ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

কেয়ামতের ৭২টি নিদর্শন

ধর্ম ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৫:২৭, ২৯ নভেম্বর ২০২১  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান বিশ্বের প্রখ্যাত স্কলার জাস্টিস আল্লামা মুফতি তাকি উসমানি তার একটি লেকচারে বিভিন্ন হাদিসের আলোকে ফিতনার (কেয়ামতের আলামত) ৭২টি নিদর্শন উল্লেখ করেন। এতে তিনি হজরত হুজায়ফা (রা.) এর সূত্র তুলে ধরেছেন।

নিচে সেগুলো তুলো ধরা হলো-

১. লোকেরা নামাজে ডাকাতি করবে। অর্থাৎ নামাজের প্রতি মানুষের একদম গুরুত্ব থাকবে না। এ কথাটি আজকের যুগে এতটা আশ্চর্যের নয়। কারণ এ যুগে বেশির ভাগ মুসলমানের মাঝেই নামাজের গুরুত্ব নেই।

২. আমানতের খেয়ানত করবে। অর্থাৎ তাদের কাছে আমানতরূপে যা কিছু রাখা হবে তা তারা আত্মসাৎ করবে।

৩. সুদের লেনদেন করাও কেয়ামতে আলামত।

৪. মিথ্যা কথা বলাকে হালাল মনে করবে। অর্থাৎ মিথ্যা বলতে পারাকে একটি দক্ষতা ও যোগ্যতা মনে করা হবে।

৫. সামান্য বিষয়ে রক্তপাত করবে এবং অন্যের প্রাণ সংহার করবে।

৬. উঁচু উঁচু ভবন নির্মাণ করবে।

৭. দ্বীন বিক্রি করে দুনিয়া উপার্জন করবে।

৮. আত্মীয়দের সঙ্গে বাজে আচরণ করবে।

৯. ইনসাফ উঠে যাবে।

১০. মিথ্যা সত্যতে পরিণত হওয়াও কেয়ামতের আলামত।

১১. রেশমি পোশাক পরিধান করা হবে।

১২. জুলুম-অত্যাচার ব্যাপকরূপ লাভ করবে।

১৩. তালাকের আধিক্য হবে।

১৪. আকস্মিক মৃত্যুর হার বেড়ে যাবে।

১৫. দুর্নীতিপরায়ণ লোকদের সেলাক মনে করা হবে।

১৬. সেলাকদের দুর্নীতিপরায়ণ মনে করা হবে।

১৭. মিথ্যাকে সত্য মনে করা হবে।

১৮. সত্যকে মিথ্যা বলা হবে।

১৯. অপবাদ আরোপের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।

২০. বৃষ্টি হওয়া সত্ত্বেও পরিবেশ উষ্ণ থাকাও কেয়ামতের আলামত।

২১. লোকেরা সন্তান লাভের পরিবর্তে সন্তান নেয়াকে অপছন্দ করবে। অর্থাৎ সন্তান লাভের জন্য মানুষ যেভাবে দোয়া করে তার পরিবর্তে সন্তান না হওয়ার জন্য দোয়া করবে এবং বিভিন্ন পদ্ধতি গ্রহণ করবে।

২২. নীচ লোকেরা সম্পদশালী হবে এবং অত্যন্ত বিলাসী জীবনযাপন করবে।

২৩. ভদ্রলোকেরা নিগৃহীত হবে।

২৪. রাষ্ট্রপ্রধান, শাসকবর্গ ও মন্ত্রিপরিষদ এবং তাদের সমর্থক ও সহযোগীরা মিথ্যা বলায় অভ্যস্ত হয়ে যাবে এবং সকাল-বিকেল মিথ্যা কথা বলবে।

২৫. আমানতদার ব্যক্তি খেয়ানত করবে।

২৬. নেতৃবর্গ জালেম ও অত্যাচারী হওয়াও কেয়ামতের আলামত।

২৭. আলেম এবং কারি বদকার হবে। অর্থাৎ আলেম এবং পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতকারী লোকজনও বদকার ও ফাসেক হবে।

২৮. লোকেরা জীবজন্তুর চামড়া দ্বারা তৈরি উন্নতমানের পোশাক পরবে।

২৯. কিন্তু তাদের দিলগুলো মৃত জন্তুর চেয়ে বেশি দুর্গন্ধময় হবে।

৩০. এবং পাথরের চেয়ে বেশি কঠিন হবে।

৩১. স্বর্ণ সুলভ হবে।

৩২. রুপার মূল্য বেড়ে যাবে।

৩৩. গুনাহর পরিমাণ বেড়ে যাবে।

৩৪. জানমালের নিরাপত্তা কমে যাবে।

৩৫. কোরআন শরিফকে সজ্জিত করা হবে।

৩৬. মসজিদকে কারুকার্যময় করা হবে।

৩৭. উঁচু উঁচু সৌধ নির্মিত হবে।

৩৮. হৃদয়গুলো উজাড় হবে।

৩৯. ব্যাপকভাবে মদ পান করা হবে।

৪০. শরিয়তের দণ্ডবিধিকে অকার্যকর করা হবে।

৪১. দাসী স্বীয় মুনিবকে জন্ম দিবে। অর্থাৎ মেয়ে মায়ের ওপর কর্তৃত্ব করবে এবং এরূপ ব্যবহার করবে, যেরূপ মুনিব দাসীর সঙ্গে ব্যবহার করে।

৪২. একসময় যারা খালি পায়ে ও উন্মুক্ত দেহে চলাফেরা করতো, এমন মানুষরা দেশের শাসক বনে যাবে।

৪৩. পুরুষ ও মহিলা যৌথভাবে ব্যবসা করবে। মহিলারা জীবনের সকল ক্ষেত্রে পুরুষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে।

৪৪. পুরুষরা মহিলাদের বেশভূষা ধারণ করবে।

৪৫. মহিলারা পুরুষদের বেশভূষা ধারণ করবে। দূর থেকে দেখে বোঝা যাবে না, এটা পুরুষ না মহিলা।

৪৬. গায়রুল্লাহর নামে শপথ করা হবে। শপথ শুধু আল্লাহর নামে এবং কোরআনের ওপর বৈধ, অন্য কোনো কিছুর নামে শপথ করা হারাম। কিন্তু ফিতনার যুগে মানুষ আল্লাহ ছাড়া অন্যান্য জিনিসের নামেও শপথ করবে।

৪৭. মুসলমানরাও নির্দ্বিধায় মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে প্রস্তুত থাকবে।

৪৮. শুধু পরিচিত লোকদের সালাম দেওয়া হবে। অথচ রাসুল (সা.)-এর শিক্ষা হলো, তুমি যাকে চেন তাকেও সালাম কর এবং যাকে তুমি চেন না তাকেও সালাম কর (বুখারি, হাদিস : ১২)। 

৪৯. দুনিয়া লাভের উদ্দেশ্যে দ্বীনি ইলম শিক্ষা দেওয়া হবে। শিক্ষা অর্জনকারীদের উদ্দেশ্য হবে এর মাধ্যমে আমাদের ডিগ্রি লাভ করা, চাকরি পাওয়া, পয়সা উপার্জন করা এবং সম্মান ও খ্যাতি অর্জিত হওয়া।

৫০. আখেরাতের কাজের দ্বারা দুনিয়া উপার্জন করা হবে।

৫১. জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় সম্পদকে নিজের সম্পদ মনে করা হবে।

৫২. আমানতের মালকে লুটের মাল মনে করা হবে।

৫৩. জাকাতকে জরিমানা মনে করা হবে।

৫৪. সমাজের সবচেয়ে নীচ ও নিকৃষ্ট ব্যক্তিকে লোকেরা নিজেদের নেতা বানাবে।

৫৫. মানুষ নিজের পিতার অবাধ্যতা করবে।

৫৬. এবং মায়ের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করবে।

৫৭. বন্ধুদের ক্ষতি করতে দ্বিধা করবে না।

৫৮. স্ত্রীর আনুগত্য করবে।

৫৯. বদকার লোকেরা মসজিদে শোরগোল করবে।

৬০. গায়িকা মহিলাদের সম্মান করা হবে। অর্থাৎ যে মহিলারা গানবাজনার পেশায় থাকবে তাদের সম্মানের চোখে দেখা হবে।

৬১. বাদ্যযন্ত্র এবং বাজনার বিভিন্ন উপকরণকে বিশেষ যত্ন করা হবে।

৬২. মদের দোকান বেড়ে যাবে।

৬৩. জুলুম-অত্যাচার করাকে গর্বের বিষয় মনে করা হবে।

৬৪. আদালতে ন্যায়বিচার বিক্রি হবে। অর্থাৎ বিচারপ্রার্থী ন্যায়ের ওপর হলেও পয়সা দিয়ে রায় নিজের পক্ষে নিতে হবে।

৬৫. পুলিশের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।

৬৬. পবিত্র কোরআন গানের সুরে তিলাওয়াত করা হবে। কোরআনকে বোঝার জন্য অথবা সাওয়াব লাভের উদ্দেশ্যে কিংবা দাওয়াতের উদ্দেশ্যে তিলাওয়াত করা হবে না।

৬৭. হিংস্র পশুর চামড়া ব্যবহার করা হবে।

৬৮. উম্মতের শেষ যুগের লোকেরা প্রথম যুগের লোকদের ওপর বিভিন্ন অপবাদ আরোপ করবে। তাদের সমালোচনা করবে এবং বলবে, তারা এই এই কথা ভুল বলেছে।

৬৯. হয়তো তোমাদের ওপর আল্লাহর পক্ষ থেকে লালবর্ণের তুফান আসবে।

৭০. অথবা ভূমিকম্প আসবে।

৭১. অথবা লোকদের চেহারা বিকৃত হবে।

৭২. অথবা আকাশ থেকে পাথর বর্ষিত হবে। কিংবা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে অন্য কোনো আজাব আসবে।

এসব আলামত নিয়ে একটু চিন্তা করলে দেখা যাবে আমাদের সমাজে প্রতিটি আলামত বিদ্যমান এবং সমাজে বর্তমানে যে অশান্তি বিরাজ করছে তা মূলত ওপরে বর্ণিত বদআমলগুলোরই ফল। আর এ কারণেই আমাদের ওপর বিপদাপদের পাহাড় ভেঙে পড়ছে।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়