যেভাবে সাংবাদিকতাকে হাতিয়ার করে গল্প বানালো প্রথম আলো

নিউজ ডেস্ক

নতুনের সাথে আমরা

প্রকাশিত : ১১:৪৮ এএম, ৩০ মার্চ ২০২৩ বৃহস্পতিবার

যেভাবে সাংবাদিকতাকে হাতিয়ার করে গল্প বানালো প্রথম আলো

যেভাবে সাংবাদিকতাকে হাতিয়ার করে গল্প বানালো প্রথম আলো

সাংবাদিকতার নামে হিংসা-বিদ্বেষ ছড়ানোতে বরাবর-ই ওস্তাদ ছিলো গণমাধ্যম প্রথম আলো। বিগত ১৪ বছরে দেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রপাগান্ডাসহ বানোয়াট সংবাদ প্রচারে সর্বদা ব্যস্ত ভূমিকা পালন করছে তারা।

করোনা কালীন সময় দেশ বিরোধী একাধিক সংবাদ প্রচারে কোনো লাভ না হওয়ায় এবার সরাসরি প্রতিবেদনের নামে গল্প তৈরি করা শুরু করলো তারা।

গল্প নামক প্রতিবেদনে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকায় নিয়মিত ফুল বিক্রি করে এমন ১২–১৫ জন শিশুর গল্প তুলে ধরা হয়। সেখানে দিনমজুর দাবি করে জাকির হোসেন নামে এক শিশুর উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, ‘পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগব।’

প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয় এবং বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। পরে নিজেদের অবস্থান থেকে পিছু হটে প্রথম আলো। এরপর খবরটি সংশোধন করে তারা।

এদিকে এই প্রতিবেদনটির সত্যতা অনুসন্ধানে নামে একটি বেসরকারি টেলিভিশন। সেই অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণ সাজানো গল্প। এটি পরিবেশন করা হয়েছে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভুল তথ্য দিয়ে।

এ বিষয়ে টেলিভিশনটির প্রচারিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, স্মৃতিসৌধের ফটকে গিয়ে ভাইরাল হওয়া শিশুর ছবিটি দেখাতেই ফুল বিক্রেতারা ছবির শিশুটিকে সবুজ নামে চিহ্নিত করে। তবে সেখানে সবুজ উপস্থিত না থাকায় শিশুটির গ্রামের বাড়ি নবীনগরের কুরগাঁও পাড়ায় যান প্রতিবেদক। সেখানে গিয়ে তিনি জানতে পারেন সবুজ দিনমজুর নয়, বরং স্কুলের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তবে প্রতিদিন স্কুল থেকে ফিরে পরিবারকে সাহায্য করতে মায়ের সঙ্গে ফুল বিক্রি করতে স্মৃতিসৌধে যায় সে।

তবে তিন সন্তানের মধ্যে মেঝ সবুজের নাম জাকির হোসেন হওয়া এবং স্কুলে পড়ুয়া ছেলেকে দিনমজুর বলায় ভীষণ অবাক হন সবুজের মা মুন্নী বেগম।

সবুজের ভাষ্য, ‘একটা ভাই আমাকে বলেন এখানে দাঁড়াও। আমি দাঁড়ালে উনি ছবি তুলেছে। তারপর আমাকে ১০ টাকা দিয়েছে।’

প্রতিবেদনে অসংগতি থাকার কথা স্বীকারও করেছেন প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরীফ। তিনি বলেন, ‘প্রতিবেদনটির ছবির সঙ্গে একটা অসংগতি ছিল। সে কারণে সেটি প্রকাশের ১৭ মিনিট পরেই সরিয়ে নেয়া হয়েছে।’

এদিকে প্রথম আলোর এই প্রতিবেদনকে ১৯৭৪ সালে দৈনিক ইত্তেফাকে বাসন্তীর জাল পরানো ছবির ঘটনার সঙ্গে তুলনা করেছেন অনেকেই।

শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরীন চৌধুরী বলেন, যারা বাসন্তীকে জাল পরিয়ে বঙ্গবন্ধুর ওপরে কালিমা লেপনের চেষ্টা করেছে, তারাই এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত তারা তো বেঁচে আছে। তারা তো ঝাড়ে-বংশে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের ধন-সম্পদও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদেশি টাকায় পুষ্ট তারা। তারা তো এই কাজেই লিপ্ত।’

তবে এ ধরনের ঘটনাকে সরল করে দেখার কোনো সুযোগ নেই বলে মনে করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম। তিনি বলেন, ‘এর উদ্দেশ্য শুভ বলে মনে হয় না। প্রতিবেদনটি একটি শিশুকে ব্যবহার করে করা হয়েছে। তবে যিনি এটি করেছেন তিনি কিন্তু একটি অপরাধ করেছেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এ ধরনের কাজকে একটি অপরাধ বলে গণ্য করা যেতে পারে।’