দেখে আসুন দরিয়ানগর শাহেনশাহ গুহা

এইচ এম ফরিদুল আলম শাহীন

নতুনের সাথে আমরা

প্রকাশিত : ১২:১৯ পিএম, ২৯ অক্টোবর ২০২২ শনিবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজার শহরতলীর খুব নিকটেই দরিয়ানগর। সেখানেই দেখতে পাবেন শাহেনশাহ গুহা। গুহার  পশ্চিমে বিশাল সমুদ্র সৈকত  ও  বঙ্গোপসাগর,। পূর্বে উঁচু পাহাড়। মাঝখান দিয়ে চলে গেছে ‘কক্সবাজার-টেকনাফ’ মেরিন ড্রাইভ সড়ক। এই পথ ধরে কক্সবাজার শহর থেকে আট কিলোমিটার এগিয়ে গেলে নজরে পড়ে সবুজ শ্যামলে ভরা একটি গ্রাম বড়ছড়া। এই বড়ছড়ার উঁচুনিচু ৩৭ একরের বিশাল পাহাড় নিয়ে গড়ে উঠেছে পর্যটনের বিনোদন কেন্দ্র ‘দরিয়ানগর’।

ঘুরে আসতে পারেন দরিয়ানগর। রোমাঞ্চের স্বাদ পাবেন এখানেই। প্রকৃতি নিজের হাতেই সাজিয়ে ঘুচিয়ে রেখেছেন অফুরন্ত সম্পদ আর অকৃত্রিম সৌন্দর্য। যা দেখে বিমোহিত হয়ে পড়েন অসংখ্য পর্যটক। 

দরিয়ানগরে উঁচু পাহাড়ের নিচে প্রকৃতি প্রায় আধ কিলোমিটার লম্বা আঁকাবাঁকা একটি সুড়ঙ্গ পথ তৈরি করে রেখেছেন। যার  নাম শাহেনশাহ গুহা। এর একটু দক্ষিণে কিংবদন্তির ‘পরিমুড়া’, যাকে আমরা হিমছড়ি ঝরনা বলে জানি। কক্সবাজারের মানুষের মুখে ফেরে এ পরির গল্প। বানেছা পরির কন্যা হিমপরি নাকি সখীদের নিয়ে সমুদ্রস্নান সেরে এ পাহাড়ে আড্ডা দিতেন।

জনশ্রুতি রয়েছে, হিমপরির সঙ্গে মানুষের ভালোবাসার গল্পও শোনা যায় এই অঞ্চলের মানুষের কাছে।এক সময় এ  নাকি আরবের একটি বাণিজ্যতরী ডুবে গিয়েছিল দরিয়া নগরে। সেই তরীতে ছিলেন শাহেনশাহ নামের একজন তরুণ। তিনি এখানে ঝরনার মিষ্টি পানি খেতে এসে বন্য প্রাণীর কবলে পড়েন। আশ্রয় নেন এক গুহায়। সেই গুহারই পরে নাম হয় শাহেনশাহ গুহা। এক পূর্ণিমা রাতে শাহেনশাহর সঙ্গে দেখা হয় হিমপরির। দুজনের ভালোবাসার সে-ই শুরু। পরি তাঁকে নিয়ে চলে যান নিজ পূর্ণিমা রাতে শাহেনশাহর দেশে। এখানে রয়ে যায় দরিয়ানগর আর শাহেনশাহ গুহা।

গুহার ওপরে প্রায় ১০০ ফুট উঁচু পাহাড় চূড়ায় ছন আর কাঠ দিয়ে তৈরি ‘চেরাংঘর’ বা ‘আড্ডাখানা’। এখানে বসে দেখা যায় দরিয়া বা সমুদ্রদর্শন। পাহাড় চূড়ায় দাঁড়ালে মনে হবে, যেন বঙ্গোপসাগরের নীল জলের ওপরই দাঁড়িয়ে আছেন। নজরে পড়বে দূরের সাগরের নৌকাগুলো। গভীর সাগর থেকে মাছ ধরে ফেরা ট্রলারের সারি।
 
এই পাহাড়ের নিচে রাত যাপনের জন্য রয়েছে বাংলো বা রেস্টহাউস। বাংলোর সামনে সূর্যাস্ত দেখার জন্য রয়েছে ‘সানসেট ভিউ পার্ক’। পার্কের নিচে অর্থাৎ পাহাড়ের খাদে প্রাকৃতিক পরিবেশে তৈরি করা হয় ১২টি কুঁড়েঘর। এখানে যে কেউ সপরিবারে রাত কাটাতে পারেন একেবারে নির্বিঘ্নে নিরাপদে। সেখানে রয়েছে একটি রেস্তোরাঁও, যাতে পাবেন নানা পদের মাছ,কাঁকড়া, জেলিফিশ। 

কক্সবাজার শহর থেকে লোকাল বাসে দরিয়ানগরের ভাড়া ২০ টাকা। তারপর ২০ টাকার টিকিট কেটে কয়েক ঘণ্টার দরিয়ানগর পর্যটন কেন্দ্র ভ্রমণ। গাড়ি থেকে নেমে টিকিট কেটে বিশাল একটি হাঙরের মুখ দিয়ে দরিয়ানগরে প্রবেশ করতে হয়। এরপর পাকা সিঁড়ি বেয়ে পাহাড়ে ওঠা। মাঝেমধ্যে এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে যাতায়াতের জন্য বাঁশের সাঁকো পাড়ি দিতে হবে।
 
পাহাড়ের নিচে শাহেনশাহ গুহায় প্রবেশের সময় একটু সতর্ক থাকতে হয়। পিচ্ছিল পাথরের ওপর দিয়ে হাঁটাচলায় পা পিছলে পড়ে যেতে পারেন। বর্ষার সময় সাপের উপদ্রবও থাকে। তবে গ্রীষ্ম ও শীতকালে গুহায় প্রবেশ নিরাপদ। গুহার শেষ প্রান্ত পর্যন্ত যেতে একাধিক ঝরনা নজরে পড়বে। এসব ঝরনার ঠাণ্ডা জলে শরীরটা ভিজিয়ে নিতে পারেন। গুহার ওপরের দিকে তাকালে মনে হতে পারে, এই বুঝি পাহাড়ের খাড়া মাটি মাথার ওপর এসে পড়ছে। এ এক অন্যরকম অনুভূতি। আজকাল দরিয়া নগরের আশেপাশে অনেক নতুন নতুন রেস্তোরাঁ গড়ে উঠেছে। পাহাড় আর সাগরের ছোঁয়া পেতে দরিয়ানগর সৌখিন পর্যটন স্পট। তাই কক্সবাজারে আগত পর্যটকরা হাতে মাত্র দুই ঘন্টা সময় নিয়ে ঘুরে আসা যায় দরিয়ানগর পর্যটন কেন্দ্র।