ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪ ||  চৈত্র ১৫ ১৪৩০

ইসলামে নারীর সাজসজ্জার নির্দেশনা

ধর্ম ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:৫৪, ১ জুলাই ২০২১  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

সাজসজ্জা ও অলংকার। শাব্দিকভাবেই যেন শব্দগুলো নারীত্বের প্রতিনিধিত্ব করে। এর প্রতি নারীদের সহজাত প্রবৃত্তি সৃষ্টিগতভাবে আকৃষ্ট হয়।

দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদ। সাজসজ্জার এক মোক্ষম উপলক্ষ। স্বভাব অনুকূল ধর্ম ইসলামও সীমার মাঝে থেকে নারীর সাজসজ্জায় সম্মতি দিয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে উৎসাহও যুগিয়েছে। যেমন- হাতে মেহেদি লাগানো।

আবার সাজসজ্জার কিছু ধরণ ও ক্ষেত্র এমন আছে, যেগুলোকে ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে। যেমন- ভ্রু প্লাক করা। এ বিষয়ে ইসলামের রয়েছে নিজস্ব কিছু সীমা ও বিধান।

ঈদ যেহেতু একটি ধর্মীয় ইবাদত বিশেষ, সেহেতু মুসলিম নারীদের ঈদের আগে সাজসজ্জার বিধি-বিধান সম্পর্কে জানা আবশ্যক।

সাজসজ্জার প্রদর্শন প্রসঙ্গে
সাজসজ্জা করার আগে ভাবতে হবে, আপনি কার জন্য, কাকে দেখানোর জন্য সাজবেন। কোরআনে কারিমে নারীদের সৌন্দর্য্য প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। তবে মাহরাম ১৪ শ্রেণির পুরুষ ছাড়া। কাজেই নারী, নারীসদৃশ হিজড়া এবং মাহরাম পুরুষদের সামনে সাজসজ্জার প্রদর্শন বৈধ। তবে স্বামী ব্যতীত অন্য মাহরাম পুরুষের (ছেলে, পিতা, ভাই প্রমুখ) সামনে পেট ও পিঠের সৌন্দর্য্য প্রকাশ করা জায়েজ নয়। আর হ্যাঁ, তাদের মধ্য থেকে যদি কারও সামনে সাজসজ্জা প্রদর্শনে ফেতনার প্রবল আশঙ্কা থাকে- তাহলে তার সামনে সৌন্দর্য্য প্রকাশ নাজায়েজ। আর স্বামীর সামনে সাজসজ্জা ও সৌন্দর্য প্রদর্শন শুধু বৈধই নয় বরং করণীয়।

কী ধরণের সাজসজ্জা বৈধ
যে সমস্ত সাজসামগ্রী হালাল বস্তু দ্বারা তৈরি, সেগুলোর ব্যবহার জায়েজ। যেমন- সাধারণ মেকআপ, লিপস্টিক ইত্যাদি। তবে এগুলোর উপাদানে যদি হারাম কিছু থাকে, এমনটি নিশ্চিতভাবে জানা থাকলে সেগুলো ব্যবহার করা জায়েজ হবে না।

যে সমস্ত সাজসামগ্রীতে অ্যালকোহল ব্যবহার করা হয়, যেমন- পারফিউম, বডি স্প্রে ইত্যাদি। সেগুলো যদি আঙুর বা কিসমিসের তৈরি না হয় এবং নেশার পরিমাণে না পৌঁছায়, তাহলে ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর মতানুযায়ী তা ব্যবহার জায়েজ। আর যদি আঙুর বা কিসমিসের তৈরি হয়- তাহলে সামান্য পরিমাণ ব্যবহারও জায়েজ নয়।

পারফিউম বা বডি স্প্রের ব্যাপারে আরেকটি লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, তা ব্যবহার করে পরপুরুষের কাছে যাওয়া যাবে না বা রাস্তায় বের হওয়া যাবে না।

নেইলপালিশের ক্ষেত্রে হুকুম হলো- এগুলো যদি পবিত্র বস্তু দ্বারা প্রস্তুত হয়, তাহলে ব্যবহার করা জায়েজ। তবে নেইলপালিশ যেহেতু পানি প্রবেশের প্রতিবন্ধক, তাই তা নখে থাকাবস্থায় অজু ও ফরজ গোসল হবে না। নখ থেকে তুলে অজু ও ফরজ গোসল করতে হবে। তবে পিরিয়ড অবস্থায় নেইলপালিশ ব্যবহার করলে করতে পারেন। বারংবার অজুর সুবিধার্তে পিরিয়ডমুক্ত পবিত্রাবস্থায় নেইলপালিশ ব্যবহার না করাই অধিকতর নিরাপদ।

যে সব সাজসজ্জা জায়েজ নয়
প্রকৃতি ও সৃষ্টিকে পরিবর্তন করা হয় কিংবা ধোঁকা দেওয়ার শামিল হয়- এমন অঙ্গসজ্জা জায়েজ নেই। যেমন- সাদা চুল কালো করা, ভ্রু প্লাক করা ইত্যাদি। তবে নারীদের জন্য গালের অবাঞ্চিত পশম উঠানো জায়েজ।

যে সাজ নারীকে পুরুষদের সাদৃশ্য করে দেয়, সেসব সাজসজ্জাও জায়েজ নেই। যেমন- চুল এত ছোট করে ছাঁটা যার কারণে দূর থেকে দেখে পুরুষ মনে হয়।
বিধর্মীদের কিংবা প্রকাশ্য পাপাচারে প্রসিদ্ধ নারীদের অনুকরণ হয়, এমন সাজসজ্জাও ইসলামে জায়েজ নেই।

পরচুলা ও চোখের আলগা পাঁপড়ি যদি শূকর, কুকুর ও মানুষের পশম বা চুল দ্বারা প্রস্তুতকৃত না হয়- তাহলে ব্যবহার জায়েজ, অন্যথায় নয়।

চুলে কালো রঙ ছাড়া অন্য রঙ ব্যবহার করা জায়েজ- যতক্ষণ না কোনো বিধর্মীর অনুসরণ হয়। বিধর্মীর অনুকরণ হলে জায়েজ নয়।

পোশাকাদির ক্ষেত্রে বিধান
এমন পাতলা পোশাক যাতে অঙ্গের রঙ দেখা যায় এবং এমন আঁটোসাঁটো পোশাক যাতে অঙ্গের গড়ন বুঝা যায়- সেগুলো পরিধান জায়েজ নেই। তবে পাতলা কাপড়ের অভ্যন্তরে যদি ফলস কাপড়ের আবরণ থাকে, যা অঙ্গের রঙ ঢেকে রাখে- তাহলে জায়েজ। পাতলা ও আঁটোসাঁটো পোশাক স্বামীর সামনে পরিধান জায়েজ।

যে সব পোশাক পুরুষদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়- সেগুলোর ব্যবহার জায়েজ নয়। সেই সঙ্গে যে সব পোশাকে বিধর্মীদের অনুকরণ হয়- সে সব পরিধান জায়েজ নেই।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়