ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

আল্লাহর নির্দেশ মেনে জীবনযাপন আবশ্যক যে কারণে

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:৫৪, ৮ মার্চ ২০২৩  

আল্লাহর নির্দেশ মেনে জীবনযাপন আবশ্যক যে কারণে

আল্লাহর নির্দেশ মেনে জীবনযাপন আবশ্যক যে কারণে

আল্লাহর বান্দা হিসেবে মানুষের উচিত রবের নির্দেশ বিনা বাক্য ব্যয়ে মেনে নেওয়া। নিজের ইচ্ছের ওপর আল্লাহর আদেশকে প্রাধান্য দেওয়া। বান্দা হওয়ার উদ্দেশ্য এটা নয় যে, মানুষ নিজের শখ পূরণ করবে। কারো শখ থাকে আলেম হওয়া আবার কারো মুফতি হওয়া। কিন্তু এই শখ পুরো করার নাম দ্বীন না। এই শখ পুরা করা বন্দেগী না। বন্দেগী হল, যে সময় যে নির্দেশ সে সময় সেটা পালন করা।

তাবলীগের শখ হল। তাবলীগে বের হওয়া অনেক বড় সওয়াবের কাজ। কিন্তু কারো হক নষ্ট করে তাবলীগে বের হওয়া গোনাহ। পরিবারের হক নষ্ট করে তাবলিগে বের হয়ে গেলে উপকারের পরিবর্তে ক্ষতি হবে। সওয়াবের পরিবর্তে গুনাহ হবে। এখন আল্লাহর ইচ্ছে ছিল, মা-বাবার খেদমত করা। পরিবারকে সময় দেয়া। এখন এই প্রয়োজন পূরণ না করে তাবলিগের শখ পূরণ করতে যাওয়াটা গুনাহের কাজ বলে ধরা হবে।

আল্লাহর যখন যে নির্দেশ সেটা তখন পালন করার নাম বন্দেগী। তার ইচ্ছার সামনে একজন বান্দার শখের কোনো হাকীকত নেই। মনিবের হুকুমের সামনে দাসের আবেগ ও জযবার কোনো মূল্য নেই।

আল্লাহ সব জায়গায় পরীক্ষা নিয়েছেন। নামাজ কত গুরুত্বপূর্ণ ফরজ। কিন্তু কিছু সময় নামাজ নিষেধ করে দিয়েছেন। নামাজে জিকির হবে, তিলাওয়াত হবে, রুকু হবে, সেজদা হবে, কিন্তু তারপরও নামাজ কিছু সময় নিষিদ্ধ করে দিলেন। এর একটা রহস্য এটাও যে, আমাদের মনে যেন এ কথা না আসে, এই নামাজ নিজেনিজেই কোনো বড় মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত। আসল জিনিস হল আল্লাহর হুকুম। হুকুম অনুযায়ী নামাজ পড়া হলে সেটা ইবাদত বলে গণ্য হবে। হুকুম মোতাবেক নামাজ পড়া না হলে সেটা ইবাদত হিসাবে গণ্য হবে না। সেটা হবে নাফরমানি।

এ কথা রোজার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। রোজা কত বড় ফজিলতের। কিন্তু তাই বলে কি ঈদের দিন রোজা রাখা যাবে? কেউ যদি ঈদের দিন রোজা রাখে, আল্লাহর জন্য খাওয়া পান করা ছেড়ে দেয়, তার তখন সওয়াবের পরিবর্তে গুনাহ হবে। কারণ এটা হারাম। ঈদের দিনের রোজার কোনো হাকীকত নেই। কারণ এখানে আল্লাহর হুকুম নেই।

জাকাত ও সাদাকার কত ফজিলত। কিন্তু এটাও বলে দেওয়া হয়েছে যে, তোমরা এই পরিমাণ সাদাকা দাও, যাতে তোমার স্ত্রীপুত্রের হক নষ্ট না হয়। যদি হক নষ্ট হয় তাহলে সেটা গুনাহ। সবকিছু সদকা করে দিলেন আর নিজের স্ত্রী পুত্র উপোস। তাহলে এই সাদকা হারাম। সাদকা এই পরিমাণ দাও যে এরপর নিজের জরুরত পুরো করার মত কিছু থাকে। এভাবে আল্লাহ প্রতিটি ইবাদতের ক্ষেত্রে একটা সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন।

হজের ক্ষেত্রেও একই কথা। পুরো হজ এ কথার বাস্তব নমুনা যে কোনো জিনিসই সত্ত্বাগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ নয়। হাজি সাহেব প্রতিদিন হারাম শরীফে নামাজ পড়তেন। তাওয়াফ করতেন। এক রাকাত নামাজে এক লক্ষ রাকাত নামাজের সাওয়াব পাওয়া যাচ্ছিল। কিন্তু যখন যিলহজ্বের ৮ তারিখ হল তখন বলা হল, এখান থেকে যাও। মিনায় যাও। সেখানে কিছুই করতে হবে না। শুধু পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়। এ হুকুমের একটা কারণ এটাও যে কারো মাথায় যেন এটা বসে না যায়, বায়তুল্লাহ শরীফে নামাজ পড়ার যে ফযীলত সেটা সত্ত্বাগতভাবেই বায়তুল্লাহর।

ফজিলত তো নিজে নিজে হয় না। ফজিলত হয় আল্লাহর হুকুমের কারণে। এখন যদি কেউ মনে করে, আমি মিনায় যাব না। মিনায় যাওয়া ফরজ ওয়াজিব কিছু না। এটা না হলে হজ্ব ভেঙ্গে যায় না। আমি বায়তুল্লায় নামাজ পড়ব এবং এক লাখ রাকাতের সাওয়াব অর্জন করব। তো তার এক লাখ রাকাত তো দূরে এক রাকাত নামাজেরও সওয়াব হবে না। কারণ সে নিজের মনগড়া মত এ কাজ করছে, যা আল্লাহর হুকুমের খেলাফ।

নিজের জ্ঞান খাটিয়ে চিন্তা করতে থাকা, যুক্তি তালাশ করতে থাকা এটা বন্দেগী বা দাসত্ব নয়। নিজের শখ পুরো করতে থাকার নাম বন্দেগি না। বন্দেগী হল আল্লাহ যখন যেটার হুকুম করেন তখন সেটা করতে থাকা। আল্লাহ দয়া করে এটা আমাদের অন্তরে বসিয়ে দেন। যখন যেটার তাকাযা, আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তখন সেটা করার তাওফীক দান করেন। আমীন।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়