ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

তারেকের অপকর্মের আমলনামা

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:১০, ৩১ মে ২০২৩  

তারেক রহমান

তারেক রহমান

তারেক রহমান। বাংলাদেশের ইতিহাসে যাকে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের বরপুত্র বা রাজপুত্র বলা হয়। আর সেই দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের রাজপ্রাসাদ হচ্ছে তারেকের নিয়ন্ত্রণাধীন হাওয়া ভবন। তারেকের সকল অপকর্মের সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে হাওয়া ভবন. আসুন জেনে নেই তারেকের অসংখ্য অপকর্মের তথ্য।

১) ২১শে আগষ্ট গ্রেনেড হামলা: উইকিলিকসের গোপন অনুসন্ধানের নথিতে উঠে এসেছে খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের জড়িত থাকার প্রমাণ। তথ্য অনুযায়ী, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় হুজি নেতাদের সঙ্গে তারেকের একাধিক বৈঠক ও সাক্ষাৎ হয়। সর্বশেষ সাক্ষাতে তারেক তাদের এ্যাকশান ও বিস্ফোরণে যাওয়ার জন্য এগিয়ে যেতে বলেন।

উইকিলিকসের ওই গোপন নথি বলছে, তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বেগম জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিস চৌধুরী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, জামায়াত-ই-ইসলামি মহাসচিব, এনএসআই মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. আবদুর রহিম এবং ডিজিএফআই পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রেজাকুল হায়দার চৌধুরী ছিলেন। যে বৈঠকে রাজধানীর বনানী হাওয়া ভবনে অনুষ্ঠিত হয়।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় চক্রান্তকারীদের মধ্যে প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তিও ছিলেন। তারা হচ্ছেন, বিএনপি ও জামায়াত জোট এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কিছু কর্মকর্তা, পুলিশ, জেনারেল অফ ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই), ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টিলিজেন সিই (এনএসআই) এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় (পিএমও)।

অনুসন্ধান তথ্য অনুযায়ী, নিষিদ্ধ জঙ্গি গ্রুপ হারকাতুল জিহাদ (হুজি) নেতাদের সঙ্গে খালেদা জিয়া ও তারেকের বৈঠক হয়। প্রথম সভায় ২০০৪ সালের প্রথম দিকে, হুজি নেতারা নির্বাহীদের পরিকল্পনা ছিল শেখ হাসিনা ও অন্যান্য শীর্ষ নেতাদের হত্যা করা। এতে তারেক রহমান হুজি নেতারা নির্বাহীদের সর্বসম্মত সমর্থনকারীকে আশ্বাস দেন। ২১ আগস্ট হামলার তিন দিন আগে ১৮ আগস্ট হুজি নেতারা বাবরকে নিয়ে মিটিং করেন সাবেক বিএনপির উপ-পরিচালক আবদুস সালাম পিন্টুর বাসভবনে।

১৪ আগস্ট ২০০৪- হাওয়া ভবনে বৈঠক উপস্থিত ছিল তারেক রহমান বিএনপি সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফজ্জামান বাবর বঙ্গবন্ধুর খুনি মেজর নুর জামায়াতে ইসলামের সাধারণ সম্পাদক আলী আহসান মুজাহিদ, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী, বিএনপি সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, হরকাতুল জিহাদের নেতা মুফতি হান্নান, তাজউদ্দীন।

উইকিলিকসের নথিতে পুরো ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে এভাবে-

আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে হত্যার নির্দেশ দিয়ে তারেক রহমান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সাহায্য করবে বলে হামলাকারীদের নিশ্চয়তা দেন।

১৬ আগস্ট মিন্টু রোডে বাবরের বাসায় বৈঠক করে পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা তৈরি করা হয় এবং আক্রমনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

১৮ আগস্ট আবদুস সালাম পিন্টুর বাসায় বৈঠক হয়। পিন্টুর ভাই তাজউদ্দীন, খালেদা জিয়ার ভাগ্নে ডিউক ও এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। ওইদিন হরকাতুল জিহাদের কাছে ১২টি গ্রেনেড হস্তান্তর করে বাবর।

২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে দলীয় কার্যালয়ের সামনে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী জনসভায় হরকাতুল জিহাদের গ্রেনেড হামলা করে। নিহত হন দলের ২৬ জন নেতা-কর্মী। পুলিশের সহায়তায় পালিয়ে যায় হামলাকারীরা। আহতদের হাসপাতালে নিতে বাধা দেয় পুলিশ। ঘটনাস্থলে সকল প্রমাণ নিশ্চিহ্ন করতে পানি ছোড়া শুরু করে পুলিশ।

তারপর আব্দুস সালাম পিন্টুর ভাই, হামলার মুল হোতা তাজউদ্দীন কে গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় পাকিস্তান পাঠিয়ে দেয় তারেক রহমান ও খালেদা জিয়ার ভাগ্নে ডিউক। হানিফ পরিবহনের মালিক মোহাম্মদ হানিফ ও বিএনপির ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম আরিফ সভায় উপস্থিত ছিলেন। বাবর এবং পিন্টু জঙ্গি নেতাদের আশ্বাস দেন যে সমস্ত প্রশাসনিক সহায়তা দিবেন।

এই হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেডগুলি পাকিস্তান থেকে চোরাচালান করা হয়েছিল। ডিন, সালাম পিন্টুর ভাই, গ্রেনেড সরবরাহ করেছিলেন, যা নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ২০ আগস্ট পিন্টুর ধানমন্ডি বাসভবন থেকে মুফতি হান্নানের বাড্ডা অফিসে। তারপর তৎকালীন পুলিশ কমিশনার আশরাফুল হুদা আওয়ামী লীগের সভা ঘটনাস্থলে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা না নিয়ে ঘটনার দিন তড়িঘড়ি বিদেশে চলে যান।

উইকিলিকসের প্রতিবেদনের লিংক:

২) এফবিআইর তালিকায় তারেক বিপজ্জনক ব্যক্তি : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানকে বিপজ্জনক ব্যক্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআই (ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন)। বাংলাদেশের তৃতীয় ব্যক্তি তারেক রহমান যাকে এফবিআই বিপজ্জনক ব্যক্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। এর আগে শীর্ষ জঙ্গী নেতা শায়খ আব্দুর রহমান ও বাংলাভাইকে এফবিআই বিপজ্জনক ব্যক্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছিল। ২০০৩ সালে শায়খ রহমান ও বাংলা ভাই সম্পর্কে বাংলাদেশকে বিশেষ বার্তাও দিয়েছিল এফবিআই। কিন্তু সেই বার্তা আমলে নেয়নি তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। তার পরেই দেশে জঙ্গীবাদে ভয়াবহ উত্থান ঘটে।

রাজনীতিতে নামার পর থেকেই নজরদারিতে থাকা তারেক রহমান শেষ পর্যন্ত এফবিআইয়ের বিপজ্জনক ব্যক্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত হলেন। তার সম্পর্কে সতর্ক থাকতে তাকে আশ্রয়দানকারী দেশ যুক্তরাজ্যকে বিশেষভাবে সতর্ক করা হয়েছে এফবিআইয়ের তরফ থেকে। তারেক রহমান যুক্তরাজ্যের জন্যও বিপজ্জনক হতে পারে বলে সেই বার্তায় বলা হয়েছে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে তারেক রহমান বাংলাদেশে বড় ধরনের সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটাতে পারে বলে এফবিআই আভাস দিয়েছে। সরকারের একটি উচ্চ পর্যায়ের সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআই যুক্তরাজ্য সরকারের কাছে বিএনপি নেতা তারেক রহমান সম্পর্কে একটি বিশেষ গোপন বার্তা পাঠিয়েছে। সেই বার্তায় যুক্তরাজ্যকে তারেক রহমান সম্পর্কে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। দেশটিতে তারেক রহমান রাজনৈতিক আশ্রয়ে রয়েছেন।

সতর্ক থাকার কারণ হিসেবে এফবিআই বলেছে, দীর্ঘদিন ধরেই তারা বাংলাদেশের তারেক রহমানের ওপর নজর রাখছিল। নানা কারণেই তার ওপর নজরদারি অব্যাহত আছে। দীর্ঘ নজরদারির পর অন্তত দশ বছর আগে তারেক রহমান বিপজ্জনক ব্যক্তি হিসেবে তাদের তদন্তে ধরা পড়ে। সেই হিসাব অনুযায়ী তারেক রহমান এফবিআইয়ের বিপজ্জনক ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত হয়। তাকে দশ বছর আগেই বিপজ্জনক ব্যক্তি হিসেবে এফবিআই চিহ্নিত করেছে। দিন যত যাচ্ছে তারেক রহমান আরও বিপজ্জনক ব্যক্তি হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছেন। তারেক রহমানের নাম এফবিআইয়ের লাল তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের নামে যুক্ত হয়েছে। বিশ্বের যে কোন দেশেই লাল তালিকাভুক্ত ব্যক্তিরা থাকেন, তাদের ওপর এফবিআই নজরদারি করে থাকে। শুধু এফবিআই নয়, বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাদের ওপর তীক্ষ্ণ নজরদারি করে থাকে। অন্যান্য দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও এ সম্পর্কে তথ্য আদান প্রদান করে থাকে।

৩) দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলা : তারেক রহমানের মদদে ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩ জেলায় সিরিজ বোমা হামলা করে জেএমবি। তাতে দেশে ইসলামী শাসনব্যবস্থা কায়েম করতে বলা হয়। অন্যথায় বিচারকদের হত্যার হুমকি দেয়া হয়। তারই ধারাবাহিকতায় তারেক রহমানের প্ররোচনায় জেএমবি বরিশালে দুই বিচারককে বোমা মেরে হত্যা করে। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে সারাদেশে ৯৮ হামলার ঘটনা ঘটে। এসব মামলায় নিহত হন আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া, বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক ও পরবর্তীতে বাংলাদেশে ব্রিটেনের হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর হামলা হয়। আনোয়ার চৌধুরী মারাত্মক আহত হন। জেএমবির এসব হামলা মূলত তারেক ও বিএনপি সরকারের প্রত্যক্ষ মদদেই হয়েছিল।

৪) দশ ট্রাক অস্ত্রের চালান: সন্ত্রাসবাদে বিশ্বাসী বিএনপির নৈরাজ্যের প্রমাণ পাওয়া যায় ২০০৪ সালের পহেলা এপ্রিলে বাংলার মাটিতে ১০ ট্রাক অস্ত্র আনার অপচেষ্টার মধ্যে দিয়ে। বিএনপি জামায়াত শাসনামলের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর লুতফুজ্জামান বাবরের প্রতিনিধিত্বে এই চালান আসে পাকিস্তান থেকে। এই দশ ট্রাক অস্ত্র চালানের সাথে জড়িত রয়েছে খালেদা জিয়ার কুপুত্র তারেক রহমান যিনি বর্তমানে পলাতক আসামী। তারা দুজনেই (লুতফুজ্জামান বাবরের ও তারেক রহমান) ছিলেন তৎকালীন হাওয়া ভবনের নাটের গুরু। তারেকের নির্দেশ ও পরিকল্পনায় এবং লুৎফুজ্জামান বাবরের প্রত্যক্ষ সহায়তায় এই বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী উলফার জন্য আনা হয়েছিল।

৫) বসুন্ধরা গ্রূপের প্রোকৌশলী সাব্বির হত্যা : তারেকের পরোক্ষ মদদে ২০০৬ সালের ৪ জুলাই বসুন্ধরা গ্রুপের প্রকৌশলী সাব্বির খুন করা হয়। পরবর্তীতে সাব্বির হত্যা মামলায় অভিযুক্ত আসামীদের বাঁচাতে এবং এই হত্যা মামলা ধামাচাপা দিতে ২১ কোটি টাকা ঘুষ গ্রহণ করেছিলো তারেক ও তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাবর।

৬) বিদ্যুৎ খাতে তারেকের দুর্নীতি: বিএনপি সরকারের আমলে টঙ্গিতে সবেধন ৮০ মেগাওয়াট যে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছিল সেখানেও বিপুল পরিমাণ টাকা লুটপাট হয়েছে। নিম্নমানের কাজ ও দুর্বল মেশিনপত্রের কারণে কেন্দ্রটি খালেদা জিয়া উদ্বোধনের মাত্র ৬ ঘণ্টা পর বন্ধ হয়ে যায়। এই কেন্দ্রটি গত এক বছরে ৮১ বার বন্ধ হয়েছে এবং এখনও বন্ধ রয়েছে। এছাড়া গত পাঁচ বছরে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ওভারহোলিং ও রিপেয়ারিং বাবদ প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেছে। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, মূলত মেরামত ও ওভারহোলিংয়ের নামে এই টাকা লুটপাট করা হয়েছে। খুলনা শিকলবাহা কেন্দ্র মেরামতের নামে গত কয়েক বছরে প্রায় হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। দুটি কেন্দ্রে গত কয়েক বছরে ৭৭১ কোটি টাকার মেরামত কাজ হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তারেক রহমানের তত্ত্বাবধানে শিকলবাহা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ২৪ কোটি টাকা খরচ করে দুই দফা ওভারহোলিং করা হলেও ১ মেগাওয়াটও বিদ্যুৎ বাড়েনি। বরং ১৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কমেছে।

তারেকের হাওয়া ভবনের শক্তিশালী সিন্ডিকেটের কারণে আরইবি ও পিডিবি বৈদ্যুতিক পোল ক্রয়ের নামে গত পাঁচ বছরে প্রায় ১২শ’ কোটি টাকা অতিরিক্ত গচ্চা দিয়েছে। সর্বনিম্ন দরের চেয়েও বেশি দামে ক্রয় করা হয়েছিল ওই সব পোল। অভিযোগ রয়েছে, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও প্রভাবশালীদের বলয়ে প্রধানমন্ত্রীর জ্যেষ্ঠ পুত্র তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ বনু্ল গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট পুরো এই ব্যবসাটির নিয়ন্ত্রণে ছিল। এই সিন্ডিকেটের কারণে এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকটি বড় বড় কোম্পানি কাজ না পেয়ে গুটিয়ে ফেলতে হয়েছে। বেকার হয়ে গেছে কয়েক হাজার লোক। বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যর্থ হয়ে জোট সরকার গত পাঁচ বছরে বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনতে গিয়ে অতিরিক্ত ১ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা গচ্চা দিয়েছে। রাজধানীতে ডেসার বিদ্যুৎ উপসঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার সংস্কার প্রকল্পে বড় ধরনের দুর্নীতি অভিযোগ রয়েছে। বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার, কনডাক্টর, সাবস্টেশন, খুটিসহ সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি সংরক্ষণ ও পুনর্বাসনের জন্য ২৪০ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করেও এই খাতে ব্যয় দেখানো হয়েছে ২৫৯ কোটি ৩৭ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। শুধু একটি খাতে (বৈদ্যুতিক লাইন স্থাপন) অননুমোদিত অতিরিক্ত ব্যয় করা হয়েছে ২৮ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। অন্য একটি খাতে ৪৮ কোটি টাকার কাজে ব্যয় দেখানো হয় ৭৬ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। অভিযোগে বলা হয়, প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ৩৫০টি ট্রান্সফরমার ক্রয়ের ক্ষেত্রে টেকনিক্যাল রিসপনসিভ ও সর্বনিম্ন দরদাতাসহ দরপত্রে অংশগ্রহণকারী সব সরবরাহকারীর মধ্যে বিদ্যুৎ বিভাগের অনুমোদনক্রমে ১ হাজার ৩৫০টি ট্রান্সফরমার সরবরাহের কার্যাদেশ বণ্টন করা হয়, যা প্রতিযোগিতামূলক দর প্রাপ্তির জন্য সহায়ক ছিল না। ট্রান্সফরমার সংরক্ষণ খাতে ৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকার স্থলে ৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা খরচ করা হয়।

তারেকের দুর্নীতির কারণে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতাধীন কাপাই ঘাটের ইজারা বাবদ ১ কোটি ৩২ লাখ টাকার রাজস্ব হারিয়েছে পিডিবি। এছাড়া পল্লী বিদ্যুৎ বোর্ডের ১২টি প্রকল্পে অতিরিক্ত ব্যয় দেখিয়ে প্রায় ২৭৩ কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। দেশের ৮৮টি উপজেলায় এই প্রকল্পের কাজ ছিল। রাজশাহী, রংপুর, যশোর, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও খুলনা অঞ্চলে প্রকল্পটির অধীনে বিদ্যুতের লাইন নির্মাণ, লাইন নবায়ন, বিদ্যুতের খুটি, ট্রান্সফরমার স্থাপন, অফিস ভবন ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক ভবন নির্মাণে এই টাকা লোপাট করা হয়েছে। পিডিবি’র আওতায় ১ হাজার ৩১১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুৎ প্রকল্পে প্রায় ১শ’ কোটি টাকা দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। যন্ত্রপাতি ক্রয়, প্রশাসনিক ব্যয় ও ভৌত অবকাঠামোসহ বিভিন্ন খাতে বেআইনিভাবে অতিরিক্ত ব্যয় দেখিয়ে এই দুর্নীতি করা হয়। নির্মিত প্রকল্পটির প্রাথমিক প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ৫৪৮ কোটি টাকা। দ্বিতীয় পর্যায়ে ওই প্রকল্প সমপ্রসারণ করে ১ হাজার ৩১১ কোটি টাকার ব্যয় পুনর্নির্ধারণ করা হয়। প্রকল্পে ৪৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৫ হাজার ৫৬৪ মেট্রিক টন যন্ত্রপাতি ও মালামাল আমদানির অনুমতি থাকলেও বিদ্যুৎ বিভাগ ৪৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৬ হাজার ৩২১ মেট্রিক টন যন্ত্রপাতি আমদানি করে। বাড়তি ৭৫৭ মেট্রিক টন যন্ত্রপাতি আমদানির কোন অনুমতি ছিল না। ফেঞ্চুগঞ্জ ৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পে টেন্ডার মূল্যায়নে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। সিরাজগঞ্জ ৪৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে সর্বনিম্ন দরদাতাকে না দিয়ে বেশি দাম দিয়ে একটি বিদেশী কোম্পানিকে কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। বাঘাবাড়ি ১১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পটি টেনে বড় করে লুটপাট করার অভিযোগ রয়েছে।

১৯৯৬-২০০১ সাল পর্বে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের নেয়া এই প্রকল্পটির সিংহভাগ কাজ ২০০১ সালে শেষ হয়ে গিয়েছিল। অক্টোবরে ক্ষমতায় এসে চারদলীয় জোট সরকার প্রকল্পটি টেনে বড় করে। এর মাধ্যমে কমপক্ষে ৭০ কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে সরকারের পরিকল্পনা কমিশনের বাস-বায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ। ১৯৯৯ সালে ১৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে নেয়া প্রকল্পের সিংহভাগ কাজ শেষ হয়ে যায় ২০০১ সালে। জোট সরকার ক্ষমতায় এসে বুস্টার (গ্যাসের চাপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র) নির্মাণের নামে প্রকল্প সংশোধন করে সরকারি কোষাগার থেকে আরও ১০০ কোটি টাকা বেশি তোলা হয়। গ্যাস বুস্টার নির্মাণে খরচ করা হয় মাত্র ৩২ কোটি টাকা। বিদ্যুতের গ্রাহক বিল আদায়ে ডেসার ২ হাজার কোটি টাকার কোন হিসাব নেই। জোট সরকারের শেষ দিকে বিদ্যুৎ বিতরণ প্রকল্পের জন্য ২ হাজার কোটি টাকাসহ মোট ১৬টি প্রকল্পের জন্য ২ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা খরচের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে ১০ লাখ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য ৩৩৫ কোটি টাকা। বিদ্যুৎ বিতরণ কার্যক্রম সম্প্রসারণের জন্য ১ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা।

এছাড়া ৪৩৫ কোটি টাকা ব্যয় সংবলিত ডেভেলপমেন্ট অব নিউ ১৩২/৩৩ কেভি এন্ড ৩৩/১১ কেভি সাবস্টেশন আন্ডার ডেসা প্রকল্প। ৩৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে তিন সঞ্চালন লাইন প্রকল্প, ২৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে মেঘনা ঘাট/আমিনবাজার ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন প্রকল্প, ৪০০ কোটি টাকার প্ল্যানিং এন্ড এক্সপান্ডিং ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম ইন গুলশান প্রকল্প অন্যতম।

৭) ঘুষের টাকা সিঙ্গাপুরে পাচার: টঙ্গীর বিসিক শিল্প এলাকায় একটি ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কার্যক্রম পরিচালনা করে ‘নির্মাণ কনস্ট্রাকশন’ কোম্পানির কাছ থেকে তারেক রহমান ও গিয়াসউদ্দিন আল মামুন ২০০৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০০৭ সালের ৩১ মে পর্যন্ত ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার ৮৪৩ টাকা টাকা নিয়ে তা সিঙ্গাপুরে পাচার করেন।

৮) সৌদিতে অর্থ পাচার: সৌদি আরবে তারেক জিয়া ১২০০ কোটি টাকারও বেশি অর্থ পাচার করেছে। এই অর্থ থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ জঙ্গী ও মৌলবাদীদের পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যবহৃত হতো।

এছাড়া সৌদি আরবে দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে গ্রেফতারকৃত প্রিন্সদের জবানীতে বেরিয়ে এসেছিলো বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তার দুই পুত্র তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর নাম।

জিঙ্গাসাবাদে বিশ্বের অন্যতম ধনী, সৌদি প্রিন্স আল-ওয়ালিদ বিন তালাল বলেছেন, তাঁর সম্পদের অর্ধেকই বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদদের অবৈধ অর্থ। নিরাপদ ভেবে তাঁরা তাঁর কাছে বিনিয়োগের জন্য দিয়েছেন। পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ, বেনজির ভুট্টোর স্বামী আসিফ আলী জারদারি, নওয়াজ শরিফ, বাংলাদেশে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, তাঁর ছেলে তারেক জিয়া, তাঁর ভাই শামীম ইস্কান্দার তাঁর কাছে বিনিয়োগের জন্য অর্থ দিয়েছেন। তিন মাস অন্তর অন্তর বেগম জিয়া ও তাঁর ছেলে তারেক রহমানকেও বিনিয়োগের লভ্যাংশের টাকা দেওয়া হয়।

আল-ওয়ালিদ বিন তালাল ছাড়াও পেট্রোক্যামিকেল ব্যবসায়ী ইয়াহিয়া লতিফের কাছেও জিয়া পরিবারের বিনিয়োগ ১০ কোটি রিয়াল বা ২৩০ কোটি টাকা। এই টাকারও লভ্যাংশ বেগম জিয়া ৩ মাস অন্তর অন্তর সৌদি আরব থেকেই গ্রহণ করতেন। এছাড়া সৌদির সদ্য পদচ্যুত মন্ত্রী আদেল বিন ফিকাহর কাছে জিয়া পরিবারের সদস্যরা বিনিয়োগের জন্য অর্থ দিয়েছেন।সৌদি আরবে জিয়া পরিবারের গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ প্রায় ৫০০ কোটি টাকা বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। এ কারণেই সৌদি আরবে বেগম জিয়া আলাদা মর্যাদা পান। বেগম জিয়ার লগ্নী করা অর্থের দেখভাল করেন তাঁর একজন সাবেক একান্ত সচিব।

৯) জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি : ১৯৯১-৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সোনালী ব্যাংকের রমনা শাখায় খালেদা জিয়ার পক্ষে ‘প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিল’ নামে একটি সঞ্চয়ী হিসাব খোলা হয়, যার চলতি হিসাব নম্বর ৫৪১৬। ওই তহবিলে ১৯৯১ সালের ৯ জুন ইউনাইটেড সৌদি কমার্শিয়াল ব্যাংকের‎‎‎ ‎‎১৫৩৩৬৭৯৭০ ডিডি মূলে ১২ লাখ ৫৫ হাজার ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় ৪ কোটি ৪৪ লাখ ৮১ হাজার ২১৬ টাকা অনুদান হিসেবে জমা হয়। এই অর্থ

এতিমদের কল্যাণে ব্যয় করার জন্যই প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে বাংলাদেশকে অনুদান দেয়া হয়, কোনো ব্যক্তিকে নয়।

* কিন্তু ১৯৯১ সালের ৯ জুন থেকে ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত প্রায় ২ বছর বেগম খালেদা জিয়া এই অর্থ কোনো এতিমখানায় প্রদান করেননি কেন?

* খালেদা জিয়া কি বাংলাদেশে সে সময় কোনো এতিমখানা খুঁজে পাননি?

* তাহলে এই কালক্ষেপণ কেন?

২ বছর ২ মাস দেশের এতিমদের বঞ্চিত করে ১৯৯৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর গুলশান সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে নিবন্ধন নিয়ে তারেক রহমান, আরাফাত রহমান ও ভাগ্নে মমিনুর রহমানের নামে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট গঠন করে ১৯৯৩ সালের ১৫ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সেই এতিম তহবিল থেকে অনুদানের টাকা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট- এর নামে গুলশানের নিউ নর্থ সার্কেল শাখায় (বর্তমান হিসাব নম্বর ‎‎‎‎‎৭১০৫৪১৬৪) ২ কোটি ৩৩ লাখ ৩৩ হাজার ৫০০ টাকা ট্রান্সফার করেন খালেদা জিয়া।

সমালোচকরা বলছেন, ২ বছর ২ মাস দেশের কোনো এতিমখানাকে অনুদানের অর্থ প্রদান না করে যে এতিমখানা গড়েই ওঠেনি সেই অদৃশ্য জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট নামের পারিবারিক এতিমখানায় অর্থ প্রদানের উদ্দেশ্য কখনোই ভালো হতে পারে না। এতিমখানার টাকা ট্রাস্ট বানিয়ে ট্রাস্টের নামে নিজ পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেয়ার অর্থই হলো তা আত্মসাৎ করা। এভাবে ১৯৯১ সাল হতে আজ প্রায় ২৬ বছর যাবৎ খালেদা জিয়া এতিমদের বঞ্চিত করেই চলেছেন।

১০) নাইকো দুর্নীতি: তারেক রহমান নাইকো দুর্নীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলো।

কানাডার কোম্পানী নাইকোকে অনৈতিকভাবে সুবিধা দেয়ার বিনিময়ে বিপুল অংকের টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন তারেক।

কানাডার কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগে খালেদা জিয়া, তারেকসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে দুদকের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় নাইকো দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলাটি দায়ের করেন। অভিযোগপত্রে আসামিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়।

দুর্নীতির বরপুত্র তারেক রহমানের কুকীর্তির অন্যতম সহযোগী গিয়াসউদ্দীন আল মামুনের স্বীকারোক্তিই প্রমাণ করে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের পৃষ্ঠপোষকতায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার দুর্নীতি সংঘটিত হয়েছে।

১১) দুবাই, মালয়েশিয়া ও বেলজিয়ামে অর্থ পাঁচার: বেলজিয়ামে ৭৫০ মিলিয়ন ডলার, মালয়েশিয়ায় ২৫০ মিলিয়ন ডলার এবং দুবাইতে কয়েক মিলিয়ন ডলার অর্থ পাঁচার করে সেখানে বিলাসবহুল বাড়ি কিনেছিলেন তারেক। বাড়ির ঠিকানা :স্প্রিং ১৪, ভিলা :১২, এমিরেটস হিলস, দুবাই।

জিয়াউর রহমান মারা যাওয়ার পর টেলিভিশনে ভাঙা স্যুটকেস ও ছেঁড়া গেঞ্জি দেখানো হয়। তাকে সততার মূর্ত প্রতীক বানানো হলো। কয়েক বছরের মধ্যেই দেখা গেল, জিয়া পরিবার হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদের মালিক। লঞ্চ, টেক্সটাইল মিলস, বিদেশে বাড়ি, ব্যাংক-ব্যালান্স- এগুলো হঠাৎ কোথা থেকে এলো? সততার মুখোশ পরিয়ে মানুষকে ধোঁকা দিয়ে বোকা বানিয়ে সহানুভূতি আদায় করা হয়। হঠাৎ করে এত টাকার মালিক হলো কীভাবে? পুরো জিয়া পরিবার, অর্থাৎ খালেদা জিয়া, তারেক, কোকো সবাই শুধু অসৎ নয়, তারা চরম দুর্নীতিবাজ, জিঘাংসাপরায়ণ, ক্ষমতালোভী। আদালতে খালেদা জিয়া ও তার দুই ছেলের দুর্নীতির প্রমাণ হয়েছে এবং সাজা হয়েছে। তারা শুধু দুর্নীতির মাধ্যমে টাকার মালিক হয়েই ক্ষান্ত হয়নি, সেই টাকা বিদেশে পাচার করেছে।

তারেক জিয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতা : একটি রাজনৈতিক দল যার নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিরা নূন্যতম শিক্ষিত না হলে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না তার স্পষ্ট প্রমাণ হলো বিএনপি। অশিক্ষিত, মুর্খ ব্যক্তিদের শাসন যে ভয়ংকর হয় সেটি বিএনপি দ্বারা প্রমাণিত। শিক্ষার অভাব থাকায় রাজনৈতিক জ্ঞানে শুন্য বিএনপির শাসনামলে বাংলাদেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তিন যুগের অধিক সময় বিএনপির নেতৃত্বে থাকা বেগম খালেদা জিয়া অষ্টম শ্রেনী পাশ। বিএনপির ভবিষ্যৎ নেতৃত্বদানকারী হিসেবে পরিচিত দুর্নীতির বরপুত্র তারেক রহমান উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করলেও উচ্চা শিক্ষায় মনোনিবেশ করতে পারেননি।

মেজর জিয়া ক্ষমতায় থাকাকালীন তার পুত্র তারেক জিয়াকে ক্ষমতার দাপটে ঢাকার সেইন্ট যোসেফ হায়ার সেকন্ডারি স্কুলে থার্ড গ্রেডে ভর্তি করে দেন। পরবর্তী কয়েক বছর তারেক স্কুলে গিয়ে ছেলেদের সাথে মারামারি, টিচার-ব্রাদারদের সাথে দূর্ব্যবহার, পড়াশুনায় অনিয়মিত হয়ে ফেইল করা ইত্যাদি কারণে প্রিন্সিপাল ব্রাদার থমাস ও ব্রাদার বায়ার্ড’র ব্ল্যাকলিস্টে পড়েন। মেজর জিয়াকে কয়েকবার তার ছেলের সম্পর্কে ওয়ার্নিং দেয়ার পরও তিনি কোন ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো প্রভাব খাটাতে গেলে তারেককে স্কুল থেকে বের করে দেয়া হয়।

তারেক রহমান সপ্তম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণিতে উঠতে এক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছিলেন। জিয়ার ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং পরবর্তীতে বিএনপি নেতা মীর শওকত আলীর ভাষ্য অনুযায়ী স্কুলে পড়া অবস্থায় তারেক একাধিক বার ফেল করেছেন। এমনকি স্কুলের প্রগ্রেস রিপোর্টে তারেক তার বাবা জিয়াউর রহমানের স্বাক্ষর নকলও করেছিলেন বলে জানান এই বিএনপি নেতা।

পরবর্তীতে তারেক রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুরে অবস্থিত ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ হতে মাধ্যমিক পাশ করেন। নটরডেম কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হন।

তবে অন্যান্য সুত্রে জানা যায়, তারেক রহমান রাজধানীর বিএফ শাহীন স্কুলে লেখাপড়া করলেও ১৯৮১ সালে এসএসসি পরীক্ষা দেন গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুল থেকে

১৯৮৪ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমে আইন বিভাগে ভর্তি হন। ও পরে লোক প্রশাসন বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি স্নাতক শ্রেনীর পড়াশোনা শেষ করতে পারেন নি।

তারেক জিয়ার নারী কেলেঙ্কারী:

তারেকের চরিত্র নিয়ে অনেক আগে থেকেই গুঞ্জন ছিলো। তবে তৎকালীন সময়ে ক্ষমতার ভয় দেখিয়ে মানুষদের মুখ বন্ধ রাখতে সক্ষম ছিলো জিয়া ও খালেদাপুত্র তারেক। তবে বেশিদিন মানুষের মুখ বন্ধ রাখতে পারে নি সে।

তারেকের বন্ধু গিয়াস আল মামুনের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ‘চ্যানেল ওয়ান’ সম্পর্কে নিশ্চই আপনারা সবাই অবগত আছেন। সেখানে মডেল, উপস্থাপিকা, সংবাদ পাঠকসহ নারী কর্মকর্তাদের বিভিন্নভাবে যৌন হেনস্থার খবর কারও অজানা নয়। তাছাড়া এটাও মানুষের মধ্যে প্রচলিত হয়ে গিয়েছিলো যে চ্যানেল ওয়ানে সুন্দরী নারীরা অযোগ্য হলেও চাকরি নিশ্চিত। কারণ, সেই সুন্দরী নারীরা হবে তারেক জিয়ার ভোগের বস্তু। তারেকের সাথে চ্যানেল ওয়ানের একাধিক নারী কর্মকর্তার যৌনকর্মে লিপ্ত হবার ঘটনা প্রকাশিত হয়েছিলো। তবে সেসকল নারীর বেশির ভাগই ইচ্ছাকৃতভাবে যায় নি বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমকে জানায়।

আলোচিত সংবাদ পাঠক ও অভিনেত্রী ফারহানা নিশো’র সাথে তারেকের অনৈতিক সম্পর্কের কথা জানেন না এমন লোক পাওয়া কঠিক। ফারহানা ছিলো তারেক-মামুনের সবথেকে ঘনিষ্ঠ। ফারহানা নিশো তারেকের সাবেক প্রেমিকা ছিলো বলে গণমাধ্যমের পুরাতন খবরের মাধ্যমে নতুন করে জানা যায়। আর তারেকের অনুপস্থিতিতে ফারহানা মিডিয়াতে একটি চক্র হিসেবে কাজ করতো। ফারহানার সাথে তারেকের সকল প্রকার টাকা পয়সার লেনদেন করতেন এনটিভির সিইও মোসাদ্দেক হোসেন ফালুর শ্যালকের বউ সাবরিনা। তারেক-ফারহানার টেলিকনফারেন্সও সাবরিনা ঠিক করে দেয়।

২০০৩ সালে তারেকের আমন্ত্রণে জনপ্রিয় বলিউড অভিনেত্রী শিল্পা শেঠী বাংলাদেশে আসেন। কোটি কোটি টাকা খরচ করে শিল্পাকে নিয়ে আসলেও সে সময় তাকে অল্প সময়ের জন্য স্টেজে দেখা যায়। জানা যায়, তারেকের খোয়া ভবনে(গাজীপুরের বাড়ি) নিয়ে যাওয়া হয় শিল্পা শেঠীকে। পরবর্তীতে শিল্পা শেঠীর সাথে তারেকের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের খবর চেপে থাকেনি।

দেশের বরেণ্য নজরুল সঙ্গীত শিল্পী ফেরদৌস আরা’র সঙ্গে যৌন সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তারেক রহমানের। শিল্পী ফেরদৌস আরা’র স্বামী ছিলেন সরকারী কর্মকর্তা। বগুড়া জেলা প্রশাসক ও পদোন্নতি সংক্রান্ত বিষয়ে নিজের স্বামীর জন্য তদবির করতে গেলে ফেরদৌস আরা স্বভাবতই তারেক রহমানের ক্ষপ্পরে পড়ে যান। এক রাতের জন্য তারেক রহমানের কাছে এসে ফেরদৌস আরা বেশ কিছু দিনের জন্য বেড পার্টনার হয়ে পড়েন।

মানুষকে মানুষ মনে করতেন না তারেক রহমান :

ডাক্তার, বুদ্ধিজীবী অথবা সাধারণ মানুষ। কাউকেই মানুষ হিসেবে বিবেচনা করতেন না তারেক রহমান। ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে যদি কেউ তার কাছে তদবির নিয়ে আসতো সেই মানুষের সাথে বাড়ির চাকরের মতো ব্যবহার করতেন তারেক রহমান। বর্তমানে অবসরে থাকা সংস্কারপন্থী বিএনপির এক বয়োজ্যেষ্ঠ নেতার সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ের সত্যতার নিশ্চয়তা পাওয়া গিয়েছে।

বয়োজ্যেষ্ঠ সেই নেতা বলেন, তারেক রহমানকে আমি খুব কাছ থেকে চিনতাম। বলতে গেলে আমার হাতেই বড় হয়েছে তারেক রহমান। ছোটবেলা থেকেই তার মধ্যে অহংকার ও দম্ভের প্রবণতা প্রতীয়মান ছিলো। তারেকের বাবা সে সময়ে ছিলেন প্রেসিডেন্ট। একদিন জিয়াউর রহমানের বাসায় তৎকালীন ডাক্তার এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী মিটিংয়ে বসেছিলেন। এ সময়ে তারেক রহমান বি. চৌধুরীর সঙ্গে ক্রিকেট খেলতে চান। কিন্তু বি. চৌধুরী কাজের কথা বলে খেলতে অপারগতা প্রকাশ করায় তার মাথায় ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে আঘাত করেন তারেক। সঙ্গে সঙ্গে বি. চৌধুরীর মাথা থেকে রক্ত ঝরতে শুরু করে। এটা আমার নিজ চোখে দেখা। এছাড়া জিয়াউর রহমানের কাজের লোকদের গায়ে সব সময় হাত তুলতেন তারেক রহমান। তার ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোকে এতো বেশি মারধর করেছেন যে, এক সময় কোকো প্রতিবন্ধী হয়ে যায়।

তারেক রহমানের আচার-ব্যবহার আরো খারাপ হতে শুরু করে যখন ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসেন। তখন তারেক রহমান যুবক। এসময় তার অত্যাচারে কোনো মেয়েই টিকতে পারতো না। যখন তখন বিভিন্ন স্কুল-কলেজের সামনে থেকে মেয়েদের উঠিয়ে নিয়ে এসে ধর্ষণ করতো তারেক। বাংলাদেশের সবচেয়ে ক্ষমতাবান হবার কারণে তার বিরুদ্ধে কেউ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতো না। বিএনপির কোনো নেতা এমনকি মির্জা ফখরুল সাহেবও কখনোই তার মেয়েকে নিয়ে খালেদা জিয়ার বাসভবনে আসতেন না। একবার খালেদা জিয়ার বিশেষ অনুরোধে তিনি বাসভবনে তার মেয়েকে নিয়ে আসার পর, তারেক রহমান সরসরি মির্জা ফখরুলকে বলেন যদি ‌’মন্ত্রী হতে চান তাহলে আপনার মেয়েকে আমার সাথে বিয়ে দিতে হবে।’ তারেক রহমানের এ কথায় লজ্জায়-ভয়ে আর কখনোই মেয়ে নিয়ে তারেক রহমানের সামনে আসেননি মির্জা ফখরুল।

তারেক রহমান ধারণার চেয়ে অতি মাত্রায় বেপরোয়া হয়ে উঠেন ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর। এতো দিনে তিনি মদ, জুয়া ও দুর্নীতিতে পারদর্শী হয়ে ওঠেছিলেন। তিনি যেন প্রতিটি মন্ত্রী থেকে কমিশন নিতে পারেন তার জন্য তৈরি হয়েছিলো হাওয়া ভবন। এছাড়া গাজীপুরে তারেক রহমানের জন্য তৈরি করা হয় খোয়াব ভবন। হাওয়া ভবন থেকে জনগণের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে খোয়াব ভবনে নারীদের সঙ্গে নগ্ন লীলায় মেতে থাকতেন তারেক রহমান।

সংস্কারপন্থী উক্ত বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা আরো বলেন, ক্ষমতা মানুষকে কোথায় থেকে কোথায় নিয়ে যায় তার জলজ্যান্ত প্রমাণ তারেক রহমান। আজ বিএনপির দুরাবস্থার জন্য অনেকাংশেই তারেক রহমান দায়ী। তিনি যদি মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতেন বা মনের ভেতর হিংসা না রাখতেন তবে হয়তো বিএনপির এ পরিণতি হতো না।

উল্লেখ্য, অর্থ পাচারের মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সাত বছর কারাদণ্ড প্রদান ও ২০ কোটি টাকা জরিমানা করেছিলো হাইকোর্ট। সাজা খাটার ভয়ে বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করছেন। এদিকে লন্ডনের একটি নাইটক্লাবে অতিরিক্ত মদ্যপানে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে কয়েকজনের সাথে হাতাহাতিতে লিপ্ত হয়েছিলেন তারেক। ক্লাব কর্তৃপক্ষ তারেকের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিতে চাইলে পরবর্তীতে মোটা অংকের টাকা দিয়ে তার সুরাহা করেন তিনি। তারেক হাওয়া ভবন থেকে টাকা পাচার করে সিঙ্গাপুর, দুবাই, মালয়েশিয়া ও লন্ডনে বিশাল অট্টালিকা করেই ক্ষান্ত হননি। অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা থেকে শুরু করে মানব পাচার এমন কোনো অপরাধ নেই যেটি তারেক করেননি।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়