বাড়ির প্রবীণরা থাকুক যত্নে

লাইফস্টাইল ডেস্ক

নতুনের সাথে আমরা

প্রকাশিত : ০২:০৬ পিএম, ১ অক্টোবর ২০২০ বৃহস্পতিবার

ছবি: বাড়ির প্রবীণ সদস্যের প্রতি যত্নশীল হতে হবে

ছবি: বাড়ির প্রবীণ সদস্যের প্রতি যত্নশীল হতে হবে

প্রায় সবার বাড়িতেই প্রবীণ সদস্য থাকেনই। দাদা- দাদি, নানা- নানি কিংবা বাবা-মা। তাদের প্রতি যত্নশীল হওয়া উচিত সবারই। আজকের দিনটি তাদের জন্যই। সারাবিশ্বে পালিত হচ্ছে প্রবীণ দিবস।

প্রবীণ মানেই ৬০ বছরের বেশি একজন মানুষ। তারা আমাদের অগ্রজ। আমাদের বড় হওয়ার পেছনে তাদের অবদান সবচেয়ে বেশি। কাছের এ মানুষগুলোও তারুণ্যে ভেসেছিলেন এক সময়। এখন তারা প্রবীণদের তালিকায়।

কিন্তু সময়ের ভারে আজ তারা তারুণ্যহারা। শুধু তারুণ্যহারা নন- তারা অনেক কিছুই হারিয়েছেন। কেউ স্বামী, কেউ স্ত্রী আবার কেউ সন্তানদের কাছ থেকে দূরে। অনেকে তো নিজের বাড়ি ছেড়ে আছেন প্রবীণ নিবাসে। আর এ প্রবীণ মানুষগুলোর জন্য প্রয়োজন যত্নের ও বাড়তি ভালোবাসার। যদিও নানা কারণে আমাদের অনেক প্রবীণ বাড়তি যত্ন বা ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, বাংলাদেশে মানুষের বর্তমান গড় আয়ু সাড়ে ৭১ বছর। সে হিসাবে প্রবীণের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। এছাড়া ষাট বছরের বেশি বয়স্ক মানুষকে বাংলাদেশে প্রবীণ হিসেবে ধরা হয়। সে হিসাবে বাংলাদেশে বর্তমানে প্রবীণের সংখ্যা প্রায় এক কোটি ৩০ লাখ। গবেষকদের দাবি, আগামী ৩০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে প্রবীণের সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় দুই কোটি। আর এ সংখ্যা আমাদের অপ্রাপ্তবয়স্কদেরও ছাড়িয়ে যাবে। 

বয়স্ক মানুষ মানেই একটু দুর্বল, অসুস্থ বা চলাফেরায় ছন্দহীন। সেজন্য তাদের প্রয়োজন নিয়মিত যত্ন, সেবা বা ভালো থাকা-খাওয়া। এসব তাদের মৌলিক অধিকারও। যদিও নানা কারণে অনেক প্রবীণ এসব থেকে বঞ্চিত। কারণ কোনো কোনো সন্তান বৃদ্ধ বাবা-মায়ের ভরণপোষণ দেন না; একান্নবর্তী পরিবার ভেঙে যাওয়ায় বৃদ্ধরা হন অসহায়। আবার অনেকে নিঃসন্তান। অবশ্য দ্রুত নগরায়ণও একটি কারণ। ফলে বিশাল এ প্রবীণগোষ্ঠী একদিকে যেমন কর্মহীন, অন্যদিকে তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণের জন্য সেবাপ্রতিষ্ঠান বা জনবলও কম। এজন্য অনেক প্রবীণ তার বিশেষায়িত সেবা পান না। এমনকি সাধারণ সেবা থেকেও বঞ্চিত হন।

সরকারিভাবে দেশে প্রবীণদের ভাতা দেয়া হচ্ছে। অবশ্য সবাই পাচ্ছেন না। অন্যদিকে প্রবীণদের সিনিয়র সিটিজেন ঘোষণা করে চিকিৎসাসহ বিভিন্ন সুবিধা দেয়ার কথাও আছে। যদিও এটা এখনও পুরোপুরি সবার বেলায় ঘটছে না।

এছাড়া বাবা-মাকে ভরণপোষণের আইন আছে। কিন্তু এটিও নানা কারণে অনেক প্রবীণ পাচ্ছেন না। অন্যদিকে দেশে সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগের প্রবীণনিবাস বা বৃদ্ধাশ্রম আছে হাতেগোনা কয়েকটি এবং সেখানে কিছু প্রবীণের চিকিৎসা বা থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে। তবে মানবিক কারণে এসব বৃদ্ধাশ্রমে প্রবীণের না থাকার পক্ষে অনেকে মত দেন। সব মিলিয়ে আমাদের অনেক প্রবীণ আছেন দুঃখ-কষ্টে। কিন্তু হিসাব অনুযায়ী এখন প্রবীণের সংখ্যা দেড় কোটি, সামনে হবে দুই কোটি ও একসময় তরুণের চেয়ে প্রবীণের সংখ্যাই হবে বেশি। সেজন্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রবীণের ভালো থাকার জন্য শুধু আইন, ভাতা বা অবকাঠামো সুবিধা নয়, বেশি প্রয়োজন পারিবারিক ও সামাজিক যত্ন-ভালোবাসার।

সামাজিকতার দোহাই দিয়ে বয়স্ক বাবা-মাকে কাছে রাখেন না অনেকে। এমনকি ঠিকমতো খোঁজখবর নেন না বা ভরণপোষণ দেন না। যদিও এটি মোটেও ঠিক নয়। কারণ, প্রবীণ উপাধি সবাইর মিলবে। অনেক প্রবীণ আছেন, যারা জীবন বাঁচাতে এখনো নিয়মিত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। এছাড়া সব বিবেচনায় অল্প কিছু প্রবীণ আছেন, ভালো সেবা ভোগ করছেন। সন্তানদের উচিত হবে ভালোভাবে যত্ন নেয়া, হাসিখুশি রাখার। তাদের নিয়ে মাঝেমধ্যে ঘুরতে বের হই।

বিশেষজ্ঞ বা চিকিৎসকরা বলছেন, আইন করে নয়- অগ্রজ প্রবীণদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে যত্ন বা ভালোবাসায়। সবারই উচিত বয়স্ক বাবা-মাকে কাছে রেখে দেখাশোনা করা বা তাদের মন ভালো থাকে এমন কাজ করা। এছাড়া প্রবীণদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা করলে তাদের মন ভালো থাকে। তাদের সঙ্গে কথা বললে তারা মানসিক শক্তি পায়। প্রয়োজনে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ রাখতে হবে। এছাড়া কথা না বললে বা একা একা থাকলে মানুষের মন এমনিতেই ভেঙে যায়, সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই তাদের নিয়ে হাঁটাহাঁটি, চলাফেরা বা হাওয়া বদলে বের হওয়া খুবই উপকারী। মনে রাখতে হবে, প্রবীণদের সুস্থভাবে বাঁচিয়ে রাখতে যত্ন ও ভালোবাসার বিকল্প নেই।