ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

এই ফুল দিনে ফোটে রাতে গুটিয়ে যায়

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:০২, ১৬ ডিসেম্বর ২০২২  

এই ফুল দিনে ফোটে রাতে গুটিয়ে যায়

এই ফুল দিনে ফোটে রাতে গুটিয়ে যায়

জ্যাকারান্ডা, একটি গাছের নাম। এটিকে আর্জেন্টিনার সর্বশ্রেষ্ঠ গাছ বলে বিবেচিত হয়। জ্যাকারান্ডা বসন্ত ঋতুতে নীলে নীলে ভরে যায়। অত্যাশ্চর্য বেগুনি ফুল হিসেবে স্বীকৃত এটি। আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস আইরেসের প্রধান রাস্তাগুলোর দুই পাশে দেখা যায়। এছাড়া আর্জেন্টিনার অন্যান্য শহরগুলোতেও এই ফুলের দেখা মেলে।

জ্যাকারান্ডা মৌসুম আশ্চর্যজনকভাবে সংক্ষিপ্ত। যা শুধুমাত্র অভিজ্ঞতাটিকে আরো সমৃদ্ধ ও সুন্দর করে। সাধারণভাবে বলতে গেলে, বেগুনি ফুলগুলি অক্টোবরের শুরু থেকে মাঝামাঝি সময়ে নিজেদের দেখাতে শুরু করে। 

জ্যাকারান্ডা মাঝারি আকারের গাছ। আট থেকে দশ মিটারের মতো উঁচু হয়। ফুল নীল-বেগুনি। অতিরিক্ত পানি সহ্য করতে পারে না। চিরল চিরল পাতা। শীতে পাতা ঝরে যায়। বসন্তে ফুল ফুটে। কলি অবস্থায় গাঢ় রং। ফুল ফোটার পর একটু ফিকে রং ধারণ করে। গ্রীষ্ম-বর্ষায় সবুজ পাতায় ভরে ওঠে গাছ। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ফোটে ফুল। গাছে ফুল থাকে অনেক দিন। ফুল গন্ধহীন। গোলাকার ফল পাঁচ সেন্টিমিটার চওড়া। ফল সবুজ রঙের। পাকা ফল বাদামি। জ্যাকারান্ডার বংশবৃদ্ধি বীজ ও কলম—দুভাবেই হয়। ঢাকার হাতিরঝিল, রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও কার্জন হল প্রাঙ্গণে জ্যাকারান্ডাগাছ আছে।

অস্ট্রেলিয়াবাসী এখন চিন্তাই করতে পারে না জ্যাকারান্ডা বৃক্ষ ছাড়া জীবন। গ্রাফটনকে অস্ট্রেলিয়ার জ্যাকারান্ডা রাজধানী বলা হয়, কেননা, গ্রাফটনের বেশির ভাগ রাস্তার পাশে সারিবদ্ধ ভাবে অসংখ্য জ্যাকারান্ডা লাগানো আছে। সেপ্টেম্বর-অক্টবর মাসে পুরো গ্রাফটনের রাস্তাগুলো জ্যাকারান্ডা ফুলে ফুলে বেগুনী হয়ে থাকে। 

অক্টোবরের দ্বিতীয়ার্ধে গ্রাফটনের রাস্তা এবং পার্কগুলোকে স্বপ্নের মতো দেখায়, গাছগুলো ফুলে ফুলে ভরে যায়। এ উপলক্ষে প্রতি বছর এখানে উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।  অস্ট্রেলিয়ার অনেক রাস্তার নাম জ্যাকারান্ডার নামে নামকরণ করা হয়েছে। যেমন, নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের গ্রাফটনে এবং লিসমোরে দুটি পৃথক রাস্তার নাম জ্যাকারান্ডা এভিনিউ নামে নামকরণ করা হয়েছে। গ্রাফটন জ্যাকারান্ডা উৎসব অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে এবং নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হয়।

জ্যাকারান্ডা ৪৯টি প্রজাতি নিয়ে গঠিত বিগ্নোনিয়াসি (Bignoniaceae) পরিবারের একটি গণের নাম। এর আদিনিবাস হলো মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা, কিউবা, হিস্পানিওলা এবং জ্যামাইকা ও বাহামার উষ্ণ ও উপউষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলগুলোতে।এটাকে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এমনকি অস্ট্রেলিয়াতেও অনুপ্রবেশ করানো হয়েছে। এটা নেপালে ব্যাপক ভাবে লাগানো হয়েছে।

সাধারণত আলংকারিক বৃক্ষ হিসেবে রাস্তার ধারে সারিবদ্ধ ভাবে লাগানো হয়। এর ফুলের রঙ বেগুনি বা নীল রঙের হয়ে থাকে। বসন্তে কোনো পাতা থাকে না। ফলে গোটা বৃক্ষটিকে মনে হয় বেগুনি বা নীল বৃক্ষের মত, বেশ স্বাপ্নিক একটা আমেজ নিয়ে আসে পরিবেশটাতে। এদের সৌন্দর্যের জন্য স্থান করে নিয়েছে বিভিন্ন কৃষ্টিতে ও তাদের কথা ও সাহিত্যে, গানে বাজনায়। এমনকি কুসংস্কারেও।

জ্যাকারান্ডাকে বলা যায় মহাজাগতিক উদ্ভিদ। এটি অস্ট্রেলিয়া, আর্জেন্টিনা ছাড়াও প্যারাগুয়ে , উরুগুয়ে , দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া , ফ্লোরিডা , মেক্সিকো , কলম্বিয়া , সৌদি আরব , ব্রাজিল , দক্ষিণ আফ্রিকা , বতসোয়ানা , জিম্বাবুয়ে , অস্ট্রেলিয়া , নিউজিল্যান্ড , স্পেনে পাওয়া যায়।  এটি এশিয়ায়ও রোপণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও নেপালে এই ফুলের দেখা মেলে।

দিনের আলোয় এই ফুল প্রসারিত মনে হয়। রাতে অনেকটা গুটিয়ে থাকে।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়