ডিসেম্বরে জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উদ্বোধন হবে স্বপ্নের মেট্রোরেল

অনলাইন ডেস্ক

নতুনের সাথে আমরা

প্রকাশিত : ১২:৫৫ পিএম, ২৩ নভেম্বর ২০২২ বুধবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

দেশের প্রথম মেট্রোরেলের (এমআরটি লাইন-৬) নির্মাণকাজ অল্প কিছুদিনের মধ্যে শেষ হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, ডিসেম্বর মাসের যেকোনোদিন জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উদ্বোধন হতে পারে মেট্রোরেলের প্রথম যাত্রা।

প্রাথমিকভাবে উত্তরা-মতিঝিল-কমলাপুর মেট্রোরেলের প্রথম অংশ অর্থাৎ উত্তরা-আগারগাঁও অংশের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো মেট্রোরেলের বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু হবে। তবে, কবে উদ্বোধন হতে পারে সে  বিষয়ে এখনও নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি।

এদিকে, অক্টোবর মাসের ৩১ তারিখে দেওয়া ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) দেওয়া এমআরটি লাইন-৬ এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১.৭৩ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট ও স্টেশন নির্মাণের কাজ সমন্বিতভাবে শেষ হয়েছে ৯৬.৭৫ শতাংশ। তবে কর্তৃপক্ষের দাবি, বাকি ৩.২৫ শতাংশ কাজ নভেম্বর মাসের মধ্যেই শেষ হবে। কাজগুলো গুরুত্ব দিয়ে করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত সম্পূর্ণ ভায়াডাক্ট ও স্টেশন নির্মাণকাজে (প্যাকেজ- ৩ ও ৪) স্টেশনগুলোর রুফ শিট পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে। এ পথের নয়টি স্টেশনের মধ্যে সাতটির প্রবেশ এবং বের হওয়ার অবকাঠামোর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। অবশিষ্ট দুটির কাজ শেষপর্যায়ে আছে। নয়টি স্টেশনে লাইটিং স্থাপনের কাজও শেষ হয়েছে।

এছাড়া নয়টি স্টেশনের মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল, আর্কিটেকচারাল, ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম, ডিজেল জেনারেটর, পানি, গ্যাস ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা (প্লাম্বিং) এবং সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের কাজ শেষ হয়েছে। এখন ইলেকট্রিক্যাল ও প্লাম্বিং কাজের টেস্ট চলছে। প্যাকেজ দুটির বাস্তব অগ্রগতি ৯৬.৭৫ শতাংশ। বাকি রয়েছে ৩.২৫ শতাংশ।

মেট্রোরেলের প্রথম অংশের বাকি ৩.২৫ শতাংশের কাজ শেষ হতে কত দিন লাগবে—জানতে চাইলে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, আমরা বারবারই বলেছি, নভেম্বরের পর আমাদের আর কোনো কাজ বাকি থাকবে না। আমাদের তিনটি স্টেশনে এক্সিট ও এন্ট্রির কাজ চলছিল। বর্তমানে দুটিতে চলে এসেছে। ওই দুই স্টেশনের শুধুমাত্র এক্সিট ও এন্ট্রির কাজগুলো বাকি আছে। আর সব কাজ শেষ হয়েছে।

এদিকে, কাঙ্ক্ষিত মেট্রোরেল কবে উদ্বোধন হবে, সে বিষয়ে বাইরে চলছে নানা গুঞ্জন। বিভিন্ন সময় জানানো হয়েছে, ১৬ ডিসেম্বর বা এর পরে যেকোনো সময়ে চালু হতে পারে মেট্রোরেল। তবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে গত ২০ নভেম্বর একটি বৈঠক হওয়ার কথা ছিল।

এসব বিষয়ে এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, কবে উদ্বোধন হবে— এ সংক্রান্ত কোনো বৈঠক হয়নি। তবে, একটি গর্জিয়াস উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে। আমরা বিশ্বাস করি, ডিসেম্বরেই তা হবে। যদি একটি স্টেশনের এক্সিট ও এন্ট্রির কাজ শেষ নাও হয়, তবুও ট্রেন চলাচলের জন্য আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত। এখন আর ট্রায়াল নয়, সিস্টেম ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট চলছে। ট্রায়ালের পর্ব আমরা পার হয়ে এসেছি।

মেট্রোরেলের যাত্রীদের আনা-নেওয়ার জন্য দুটি স্টেশনে শাটল বাস সার্ভিস রাখা হবে। এ বিষয়ে গত ১৭ নভেম্বর ডিএমটিসিএল ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনের (বিআরটিসি) মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। শাটল সার্ভিসের আওতায় মেট্রোরেলের আগারগাঁও ও উত্তরা নর্থ (দিয়াবাড়ি) স্টেশনে থাকবে বিআরটিসির বাস। আগারগাঁও থেকে যাত্রীদের ফার্মগেট, শাহবাগ, পল্টন হয়ে মতিঝিল পৌঁছে দেবে বাসগুলো।

অন্যদিকে, দিয়াবাড়ি স্টেশনেও থাকবে শাটল বাস। উত্তরার বিভিন্ন এলাকা থেকে এসব বাসে যাত্রীরা মেট্রোরেলের স্টেশন পর্যন্ত আসতে পারবেন। কতগুলো বাস বা কী প্রক্রিয়ায় বাসগুলো চলবে— জানতে চাইলে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, আমাদের চুক্তিতে বলা আছে, ট্রেন থেকে যেসব যাত্রী নামবেন তাদের বিআরটিসি বাস নিয়ে যাবে। বিআরটিসির বহরে যে বাসগুলো আছে, সেখান থেকে যাত্রীদের সংখ্যা নির্ধারণ করে বাস দেওয়া হবে। দেখা গেল সকালে ২০টি লাগবে, দুপুরে পাঁচটি লাগবে— এভাবে বাস্তবতার সঙ্গে মিল রেখে বিআরটিসি আমাদের বাস সার্ভিসের ব্যবস্থা করবে।

বাণিজ্যিকভাবে মেট্রোরেলের চলাচল শুরুর পর কতক্ষণ চলবে— এ বিষয়ে নানা গুঞ্জন রয়েছে। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এ বিষয়ে নানা প্রতিবেদনও প্রকাশ হয়েছে। আসলে মেট্রোরেল কতক্ষণ চালানো হবে—জানতে চাইলে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) এমডি এম এ এন ছিদ্দিক আরও বলেন, আমরা ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ডটা ফলো করব। ভিয়েতনামে মেট্রোরেল কীভাবে চালু হয়েছে, ইন্দোনেশিয়াতে কীভাবে চালু হয়েছে; তারা যে পদ্ধতি অনুসরণ করেছে, আমরা সেটাই অনুসরণ করব। নতুন একটা জিনিস চালু করতে হলে আন্তর্জাতিক একটা প্র্যাকটিস আছে, এক্ষেত্রে দুই ঘণ্টা, চার ঘণ্টা বলে কিছু নেই।

‘একেকজন একেক কথা বলতেছেন। প্রথম কয়েকদিন দুই ঘণ্টা চালান; সকালে চালান, বিকেলে চালান— বিভিন্নজন বিভিন্ন জায়গায় এগুলো বলছেন। টক-শোতেও বলা হচ্ছে, আমরা তো পশ্চিমবঙ্গে দেখেছি, ভারতে দেখেছি…, উদ্বোধনের পরে আরও ১৫-২০ দিন এমনি এমনি চলেছে। আমি বলছি, আমরা বাস্তব অবস্থার ওপর নির্ভর করে চালাব। সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন টেস্টের পরের ধাপই হচ্ছে উদ্বোধন। আমরা দেখব কীভাবে যাত্রী নিয়ে চললে আমাদের সিস্টেমটা প্রোপারলি কাজ করে। সেটার ওপর নির্ভর করে আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব। আমরা আন্তর্জাতিক প্র্যাকটিসের বাইরে যাব না।’