ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪ ||  চৈত্র ১৪ ১৪৩০

জন্মশতবর্ষে সত্যজিৎ রায়, কিশোরগঞ্জে পূর্বপুরুষের শিকড়

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:৫৬, ২ মে ২০২১  

ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

২ মে, এমন একটি দিন, যা জন্ম-মৃত্যুর রাখিবন্ধনে আবদ্ধ করেছে দুই বিশ্ববরেণ্য প্রতিভা, সত্যজিৎ রায় ও লিওনার্দো দা ভিঞ্চিকে। ১৯২১ সালের ২ মে জন্ম নেন বিশ্ববিখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়। এবার তার জন্মশতবর্ষের ঐতিহাসিক স্মারকবর্ষ। তারও ৫০০ আগে ১৫১৯ সালের ২ মে মৃত্যুবরণ করেছিলেন ইতালীয় তথা ইউরোপীয় রেনেসাঁসের কালজয়ী চিত্রশিল্পী, অমর শিল্পনিদর্শন 'মোনালিসা' খ্যাত লিওনার্দো দা ভিঞ্চি।

প্রলম্বিত বৈশ্বিক মহামারিতে ২০২০ সালের মতোই ২০২১ সালের ২ মে এসেছে শঙ্কা, নিঃসঙ্গতা, লকডাউন ও করোনা বিস্তারের আবহে। জীবন ও জীবিকার সন্ধিক্ষণে কেটেছে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস পহেলা মে। তারপর দোসরা মে মনে করিয়ে দিল সত্যজিৎ আর দা ভিঞ্চিকে।

সত্যজিৎ রায় প্রকৃতই এক বহুমাত্রিক প্রতিভা। চলচ্চিত্র নির্মাতা, চিত্রনাট্যকার, শিল্প নির্দেশক, সঙ্গীত পরিচালক, লেখক, সাময়িকী সম্পাদক, এমন বহু পরিচয়ে ঋদ্ধিমান তিনি। বাংলার আলোকদায়িনী পরিবারগুলোর অন্যতম উপেন্দ্রকিশোর-সুকুমার রায়ের পারিবারিক বংশধারার উজ্জ্বলতম জাতক সত্যজিতের আদি শিকড় বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জের (তৎকালের বৃহত্তর ময়মনসিংহের) কটিয়াদী উপজেলার মসুয়া গ্রামে মিশে থাকলেও তার জন্ম ব্রিটিশ শাসিত ঔপনিবেশিক বাংলার কলকাতা শহরে। উত্তর কলকাতার ১০০ নম্বর গড়পাড় রোডে কাটে তার শৈশবের প্রথম পাঁচ বছর।

তার ঠাকুরদা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ছিলেন সুপরিচিত লেখক, চিত্রকর ও দার্শনিক। সেসময় তিনি ছিলেন ব্রাহ্ম আন্দোলনের অন্যতম একজন নেতা। তার নিজের একটি ছাপাখানাও ছিল।

সত্যজিতের বাবা ছিলেন অন্যতম সেরা শিশু সাহিত্যিক সুকুমার রায়। মা সুপ্রভা দেবী। মাত্র আড়াই বছর বয়সে তিনি বাবাকে হারান। ফলে তিনি উত্তর কলকাতা থেকে চলে আসেন মামার বাড়িতে দক্ষিণ কলকাতার বকুলবাগানে এবং বালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট স্কুলে ভর্তি হন। মূলত মায়ের সান্নিধ্যেই বড় হয়ে ওঠেন সত্যজিৎ রায়।

পরবর্তীতে প্রেসিডেন্সি কলেজ ও শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষে সত্যজিতের কর্মজীবনের শুরু একজন বাণিজ্যিক চিত্রকর হিসেবে। তবে, প্রথমে কলকাতায় ফরাসি চলচ্চিত্র নির্মাতা জঁ রনোয়ারের সাথে সাক্ষাৎ ও পরে লন্ডন শহরে সফররত অবস্থায় ইতালীয় নব্য বাস্তবতাবাদী ছবি ‘লাদ্রি দি বিচিক্লেত্তে’ দেখার পর তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণে উদ্বুদ্ধ হন এবং ছবি বানানোর জন্য পূর্ব অভিজ্ঞতাহীন কিছু কলাকুশলীকে একত্রিত করেন।

নিজের জমানো অর্থ খরচ করে প্রথম ছবি 'পথের পাঁচালি'র শ্যুটিং শুরু করেছিলেন সত্যজিৎ। আর্থিক সহায়তার অভাবে ছবিটির দৃশ্যগ্রহণ চলে দীর্ঘ তিনবছর ধরে। পরে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ১৯৫৫ সালে ছবি তৈরির কাজ শেষ করেন তিনি এবং সেই বছরই ছবিটি মুক্তি পায়।

মুক্তি পাওয়ার পর পরই ছবিটি দর্শক-সমালোচকের অকুণ্ঠ প্রশংসা লাভ করে ও বহু পুরস্কার জিতে নেয় ও দেশে বিদেশে ছবিটি বিশেষভাবে সমাদৃত হয়। মানুষের জীবন নিয়ে তার সংবেদনশীলতাকে তিনি ছবিতে ভাষা দিয়েছেন। ক্যামেরা দিয়ে তিনি জীবনের নানা ছবি এঁকেছেন।

সত্যজিৎ রায় মোট ৩২টি কাহিনি চিত্র এবং চারটি তথ্য চিত্র নির্মাণ করেন ও নানা পুরস্কারে ভূষিত হন। জীবনের শেষ প্রান্তে চলচ্চিত্রের সর্বোচ্চ সম্মান অস্কার পান তিনি ১৯৯২ সালে।

শুধু চলচ্চিত্র নির্মাণই নয়, অনেক ছোট গল্প ও উপন্যাস লিখেছেন তিনি। তার সাহিত্যকর্মে শিশু কিশোরদের জন্য একটা বিশেষ জায়গা ছিল। বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় দুটি চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। একটি হল গোয়েন্দা ফেলুদা, অন্যটি বিজ্ঞানী প্রফেসর শঙ্কু।

তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ একজন মানুষ এবং তার সেই সম্পূর্ণতাকে পাওয়া যায় তাঁর ছবিগুলোতে। সব বিষয়ে তার অসামান্য একটা দখল ছিল। তিনি মিউজিক জানতেন, এডিটিং জানতেন, স্ক্রিপটিং জানতেন, ডিরেকশন তো জানতেনই। ফটোগ্রাফি, সিনেমাটোগ্রাফি জানতেন। ৭১ বছর বয়সে ২৩ এপ্রিল ১৯৯২ সালে তিনি কলকাতায় পরলোকগমন করেন।

আরও পড়ুন
সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়