবে বাংলাদেশ। যা নিঃসন্দেহে একটি দেশের অর্থনীতির জন্য সুখবার্তাই বহন করবে। জাতীয় উন্নয়নের বিশাল সম্ভাবনার দ্বার খুলেছে। পদ্মা সেতু শুধু একটি সেতু নয়; দেশটির একটি বড় সম্পদও। পোশাক আর ক্রিকেট পাশাপাশি পদ্মা সেতু এখন বাংলাদেশকে বহির্বিশ্বে ব্র্যান্ডের এক নতুন দিগন্ত সূচনা করেছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই দাবায়ে রাখতে পারবানা'র সাহস, তেজোদ্দীপ্ত ঘোষণাই আজকের পদ্মা সেতুই প্রমান করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতু যতদিন থাকবে, আমরা এই নাম হৃদয়ে নিয়েই চলবো। পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে আমাদের নতুন সফলতা গাঁথা হবে। তৈরি হলো নতুন ইতিহাস। পাথরে না লিখে, বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে লেখা থাকবে শেখ হাসিনার নাম।

উন্নয়নের মহিসোপান দিয়ে দেশকে সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা। শত ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত মোকাবেলা করে অপ্রতিদ্বন্দ্বী অপ্রতিরোধ্য শক্তি ও সমর্থন দিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ ও আধুনিক স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন (২৫ জুন) হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত দিয়েই। বাংলাদেশের সাফল্যের ইতিহাসে রচিত হবে আরেকটি বড় ইতিহাস।

বাংলাদেশ তার আত্মমর্যাদার প্রতীক হিসেবে দেখছে পদ্মা সেতুকে। বাংলাদেশের স্বাবলম্বিতা, বাংলাদেশের শক্তি এবং বাংলাদেশের সাহসের প্রকাশ পদ্মা সেতু। যা অত্যন্ত নজরকাড়া ও চিত্তাকর্ষক। দুই স্তর বিশিষ্ট স্টিল ও কংক্রিট নির্মিত ট্রাসের এই সেতুর উপরের স্তরে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরে একটি একক রেলপথ রয়েছে। পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর অববাহিকায় ৪২টি পিলার ও ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যানের মাধ্যমে মূল অবকাঠামো তৈরি করা হয়। যার উদ্বোধনটি হবে স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের অন্যতম আনন্দের উপলক্ষের মাধ্যমে। স্বাধীনতার পর একমাত্র পদ্মা সেতুর জন্যই আবারও গোটা জাতি এক হয়েছে।

উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে, দেশের উত্তরাঞ্চল মঙ্গা কবলিত এলাকায় যমুনা নদীর উপর বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের ফলে মঙ্গা নামটি মুছে গেছে। অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাড়িয়েছে উত্তরের মানুষ। ঠিক তেমনি পদ্মা নদীর উপর স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ব্যাপক আর্থ সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে, বদলে যাবে তাদের জীবনযাত্রার মান, সমৃদ্ধ হবে জনপদ। স্বপ্নের এ সেতুর মাধ্যমে উন্নয়নের জন্য গ্যাস, বিদ্যুৎ, ইন্টারনেটসহ সব ধরনের অবকাঠমো পৌঁছাবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে।

এই সেতুর মাধ্যমে ভারত, ভুটান ও নেপালের সঙ্গে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বৃদ্ধি পাবে। দেশের সকল অর্থনৈতিক অঞ্চলের সঙ্গে বাধাহীন সংযোগ ঘটবে। সেতুর দুই পাশে গড়ে তোলা হবে অর্থনৈতিক অঞ্চল, হাইটেক পার্ক ও বেসরকারি শিল্প শহর। ফলস্বরূপ, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়বে। অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। এর ফলে বেকারত্ব দূর হবে। স্থাপিত হবে নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান। পদ্মা পাড়ে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর গড়ে তোলার পরিকল্পনা চলছে। কৃষি পণ্য আনা নেয়ায় সুবিধা বাড়বে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাথে। ২১টি জেলাকে সংযুক্ত করবে। বৃহত্তর বরিশাল জেলাকে একত্রিত করবে রাজধানী ঢাকার সাথে। তাছাড়াও ঢাকার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার, কাঁচামাল সরবরাহ এবং শিল্পায়ন সহজতর করতে সহায়তা করবে।

একসময় পদ্মাপাড়ের বেশিরভাগ মানুষ মাছ শিকার কিংবা পদ্মার চরে ফসল ফলিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। খরস্রোতা পদ্মার মতিগতি বুঝে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে যে মানুষকে বাঁচতে হতো, এখন সেই মানুষকে পদ্মা নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছে। ক্ষেত-খামারের কাজ আর মৎস্য শিকার করা মানুষ উন্নত জীবনের আশায় ব্যবসা-বাণিজ্যের নতুন স্বপ্নে বুক বাঁধছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পদ্মা সেতুর তলা দিয়ে ইলিশ মাছ যাতায়াত করে। আবার দুইশ’ ডেসিমালের ওপরে শব্দ হলে ইলিশ সেদিকে আগায় না। অর্থাৎ এই শব্দে ইলিশ মাছ উল্টো দিকে চলে যায়। সেজন্য হ্যামরের পেটানোর সময় যাতে উচ্চ শব্দ না হয়, সেজন্য পাইলকে মাফলার দিয়ে মোড়ানো হয়েছে।

পদ্মা সেতু এতোদঞ্চলের মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের পথ খুলে দিয়েছে। একাধিক শিল্পপতি ও তাদের প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যেই বৃহত্তর ফরিদপুরের বিভিন্ন জায়গা কিনেছেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য। অনেকে জায়গা ভরাটের কাজ শুরু করেছেন, আবার অনেকে অবকাঠামো নির্মাণের কাজও শুরু করে দিয়েছেন। সত্যিকার অর্থে পদ্মা পাড়ের অর্থনীতি আমাদের জীবন মানের কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন নিয়ে আসবে।