আগস্টের প্রথম চারদিনে এলো প্রায় ৩৭ লাখ ডলার রেমিট্যান্স

বাণিজ্য ডেস্ক

নতুনের সাথে আমরা

প্রকাশিত : ১০:০৪ এএম, ৯ আগস্ট ২০২২ মঙ্গলবার

আগস্টের প্রথম চারদিনে এলো প্রায় ৩৭ লাখ ডলার রেমিট্যান্স

আগস্টের প্রথম চারদিনে এলো প্রায় ৩৭ লাখ ডলার রেমিট্যান্স

বিশ্বজুড়ে অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তার মধ্যেই বেড়েছে  রেমিট্যান্স প্রবাহ। জুলাই মাসের পর আগস্ট মাসেও বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ের পালে বইছে জোর হাওয়া।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র আরো জানায়, আগস্ট মাসের ৪ দিনেই ৩৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এ হিসাবে প্রতিদিন দেশে আসছে ৮৬৯ কোটি টাকা। যা গত বছরের আগস্টের একই সময়ের চেয়ে ৫৬ শতাংশ বেশি।

বর্তমান বিনিময় হার (প্রতি ডলার ৯৪ টাকা ৭০ পয়সা) হিসাবে টাকার অংকে ৪ দিনের এই রেমিট্যান্সের পরিমাণ ৩ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা।

বাজারে ডলারের ব্যাপক চাহিদা থাকায় ব্যাংকগুলো ১১০ টাকা দরেও রেমিট্যান্স সংগ্রহ করছে। সে হিসাবে টাকার অংকে এই অর্থের পরিমাণ আরো বেশি।

গত বছরের জুলাই মাসের ৪ দিনে (১ থেকে ৪ জুলাই) ২৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত (১ মাস ৪ দিনে) ২৪৬ কোটি ৪০ লাখ (২.৪৬ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬ দশমিক ৯০ শতাংশ বেশি।

গত ২০২১-২২ অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত ২১০ কোটি ৭০ লাখ (২.১০ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।

নতুন অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ২০৯ কোটি ৬৯ লাখ ১০ হাজার (২.১ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। যা ছিল গত ১৪ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। আর গত বছরের জুলাই মাসের চেয়ে বেশি ১২ শতাংশ।

প্রতি ডলার ৯৪ টাকা ৭০ পয়সা হিসাবে টাকার অংকে ঐ অর্থের পরিমাণ প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা।

করোনা মহামারির পর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ধাক্কায় ওলোটপালট হয়ে যাওয়া অর্থনীতিতে জ্বালনি তেলের রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধিতে যখন দেশজুড়ে ক্ষোভ ও হতাশার তথ্য, তখন স্বস্তির ইঙ্গিত দিচ্ছে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের প্রবাহ। চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই রেমিট্যান্সের বিস্ময়কর উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে। চলতি জুলাইয়ের প্রবণতা অব্যাহত থাকলে এই অর্থবছরে তৈরি হবে নতুন রেকর্ড। এতে অনেকটাই চাপমুক্ত হবে দেশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্য বলছে, ১ জুলাই শুরু হওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে প্রায় ২১০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এ হিসাবে প্রতিদিন ৬ কোটি ৭৬ লাখ ডলার করে পাঠিয়েছেন তারা; টাকার হিসাবে প্রতিদিন দেশে এসেছে ৬৪০ কোটি টাকা।

২০২১ সালের মে মাসে ২১৭ কোটি ১০ লাখ (২.১৭ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। এরপর চলতি বছরের এপ্রিল মাসেই কেবল ২০০ কোটি (২.০১ বিলিয়ন) ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছিল।

গত বছরের জুলাই মাসে ১৮৭ কোটি ১৫ লাখ ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।

গত ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবাসী আয়ে মন্দা দেখা দেয়। পুরো অর্থবছরে ২ হাজার ১০৩ কোটি (২১.০৩ বিলিয়ন) ডলার এসেছিল; গড়ে প্রতিদিন ৫ কোটি ৭৬ লাখ ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।

প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় উল্লম্ফন ঘটে ২০২০-২১ অর্থবছরে। সে সময় ২ হাজার ৪৭৮ কোটি (২৪.৭৮ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা। ঐ অর্থবছরে প্রতিদিন গড়ে ৬ কোটি ৭৯ ডলার প্রবাসী আয় হিসেবে দেশে এসেছিল।

এসব হিসাব থেকে দেখা যাচ্ছে, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে রেমিট্যান্সে রয়েছে ঊর্ধ্বগতি। এই প্রবণতা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে এবং এই অর্থবছরে নতুন রেকর্ড তৈরি হবে বলে মনে করছেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম।

তিনি বলেন, গত অর্থবছরে সাড়ে ৭ লাখ লোক কাজের সন্ধানে বিভিন্ন দেশে গেছেন। তারা এরইমধ্যে রেমিট্যান্স পাঠাতে শুরু করেছেন। সে কারণেই ঈদের পরও রেমিট্যান্স বাড়ছে। এই ইতিবাচক ধারা পুরো অর্থবছর জুড়েই অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছি।

সাধারণত দুই ঈদের আগে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাড়ে; ঈদের পর কমে যায়। তবে এবার কোরবানির ঈদের আগে যে গতিতে রেমিট্যান্স এসেছে, সেই ধারা ঈদের পরেও অব্যাহত আছে।

দেশে গত ১০ জুলাই কোরবানির ঈদ উদযাপিত হয়। ঈদের আগে রেমিট্যান্স প্রবাহে ঢল নামে। ঈদের ৯০ কোটি ৯৩ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। ঈদের পরে ২১ দিনে এসেছে ১১৮ কোটি ৭৬ লাখ ডলারের কিছু বেশি।

ঈদের পরেও কেন রেমিট্যান্স বাড়ছে- এমন প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক মাসে ডলারের দর বেশ খানিকটা বেড়েছে। প্রণোদনার পরিমাণ দুই শতাংশ থেকে আড়াই শতাংশ করা হয়েছে। এসব কারণে প্রবাসীরা এখন ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। সে কারণেই বাড়ছে রেমিট্যান্স।

তিনি বলেন, এই সময়ে রেমিট্যান্স বৃদ্ধির খুবই দরকার ছিল। নানা পদক্ষেপের কারণে আমদানি ব্যয় কমতে শুরু করেছে। রফতানির পাশাপাশি রেমিট্যান্স বৃদ্ধির কারণে আশা করছি এখন মুদ্রাবাজার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।

আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে রোববার প্রতি ডলার ৯৪ টাকা ৭০ পয়সায় বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে ব্যাংকগুলো এই দরে ডলার কিনেছে। তবে ডলারের ব্যাপক চাহিদা থাকায় ব্যাংকগুলো ১০৪/১০৫ টাকা দরে প্রবাসীদের কাছ থেকে ডলার সংগ্রহ করেছে। কোনো কোনো ব্যাংক ১১০ টাকা দরেও রেমিট্যান্স সংগ্রহ করছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকাররা।

সে হিসাবে কোনো প্রবাসী এখন ব্যাংকিং চ্যানেলে ১ ডলার দেশে পাঠালে ১১০ টাকার সঙ্গে নগদ প্রণোদনার ২ টাকা ৫০ পয়সা যুক্ত হয়ে ১১২ টাকা ৫০ পয়সা পাচ্ছেন।

কার্ব মার্কেট বা খোলাবাজারে রোববার ১০৭ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১০৮ টাকায় ডলার বিক্রি হয়েছে। সে কারণেই প্রবাসীরা এখন অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে ঝুঁকি নিয়ে দেশে টাকা না পাঠিয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠাচ্ছেন বলেও জানান ব্যাংকাররা।

রেমিট্যান্স বাড়ার আরেকটি কারণের কথা বলেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম।

তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অর্থনীতি চাঙা হয়েছে। সেখানে কর্মরত আমাদের প্রবাসীরা বেশি আয় করছেন। দেশেও বেশি টাকা পাঠাতে পারছেন।

‘দেশে ডলারের সংকট চলছে। মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা চলছে। রিজার্ভ কমছে। এই মুহূর্তে রেমিট্যান্স বাড়া অর্থনীতির জন্য খুবই ভালো হবে।’

অর্থ মন্ত্রণালয়ও তেমন পূর্বাভাস দিয়েছে। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত অর্থবছরজুড়ে (২০২১-২২) ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধিতে থাকা প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সে নতুন অর্থবছরে ১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে।

এই অর্থবছরে রেমিট্যান্স বাড়ার কারণ হিসেবে মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা-পরবর্তী সময়ে দেশ থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ শ্রমিক নতুন করে বিদেশে যাওয়ায় তাদের কাছ থেকে বাড়তি পরিমাণ রেমিট্যান্স পাওয়া যাবে।

দেশের অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর হালচাল নিয়ে তৈরি করা পাক্ষিক প্রতিবেদনেও রেমিট্যান্স নিয়ে সুসংবাদের আভাস দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

গত ২১ জুলাই প্রকাশিত ঐ প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় বাড়াতে সরকার এরই মধ্যে রেমিট্যান্সে নগদ প্রণোদনা ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২ দশমিক ৫০ শতাংশ করেছে। করোনা মহামারি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় সব প্রবাসী তাদের কর্মস্থলে ফিরেছেন। টাকার বিপরীতে ডলার বেশ খানিকটা শক্তিশালী হয়েছে।

‘এই বিষয়গুলো আগামী মাসগুলোতে রেমিট্যান্স বাড়াতে সাহায্য করবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংক গত ৩০ জুন ২০২২-২৩ অর্থবছরের নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে। এতে বলা হয়, রেমিট্যান্স ঊর্ধ্বমুখী হবে এবং চলতি অর্থবছরে গত বছরের চেয়ে ১৫ শতাংশ রেমিট্যান্স বেশি আসবে।