ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

তকদির কী ও কেন?

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:৪৮, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩  

তকদির কী ও কেন?

তকদির কী ও কেন?

তকদির একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ নিয়তি, ভাগ্য, নির্ধারণ করা ইত্যাদি। পৃথিবীর সব সৃষ্টির ভাগ্য নির্ধারণ আল্লাহতায়ালা আগেই করে রেখেছেন। এর নামই তকদির। অর্থাৎ সৃষ্টিকুলের কার ভাগ্যে কখন কী ঘটবে, উপকার-অপকার কী হবে কিংবা ভালোমন্দ, লাভক্ষতি কীভাবে ঘটবে সবই তিনি তাঁর সৃষ্টির আগেই নির্ধারণ করে রেখেছেন। এ বিশ্বের ভালোমন্দ, আনন্দ-কষ্ট যা কিছু ঘটে সবই আল্লাহর জ্ঞান ও ইচ্ছা অনুসারে সংঘটিত হয়। তকদিরের বাইরে আমাদের কারও কোনো কিছুই নেই।

আল্লাহ বলেন, ‘আমি সবকিছু সৃষ্টি করেছি নির্ধারিত পরিমাণে।’ (সুরা কামার, আয়াত ৫৪) রসুল (সা.) বলেন, প্রতিটি বিষয়ই তকদির অনুযায়ী সংঘটিত হয়। এমনকি অক্ষমতা ও বুদ্ধিমত্তাও। (মুসলিম,   রিয়াদুস সালেহিন)

একটি ছোট্ট উদাহরণ দিই। একজন ডাক্তার যদি কোথাও লিখে রাখেন যে অমুক রোগীটি ওই দিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে মারা যাবে, তাহলে তার লিখে রাখার কারণেই কি রোগীর মৃত্যু ঘটল? নিশ্চয়ই না। ঠিক তেমনি আল্লাহতায়ালা মানুষের অবস্থা তার সৃষ্টি থেকে জানেন বলে সবকিছুই লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। এই লিপিবদ্ধকরণ তার কাজের কারণে নয়, বরং কাজের কারণ হলো তার ইচ্ছা। ফলে ব্যক্তি তার কাজের জন্য দায়ী তকদিরের জন্য নয়। আল্লাহ বলেন, ‘অবশ্যই কেয়ামতের সব জ্ঞান একমাত্র আল্লাহর কাছেই আছে, তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন, শুক্রকীটের মধ্যে যা কিছু মজুদ রয়েছে তা তিনিই জানেন, কোনো মানুষই বলতে পারে না আগামীকাল সে কী অর্জন করবে, না কেউ এ কথা বলতে পারে যে কোন জমিনে সে মৃত্যুবরণ করবে, নিঃসন্দেহে এগুলো একমাত্র আল্লাহই জানেন। তিনি সর্ববিষয়ে অবহিত ও সর্বজ্ঞ।’ (সুরা লোকমান, আয়াত ৩৪)

তকদিরের প্রতি বিশ্বাস করা ইমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তকদিরের ওপর সন্তুষ্ট থাকা ফরজ। তকদিরে বিশ্বাসের অর্থ হলো আল্লাহর ব্যাপারে দৃঢ়বিশ্বাস রাখা যে তিনি সৃষ্টির শুরু থেকে সবকিছুর ব্যাপারে ওয়াকিবহাল। তিনি সবকিছু লৌহে মাহফুজে সংরক্ষিত করে রেখেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা সৃষ্টিকুল সৃষ্টির ৫০ হাজার বছর আগে সৃষ্টিকুলের তকদির লিখে রেখেছেন।’

(মুসলিম) আল্লাহ প্রথম কলম সৃষ্টি করেছেন। এরপর কলমকে তিনি আদেশ করলেন, লেখো। কলম বলল, হে রব! কী লিখব? আল্লাহ বললেন, কেয়ামত পর্যন্ত প্রত্যেক জিনিসের তকদির লেখো। (আবু দাউদ) কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘তুমি কি জানো না, আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে আল্লাহ তার সম্পর্কে সম্যক অবগত রয়েছেন, এর সবকিছুই একটি কিতাবে সংরক্ষিত রয়েছে এবং এ প্রক্রিয়াটা আল্লাহর কাছে অবশ্যই সহজ একটি কাজ।’ (সুরা হজ,  আয়াত ৭০)

তকদিরে অবিশ্বাসীদের সম্পর্কে রসুল (সা.) লানত করেছেন। তিনি বলেন, আল্লাহ বলেছেন, যদি কেউ আমার নির্ধারিত তকদিরের ওপর সন্তুষ্ট না থাকে এবং বিপদাপদে ধৈর্য ধারণ না করে তাহলে সে যেন আমি ছাড়া অন্য কাউকে রব বানিয়ে নিল।’ (বায়হাকি) হাদিসে আরও এসেছে।  জনৈক সাহাবি আরজ করলেন, ইয়া রসুলুল্লাহ! আমরা যে ঝাড়ফুঁক করে থাকি, চিকিৎসায় ওষুধ ব্যবহার করে থাকি কিংবা আত্মরক্ষার জন্য যেসব উপায় অবলম্বন করে থাকি তা কি তকদিরের কোনো কিছু পরিবর্তন করতে পারে? রসুল (সা.) এর উত্তরে বললেন, তোমাদের এসব চেষ্টাও তকদিরের অন্তর্ভুক্ত। (বায়হাকি) আমাদের সবাইকে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতে হবে আল্লাহ ভাগ্য নির্ধারণ করেছেন, একমাত্র তিনিই তা পরিবর্তন করারও ক্ষমতা রাখেন। তকদির বা ভাগ্য মানুষের অজানা। একমাত্র নেক আমল দ্বারা, বাবা-মার দোয়া ও দানসদকা করার মাধ্যমে আল্লাহ ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারেন। সুতরাং আমাদের উচিত হলো আল্লাহর রহমত চাওয়া। তাঁর ওপর ভরসা রাখা। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমেই তকদিরের পরিবর্তন সম্ভব। সুতরাং আল্লাহ আমাদের সবাইকে বেশি বেশি নেক আমল করার তৌফিক দান করুন।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়