ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪ ||  চৈত্র ১৫ ১৪৩০

আগামীকাল যশোর মুক্ত দিবস

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৪:১২, ৫ ডিসেম্বর ২০২১  

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

যশোর মুক্ত দিবস আগামীকাল ৬ ডিসেম্বর । ১৯৭১ সালের এদিনে যশোর জেলা পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী মুক্ত হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর প্রচন্ড প্রতিরোধে এদিন যশোর সেনানিবাস ছেড়ে পালিয়ে যায় পাক হানাদার বাহিনী।

শত্রুমুক্ত হয় যশোর জেলা। আকাশে উড়ে বিজয়ী বাংলাদেশের রক্ত সূর্য খচিত গাঢ় সবুজ পতাকা।দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের লক্ষ্যে আগামীকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় জেলা প্রশাসনের সহায়তায় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের উদ্যোগে শহরের টাউন হল ময়দানে ৫০জন শিল্পীর পরিবেশনায় মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রেরণাদায়ী গণসঙ্গীত জয় বাংলা, বাংলার জয় পরিবেশনের পর জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার সঙ্গে সঙ্গে ৫০জন বীর মুক্তিযোদ্ধা জাতীয় পতাকা উত্তোলন করবেন। এছাড়া বর্ণিল ও বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করবে।বঙ্গবন্ধু ম্যুরালে পুস্পস্তবক অর্পণ করবেন সর্বস্তরের মানুষ। 

মুক্তিযুদ্ধের সময়ের বাংলাদেশ লেবারেশন ফোর্স মুজিব বাহিনীর (বিএলএফ) বৃহত্তর যশোর জেলার (যশোর,নড়াইল,ঝিনাইদহ,মাগুরা) উপ-অধিনায়ক রবিউল আলম জানান, ১৯৭১ সালের ৩, ৪ ও ৫ ডিসেম্বর যশোর অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে পাকস্তানী  হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচন্ড যুদ্ধ হয়।এ সময় মিত্র বাহিনী সীমান্ত এলাকা থেকে যশোর সেনানিবাসসহ পাক আর্মিদের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালাতে থাকে।এক পর্যায়ে পর্যদস্ত পাকিস্তানী বাহিনী ৫ডিসেম্বর থেকে পলায়ন শুরু করে। যশোর সেনানিবাস থেকে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে খুলনার গিলাতলা সেনানিবাসের দিকে পালাতে থাকে।পাক বাহিনী ৫ ও ৬ ডিসেম্বর পলায়নকালে রাজারহাটসহ বিভিন্নস্থানে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে তাদের প্রচন্ড লড়াই হয়।৬ ডিসেম্বর বিকেলের আগে যশোর সেনানিবাস খালি করে পালিয়ে যায় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী।৬ ডিসেম্বর বিকেলে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী যশোর সেনানিবাসে প্রবেশ করে।এ খবর ছড়িয়ে পড়লে মুক্তির আনন্দে উচ্ছ্বসিত মুক্তিযোদ্ধা-জনতার ঢল নামে শহরে।পাড়া মহল্লায় বের হয় খন্ড খন্ড মুক্তির আনন্দ মিছিল।মুক্তির আনন্দে জয় বাংলা শ্লোগানে ফেটে পড়ে গোটা জেলার মানুষ। 

এর আগে ১৯৭১ সালের ৩মার্চ যশোর শহরে মুক্তিকামী জনতার জঙ্গী মিছিলে পাক বাহিনী গুলি চালালে শহীদ হন চারুবালা কর।স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনিই প্রথম শহীদ।এর পর যশোরে সংগঠিত হতে থাকে পাকিস্তানী  হানাদার বাহিনী প্রতিরোধের আন্দোলনকারীরা।এর নেতৃত্ব দেয় সংগ্রাম পরিষদ।সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়া হতে থাকে ছাত্র, যুবক ও মহিলাদের।২৬ মার্চ পাকিস্তানী জল্লাদ বাহিনী তদানীন্তন জাতীয় সংসদ সদস্য  মশিয়ুর রহমানকে তার বাসভবন থেকে ধরে যশোর সেনানিবাসে নিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে।২৯ মার্চ পাকবাহিনী যশোর শহর ছেড়ে সেনানিবাসে চলে যায়।৩০ মার্চ যশোর সেনানিবাসে বাঙালি সৈনিকেরা বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। পাকিস্তানী বাহিনীর সাথে যুদ্ধে লেফটেন্যান্ট আনোয়ারসহ অনেকেই এখানে শহীদ হন । ৩০ ও ৩১ মার্চ মুক্তিকামী জনতা মিছিল সহকারে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে হামলা চালায়।মুক্তি পায় সকল রাজবন্দী। জুলাই মাস থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধের গতিধারা পাল্টে যায়।প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা যশোর শহর ও অন্যান্য এলাকায় পাকিস্তানী বাহিনীর অবস্থানগুলোতে প্রচন্ড আক্রমণ চালাতে থাকে।

যশোর ৮নং সেক্টরের প্রথম দিকের কমান্ডার ছিলেন কর্নেল আবু ওসমান চৌধুরী। পরবর্তীতে কমান্ডার নিযুক্ত হন মেজর মঞ্জুর।যশোরের শার্শা উপজেলার কাশিপুর সীমান্তের বয়রা অঞ্চলে পাকিস্তানী  হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ৫ সেপ্টেম্বর শহীদ হন বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ।যশোর সেনানিবাস থেকে শত্রুবাহিনী বিভিন্ন জেলা নিয়ন্ত্রণ করতো।২০ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী যশোর সেনানিবাস দখলে অভিযান শুরু করে।পাকিস্তানী বাহিনীর শক্তিশালী ঘাঁটি চৌগাছা ঘিরে ফেলে সম্মিলিত বাহিনী।জগন্নাথপুর ও সিংহঝুলির যুদ্ধের পর ২২ নভেম্বর রাতে চৌগাছা শত্রুমুক্ত হয়।এ দু’টি যুদ্ধে পাকিস্তানী বাহিনী হেরে গেলে তাদের মনোবল ভেঙ্গে পড়ে।এ সময় যশোর সেনানিবাসের তিনদিকেই মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী শক্ত ঘাঁটি গেড়ে বসে।৫ ডিসেম্বর যশোর ক্যান্টনমেন্টের অদূরে মনোহরপুর গ্রামে পাকিস্তানী  সেনাবাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের তুমুল লড়াইয়ের পর এক পর্যায়ে পাক বাহিনী অস্ত্রশস্ত্র ফেলে পিছুহটে যশোর ক্যান্টনমেন্টে আশ্রয় নেয়।যশোরে প্রতিরোধ যুদ্ধের শেষ অভিযান চলে ৫ ও ৬ ডিসেম্বর।যুদ্ধে টিকতে না পেরে ৬ ডিসেম্বর  পাকিস্তানী বাহিনী যশোর ছেড়ে পালিয়ে যায় খুলনার দিকে।শত্রুমুক্ত হয় যশোর জেলা।মুক্তিযোদ্ধারা ও মিত্রবাহিনীর সদস্যরা  বয়ে আনেন যশোরবাসীর জন্য এক বিরল সন্মান। যুদ্ধবিধ্বস্ত মুক্ত যশোর কালেক্টরেটসহ শহরে উড়ে স্বাধীন দেশের গৌরবময় পতাকা। 

আরও পড়ুন
সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়