ঢাকা, বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

দাজ্জালের ফিতনা থেকে নিরাপত্তার প্রধান উপায় সুরা কাহাফ

ধর্ম ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৪:২০, ১৮ ডিসেম্বর ২০২১  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

সুরা কাহাফ তিলাওয়াতকালে প্রশান্তি নাজিল হয়। হজরত বারা ইবনু আজিব (রা.) বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি সুরা কাহফ তিলাওয়াত করছিলেন। তার ঘোড়াটি দুটি রশি দিয়ে তার পাশে বাঁধা ছিল। তখন এক টুকরো মেঘ এসে তার ওপর ছায়া দান করল। মেঘখণ্ড ক্রমেই নিচের দিকে নেমে আসতে লাগল। আর তার ঘোড়াটি ভয়ে লাফালাফি শুরু করে দিলো। সকালে যখন লোকটি নবিয়ে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ওয়াসাল্লামের কাছে উক্ত ঘটনার কথা ব্যক্ত করেন, তখন তিনি বললেন, এ ছিল সাকিনা (প্রশান্তি); যা কুরআনের কারণে নাজিল হয়েছিল। (সহিহ বুখারি : ৫০১১)

দাজ্জালের মোকাবিলায় সুরা কাহাফ

হজরত নাওয়াস ইবনু সামআন (রা.) বর্ণনা করেন, আমি তোমাদের মধ্যে বিদ্যমান থাকা অবস্থায় যদি দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ হয়, তবে আমি নিজেই তাকে প্রতিহত করব; তোমাদের প্রয়োজন হবে না। আর যদি আমি তোমাদের মাঝে না থাকাবস্থায় দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ হয়, তবে প্রত্যেক মুমিন ব্যক্তি নিজের পক্ষ হতে তাকে প্রতিহত করবে। প্রত্যেক মুসলিমের জন্য আল্লাহ তাআলাই হলেন আমার পক্ষ হতে তত্ত্বাবধানকারী। দাজ্জাল ঘন চুলবিশিষ্ট যুবক হবে। তার চোখ হবে আঙ্গুরের মতো। আমি তাকে কাফির আবদুল উজ্জা ইবনু কাতান’র মতো মনে করছি। তোমাদের যে কেউ দাজ্জালের সাক্ষাৎ পাবে, সে যেন তার ওপর সুরা কাহফের প্রথমোক্ত আয়াতসমূহ পাঠ করে। কারণ, এটাই হবে ফিতনা থেকে তার নিরাপত্তার প্রধান উপায়। (সহিহ মুসলিম : ২৯৩৭)

সুরা কাহাফ পাঠ করার ফজিলত

আবু সাইদ খুদরি (রা.) বর্ণনা করেন; রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি সুরা কাহফ যেভাবে অবতীর্ণ হয়েছে সেভাবে পাঠ করবে, কিয়ামতের দিন তা তার জন্য নুর হবে। যা তার অবস্থানস্থল থেকে মক্কা পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। আর যে ব্যক্তি এর শেষ দশ আয়াত পাঠ করবে, এরপর দাজ্জাল বের হলে তাকে তার ওপর প্রভাব বিস্তার করার শক্তি দেওয়া হবে না। (মুসতাদরাকে হাকিম : ২০৭২)

সুরা কাহাফ মুখস্থ রাখার ফজিলত

আবু দারদা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি সুরা কাহাফের শুরু থেকে দশ আয়াত মুখস্থ রাখবে, সে দাজ্জাল থেকে সুরক্ষিত থাকবে। বর্ণনাকারী শুবার বর্ণনায় এসেছে, প্রথম দশ আয়াতের কথা। আর বর্ণনাকারী হাম্মামের বর্ণনায় এসেছে, শেষ দশ আয়াতের কথা। (সহিহ মুসলিম : ৮০৯-৮১০)

হাদিসের অর্থ হচ্ছে, যে ব্যক্তি এই আয়াতগুলো পাঠ করবে, এগুলো নিয়ে চিন্তা-ফিকির করবে এবং এর অর্থ ও মর্মের ব্যাপারে অবগত হবে, সে দাজ্জালের ব্যাপারে সতর্ক হবে। ফলে তার থেকে নিরাপদ থাকবে।

অর্থাৎ, হাদিসে যে মুখস্থের কথা বলা হয়েছে, এর দ্বারা হাকিকত ও তাৎপর্য না বুঝে স্রেফ তোতাপাখির মতো মুখস্থ করা উদ্দেশ্য নয়। এক হাদিসে আল্লাহ তাআলার উত্তম নামসমূহ (আসমায়ে হুসনা) মুখস্থ করার ফজিলত বর্ণিত হয়েছে।

আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন; রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তাআলার ৯৯টি, অর্থাৎ একটি কম ১০০টি নাম রয়েছে। যে তা মুখস্থ রাখবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (সহিহ বুখারি: ৭৩৯২)

এর ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনুল আসির রহ. লেখেন, যে ব্যক্তি এগুলো মুখস্থ রাখবে এভাবে যে, সে এর ইলম অর্জন করবে এবং এর প্রতি ইমান (সুদৃঢ় বিশ্বাস) রাখবে।

আরেকটি মত হচ্ছে, সে এগুলোর দাবির আলোকে আমল করবে। উদাহরণ স্বরূপ, যে ব্যক্তি জানে, আল্লাহ তাআলা সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। সে তার এই ইলমের আলোকে তার জিহ্বা ও শ্রবণেন্দ্রিয়কে নাজায়িয বিষয় থেকে দূরে রাখবে। অন্যান্য নামগুলোর ক্ষেত্রেও একই কথা।

আল্লামা মুহাম্মাদ তাহের পাটনি (রহ.) লেখেন, ‘আখেরি জামানার সবচেয়ে ভয়ঙ্কর মুসিবত হবে দাজ্জালি ফিতনা। এর থেকে হেফাজত লাভের জন্য হাদিস শরিফে সুরা কাহাফ নিয়মিত তেলাওয়াত করার তাকিদ করা হয়েছে। যেভাবে আসহাবে কাহাফ জালিম বাদশাহর কুফরি ফিতনা থেকে ইমানসহ হেফাজত ও নিরাপদ ছিল, সুরা কাহফের আমলকারী ব্যক্তিও এভাবে হেফাজত ও নিরাপদ থাকবে। এছাড়াও প্রত্যেক ওই দাজ্জাল (ধোঁকাবাজ), যে কথা ও কাজের মাধ্যমে ধোঁকাবাজি করে, সুরা কাহাফের আমলকারী তার ফিতনা থেকে নিরাপদ থাকবে। দাজ্জালের আশ্চর্যজনক চেহারা-সুরত, স্বভাব-প্রকৃতি, আচরণ ও নিদর্শন এ সুরার বিভিন্ন আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে। যে ব্যক্তি সুরা কাহফের প্রতি মনোযোগী হবে এবং এর আয়াতসমূহ নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করবে, সে কোনো ফিতনায় ফাঁসবে না। আমার মনে হয়, সুরা কাহফের এ স্বাতন্ত্য ও শ্রেষ্ঠত্ব এমন কোনো বৈশিষ্ট্য ও প্রকৃতির কারণে, যা রাসুলুল্লাহ (সা.) এর জানা ছিল।’

মক্কার যুগে মুসলমানদের সকরুণ অবস্থায় তাদেরকে সান্ত্বনা, শিক্ষা ও উপদেশ প্রদানের জন্য, তাদের ইমান ও আমল সুদৃঢ় করার জন্য এবং ফিতনার সময় পূর্ববর্তীদের আদর্শের অনুকরণে তাদের করণীয় নির্দেশ করার জন্যই মূলত এ সুরাটি অবতীর্ণ হয়।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়