জাহাঙ্গীরের দুর্নীতি নিয়ে সর্বোচ্চ আলোচনা

নিউজ ডেস্ক

নতুনের সাথে আমরা

প্রকাশিত : ১১:২৮ এএম, ২৫ মে ২০২৩ বৃহস্পতিবার

জাহাঙ্গীরের দুর্নীতি নিয়ে সর্বোচ্চ আলোচনা

জাহাঙ্গীরের দুর্নীতি নিয়ে সর্বোচ্চ আলোচনা

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ঋণ খেলাপের দায়ে প্রার্থী হতে পারেননি সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। তবু এ নির্বাচনে তিনি নানা কারণে আলোচিত। মা জায়েদা খাতুনকে স্বতন্ত্র প্রার্থী করেছেন। 

ভোটারদের কাছে জায়েদা খাতুনের গ্রহণযোগ্যতার ক্ষেত্রেও জাহাঙ্গীরের কর্মকাণ্ড নিয়ে নানা বিশ্লেষণ চলছে। ভোটের আগমুহূর্তে জাহাঙ্গীরের দুর্নীতির বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়মের মাধ্যমে তাঁর বিপুল অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য আগামী ৬ জুন তাঁকে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে ডাকা হয়েছে।

দুদকের একাধিক কর্মকর্তা এমন তথ্য জানিয়েছেন।

দুদক সূত্র জানায়, গত ১৬ মে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে একটি চিঠি দেয় দুদক। সেই চিঠিতে গত ২২ মে দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য দিতে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়েছিল। সেদিন দুদকে হাজির হয়ে এক মাসের সময় চান জাহাঙ্গীর।

গত মঙ্গলবার জাহাঙ্গীরকে ১০ দিনের সময় দিয়ে আগামী ৬ জুন দুদক কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়।

জাহাঙ্গীর আলমকে দেওয়া দুদকের চিঠিতে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের সংক্ষিপ্ত বিবরণের বিষয়ে লেখা হয়েছে—গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প থেকে অনিয়মের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎসহ ভুয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের অভিযোগ।

জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে দুই সদস্যের কমিটির প্রধান হলেন দুদক প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত উপপরিচালক মো. আলী আকবর। তাঁর স্বাক্ষরেই গত ১৬ মে জাহাঙ্গীরকে দুদকে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য দেওয়ার জন্য চিঠি পাঠানো হয়।

দুদকের উপপরিচালক মো. আলী আকবর বলেন, ‘সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে চিঠি দেওয়ার পর তিনি এক মাসের সময় চেয়েছিলেন।

আমরা তাঁকে ১০ দিনের সময় দিয়েছি। আগামী ৬ জুন তাঁকে দুদকে বক্তব্য প্রদানের জন্য উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।’

জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগ রয়েছে জানতে চাইলে আলী আকবর বলেন, ‘মূলত গাজীপুর সিটি করপোরেশনের একাধিক প্রকল্প থেকে অনিয়মের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের কিছু অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে। সেগুলোই আমরা তদন্ত করছি। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশও রয়েছে।’

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে জাহাঙ্গীরকে চাপ দেওয়ার জন্য এ তদন্ত কি না জানতে চাইলে আলী আকবর বলেন, ‘নির্বাচনের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা তিন মাস ধরে তদন্ত করছি। সেই কাজের ধারাবাহিকতায়ই জাহাঙ্গীর আলমকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’

আজ বৃহস্পতিবার গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোটগ্রহণ চলছে। সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন। নৌকার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ায় বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলমের ওপর ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, ‘আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত জাহাঙ্গীর আলম এখন নির্বাচনকে বিতর্কিত করতে নানা চেষ্টা করছেন। বৃহস্পতিবার গাজীপুরের ভোটাররা জাহাঙ্গীরের এসব অপকর্মের জবাব দেবেন।’

জাহাঙ্গীরকে আবারও দুদকে তলব :

অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বহিষ্কৃত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবারও তলব করে চিঠি পাঠিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল মঙ্গলবার দুদকের জনসংযোগ বিভাগ সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করে।

তলবি চিঠিতে আগামী ৬ ও ৭ জুন জাহাঙ্গীর আলমকে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হয়ে বক্তব্য দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।

বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প থেকে অনিয়মের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ এবং ভুয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের অভিযোগে গত বছরের জুনে জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। এরপর গত ১৭ মে পাঠানো পৃথক দুটি তলবি নোটিশের মাধ্যমে ২১ ও ২২ মে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে জাহাঙ্গীরের বক্তব্য গ্রহণ করে দুদক।

২১ মে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন জাহাঙ্গীর। এ ছাড়া ১৮ মে অভিযোগের বিষয়ে নিজের বক্তব্য জানাতে দুদকের কাছে এক মাস সময় চেয়ে আবেদন আবেদন করেন তিনি।

এর আগে বিভিন্ন সময় ভুয়া দরপত্র, বিভিন্ন পদে অযৌক্তিক লোকবল নিয়োগ, বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে ও একই কাজ বিভিন্ন প্রকল্পে দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর তাঁকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।