করোনার এক বছর, পিছিয়ে নেই দেশ
নিউজ ডেস্ক
প্রতীকী-ছবি
দিনটি ছিল রোববার। ২০২০ সালের এ দিনই বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। ধীরে ধীরে এর সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। বাড়তে থাকে আক্রান্তের সংখ্যা। নিভে যায় হাজারো জীবন প্রদীপ। এর মধ্যে দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিও ছিলেন।
এভাবেই করোনার সঙ্গে লড়তে লড়তে কেটে গেল একটি বছর। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সফল চেষ্টায় এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে সর্বনাশা এই বৈশ্বিক মহামারির অভিশপ্ত ছোঁয়া।
গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম তিনজন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। যার মধ্যে দুইজন ছিলেন বিদেশ ফেরত, অপরজন সংস্পর্শে আসা। আইইডিসিআর থেকে এ ঘোষণা দেয়ার পাশাপাশি সবাইকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকার ও জনসমাগম এড়িয়ে চলার পরামর্শও দেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।
করোনাভাইরাস নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে ওই বছরের ১৭ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত প্রথম দফায় সারাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এরপর কয়েক দফায় ছুটি বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ চলতি বছরের ২৯ মার্চ পর্যন্ত সাধারণ ছুটি বাড়ানো হয়। তবে আগামী ২৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর আগে ১৭ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো খুলে দেয়া হবে।
বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যু হয় ১৮ মার্চ। এরপর থেকেই প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হতেন না। পরবর্তীতে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত প্রথম ধাপে সরকারি ও বেসরকারি অফিসে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। সিদ্ধান্ত নেয়া হয় সব গার্মেন্টস-কারখানা বন্ধ রাখার। একই সঙ্গে ওইদিন থেকে লকডাউন চলতে শুরু করে। পর্যায়ক্রমে নৌপথ, রেলপথ ও আকাশ পথে চলাচল বন্ধ হয়।
তবে অর্থনীতি সচল রাখতে সরকারের নির্দেশনায় সীমিত পরিসরে ২৬ এপ্রিল প্রথম দফায় ছয় শতাধিক তৈরি পোশাক কারখানা চালু করেন মালিকরা। পর্যায়ক্রমে সব গার্মেন্টস খোলা হয়। পরবর্তীতে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ১০ মে থেকে সীমিত পরিসরে সব ধরনের শপিংমল ও মার্কেট খোলার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
এরপর ৩১ মে থেকে অফিস, বাস-লঞ্চ-ট্রেন-বিমান চলাচল, পুঁজিবাজার ও ব্যাংকে লেনদেন স্বাভাবিক হয়। অর্থনীতি সচলের জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনেই এসব খোলা হয়। তবে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে দুই মাসের লকডাউন শেষে সব খুলে দেয়ার পর ফের সংক্রমণ আটকাতে নতুন পরিকল্পনা নেয় সরকার।
পরিকল্পনার আওতায় সারাদেশকে লাল, সবুজ ও হলুদ জোনে ভাগ করা হয়। এসব জোনে ভাগ করার পর দেশে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা কমতে থাকে। ক্রমান্বয়ে সংক্রমণের হার কমতে থাকলে এসব বিধিনিষেধও তুলে নেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এসব কার্যক্রমে দেশে করোনার হার কমেছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
গত এক বছরে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৫ লাখ ৫০ হাজার ৩৩০ জন, আর মৃত্যু হয়েছে ৮ হাজার ৪৬২ জনের। এর মধ্যে গত বছরের ৩০ জুন একদিনেই ৬৪ জন মারা যান, যা একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু ছিল।
প্রাণঘাতী এ করোনা কেড়ে নেয় জাতীয় অধ্যাপক লেখক, কথাসাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবী ড. আনিসুজ্জামানের প্রাণ। সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান ড. সা’দত হুসাইনের মতো দেশবরেণ্য ব্যক্তিও করোনার কাছে হার মানেন। করোনাভাইরাসে মারা যান ভাষাসংগ্রামী, মুক্তিযোদ্ধা, বরেণ্য সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী। দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদও করোনায় মারা যান।
এছাড়া করোনা কেড়ে নিয়েছে বহু ভাষাবিদ ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহর ছেলে চিত্রশিল্পী, লেখক ও গবেষক মুর্তজা বশীর, বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক, কবি ও প্রাবন্ধিক মনজুরে মওলাসহ আরো অনেককে। তারা একেকজন ছিলেন আমাদের জ্ঞান, সংস্কৃতি, শিক্ষা, বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার বাতিঘর।
এদিকে, দেশে প্রথম করোনা রোগী আক্রান্ত হওয়ার দুই সপ্তাহ পর প্রথম দফায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর এক সপ্তাহ পর ৫ এপ্রিল বিভিন্ন খাতে আরো ৬৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। পর্যায়ক্রমে ২১টি প্যাকেজ করা হয়। মোট প্যাকেজের আকার দাঁড়ায় ১ লাখ ২১ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে তা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৪ শতাংশের বেশি, যা দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে জিডিপির বিবেচনায় সর্বোচ্চ ছিল।
সর্বনাশা এই বৈশ্বিক মহামারির ধাক্কা সামলে নিয়ে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। চাঙা রয়েছে গ্রামীণ অর্থনীতি। দ্রুতগতিতে বাড়ছে প্রবাসী আয়। রফতানি আয়ও বাড়ছে। মেগা প্রকল্পে এসেছে গতি।
প্রাণ খুঁজে পেয়েছে সংকটে থাকা শেয়ারবাজার। ব্যাপক বিনিয়োগের জন্য পর্যাপ্ত টাকা রয়েছে ব্যাংকের কাছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ও দেশি-বিদেশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা।
করোনার মধ্যেও দেশে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে। সরকারের প্রণোদনা ও হুন্ডি বন্ধ হওয়ায় আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, ডিসেম্বরের প্রথম ১০ দিনে দেশে ৮১ কোটি ৪০ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। সব মিলিয়ে ১ জানুয়ারি থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে ২০ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার এসেছে, যা ২০১৯ সালের পুরো সময়ের চেয়ে প্রায় ১২ শতাংশ বেশি। এর আগে বাংলাদেশে এক বছরে এত রেমিট্যান্স কখনো আসেনি। ২০১৯ সালে ১৮ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আসে।
মহামারি করোনার মধ্যেও থেমে থাকেনি বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের কাজ। স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে দিনরাত কাজ চালিয়ে গেছেন সংশ্লিষ্টরা। ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর স্বপ্ন ছুঁয়েছে পদ্মাসেতুর এপার-ওপার। ৪১তম, অর্থাৎ শেষ স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দেশের সবচেয়ে বড় এই অবকাঠামোর মূল অংশ দৃশ্যমান হয়।
এছাড়া এগিয়ে চলছে মেট্রোরেল ও কর্ণফুলী টানেলের মতো বড় প্রকল্পের কাজও। একইভাবে দেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজও এগোচ্ছে।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে উন্নত বিশ্বের অনেক দেশ এখনো টিকা পায়নি। অথচ দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে করোনাভাইরাসের টিকা প্রয়োগের জন্য ১৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই মধ্যে ২১ জানুয়ারি ভারত সরকারের উপহার দেয়া ২০ লাখ ডোজ করোনার টিকা আসে দেশে। এটিই ছিল টিকার প্রথম চালান। এরপর ২৫ জানুয়ারি ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে বাংলাদেশ সরকারের কেনা তিন কোটি ডোজ টিকার মধ্যে প্রথম চালানে ৫০ লাখ ডোজ আসে। চুক্তির দ্বিতীয় চালান আসে ২২ ফেব্রুয়ারি। এ চালানে ছিল ২০ লাখ ডোজ। এরই মধ্যে করোনার টিকার সুফল পেতে শুরু করেছে বাংলাদেশ।
- Metro-rail brings ease in capital`s nightmare transport system
- কৃষিপণ্য কেনাবেচার অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ‘ফুড ফর ন্যাশন’ উদ্বোধন করে
- বিদেশ ভ্রমণসহ নানা নিষেধাজ্ঞা ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের ওপর : বাংলাদেশ ব্যাংক
- দেশে ২৪ ঘণ্টায় ৫ মৃত্যু, নতুন আক্রান্ত ৫৬৪
- বঙ্গবন্ধুর সাথে ছোট বেলার স্মরণীয় মধুর স্মৃতি
- নির্দিষ্ট সংখ্যক যাত্রী নিয়ে চলবে বাস, ট্রেন ও লঞ্চ
- করোনা চিকিৎসায় ২০০০ চিকিৎসক, ৫০৫৪ জন নার্স নিয়োগ
- প্রথম ডিজিটাল পদ্ধতিতে উদযাপন হবে আন্তর্জাতিক জাদুঘর দিবস
- চাষিদের লোকসান ঠেকাতে ক্ষেত থেকে সবজি কিনছে সেনাবাহিনী
- করোনার সময়ে জরুরি সাহায্য পেতে ফোন করুন