ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

জামায়াতের শীর্ষ নেতার ইন্ধনে মণ্ডপে কোরআন শরিফ, ধরা পড়েছে মূল অভিযুক্ত

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৫:১৪, ২০ অক্টোবর ২০২১  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

যেখান থেকে সাম্প্রদায়িক এই সহিংসতার শুরু সেই নানুয়ার দিঘির পাড়ের মণ্ডপে কিভাবে উত্তেজনার শুরু এবং মূল মণ্ডপের বাইরে পূজার থিম হিসেবে রাখা হনুমানের মূর্তির ওপর পবিত্র কোরআন শরিফ কী করে এলো, সে বিষয়ে সরেজমিন অনুসন্ধান চালিয়েছে পাওয়া গেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা সৃষ্টির পরিকল্পনায় সরাসরি যুক্ত অন্তত তিনজনকে এরই মধ্যে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তদন্তসংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মণ্ডপে যিনি ভোররাতের দিকে কোরআন শরিফ রেখেছেন তাকে চিহ্নিত করা গেছে। মণ্ডপটিতে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকলেও আশপাশের কয়েকটি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে মূল অভিযুক্তের ছবি। যেকোনো সময়ে তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে আশাবাদী পুলিশ কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, জামায়াতের একজন শীর্ষ নেতার সাথে মূল আসামির ভালো সম্পর্ক ছিল। এ ঘটনার আগের একদিন আগেও ওই নেতার সাথে তার যোগাযোগ হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে এখনই ওই নেতার পরিচয় প্রকাশ করছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

মন্দিরসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, এলাকাবাসী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগের রাত আড়াইটা পর্যন্ত মন্দিরে পূজাসংশ্লিষ্টদের উপস্থিতি ছিল। এরপর বুধবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে দুজন নারী ভক্ত মণ্ডপে এসে হনুমানের মূর্তিতে প্রথম কোরআন শরিফটি দেখতে পান।

রাত আড়াইটা থেকে ভোর সাড়ে ৬টার মধ্যে স্থানীয় এক ব্যক্তি কোরআন শরিফটি রেখে যান মণ্ডপে। এ সময় হনুমানের হাতের গদাটি সরিয়ে নেন তিনি। গদা হাতে তার চলে যাওয়ার দৃশ্যও ধরা পড়েছে ওই এলাকারই কয়েকটি সিসিটিভি ক্যামেরায়।

মঙ্গলবার রাত আড়াইটা থেকে পরের চার ঘণ্টায় মণ্ডপ ছিল জনশূন্য। সে সময় পাহারায় থাকা মো. শাহিন মিয়া এখন পুলিশের হেফাজতে আছে।

নৈশপ্রহরী শাহিনকে নিয়োগ দেয়া হয় আগের বৃহস্পতিবার থেকে। মণ্ডপে তখন থেকেই প্রতিমা ছিল। শাহিন অ্যালার্ট সিকিউরিটিজ অ্যান্ড অ্যাটেনডেন্ট সার্ভিসেস নামের নিরাপত্তাসেবা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। ৪৫ বছর বয়স্ক শাহিনের বাসা নগরীর সংরাইশ এলাকায়।

অ্যালার্ট সিকিউরিটিজ অ্যান্ড অ্যাটেনডেন্ট সার্ভিসেসের ব্যবস্থাপক শাহাজাদা ইকরাম রিপন বলেন, ‘বছর দুয়েক আগে শাহিন আমাদের কোম্পানিতে চাকরি নেয়। পরে আবার চাকরি ছেড়ে দেয়। তবে মাস দেড়েক আগে সে আবার আমাদের কোম্পানিতে যোগ দেয়। মাঝে সে কোথায় ছিল আমরা জানি না।’

শাহিনের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিএনপির মিছিল মিটিংয়ে দেখা যেত তাকে। এর বেশি কিছু আমি জানি না।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শাহিন বিএনপির মিছিলের একজন সক্রিয়কর্মী। কুমিল্লা বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে তার নিয়মিত যোগাযোগের তথ্যও পাওয়া যায়। এমনকি সরকারবিরোধী বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচীতেও তার উপস্থিতির তথ্য রয়েছে।

ওসি আনওয়ারুল আজিম মণ্ডপ থেকে কোরআন উদ্ধারের সময় সেটি ফেসবুকে লাইভ করেন ফয়েজ নামের এক যুবক। সেই লাইভের পরেই উত্তেজিত মানুষ জড়ো হন ঘটনাস্থলে, শুরু হয় সহিংসতা। এই ফয়েজকেও আটক করেছে পুলিশ। তারও জামায়াত সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা

এদিকে তদন্ত সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, মণ্ডপটিতে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকলেও আশপাশের কয়েকটি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে মূল অভিযুক্তের ছবি। যেকোনো সময়ে তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে আশাবাদী পুলিশ কর্মকর্তারা। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য থেকে বোঝা যাচ্ছে- সাম্প্রদায়িক সহিংসতার উদ্দেশ্যেই এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে।

শনাক্ত করা মূল আসামিকে আটক করতে পারলে পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে। কারণ তিনিই সরাসরি মণ্ডপে কোরআন রেখেছিলেন। তথ্য রয়েছে জামায়াতের একজন শীর্ষ নেতার সাথে মূল আসামির অত্যন্ত ভালো সম্পর্ক রয়েছে। এ ঘটনার আগের দিনও ওই নেতার সাথে তার যোগাযোগ হয়েছে। তাকে ধরতে আমাদের অভিযান চলছে।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়