ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

দাজ্জালের শেষ পরিণতি

ধর্ম ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৪:৪৯, ২৩ ডিসেম্বর ২০২১  

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

দাজ্জাল কোথা থেকে আসবে, সে সম্পর্কেও হজরত মুহাম্মদ (সা.) বর্ণনা দিয়েছেন। সে পূর্ব দিকের পারস্য দেশ থেকে বের হবে। সে স্থানটির নাম হবে খোরাসান। সেখান থেকে বের হয়ে সমগ্র দুনিয়া ভ্রমণ করবে। তবে মক্কা এবং মদীনায় প্রবেশ করতে পারবে না। ফেরেশতাগণ সেদিন মক্কা-মদীনার প্রবেশ পথসমূহে তরবারি নিয়ে পাহারা দিবে। হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, ‘পূর্বের কোনো একটি দেশ থেকে দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে; যার বর্তমান নাম খোরাসান।’

দাজ্জাল মক্কা ও মদীনায় প্রবেশ করতে পারবে না

সহীহ হাদিসের বিবরণ অনুযায়ী, দাজ্জালের জন্য মক্কা ও মদীনাতে প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে। মক্কা ও মদীনা ব্যতীত পৃথিবীর সব স্থানেই সে প্রবেশ করবে।

ফাতেমা বিনতে কায়েস (রা.) কর্তৃক বর্ণিত হাদিছে এসেছে, ‘অতঃপর দাজ্জাল বললো, আমি হলাম দাজ্জাল। অচিরেই আমাকে বের হওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে। আমি বের হয়ে চল্লিশ দিনের ভেতরে পৃথিবীর সমস্ত দেশ ভ্রমণ করবো। তবে মক্কা-মদীনায় প্রবেশ করা আমার জন্য নিষিদ্ধ থাকবে। যখনই আমি মক্কা বা মদীনায় প্রবেশ করতে চাইবো তখনই কোষমুক্ত তলোয়ার হাতে নিয়ে ফেরেশতাগণ আমাকে তাড়া করবে। মক্কা-মদীনার প্রতিটি প্রবেশ পথে ফেরেশতাগণ পাহারা দিবে। সে সময় মদীনা শরীফ তিনবার কেঁপে উঠবে এবং প্রত্যেক মুনাফেক এবং কাফেরকে বের করে দিবে। যারা দাজ্জালের নিকট যাবে এবং তার ফিতনায় পড়বে, তাদের অধিকাংশই হবে মহিলা। দাজ্জালের ফিতনা থেকে বাঁচানোর জন্য পুরুষেরা তাদের স্ত্রী, মা, বোন, কন্যা, ফুফু এবং অন্যান্য স্বজন মহিলাদেরকে রশি দিয়ে বেঁধে রাখবে।’

দাজ্জাল পৃথিবীতে কত দিন থাকবে?

সাহাবীগণ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছেন, ‘দাজ্জাল পৃথিবীতে কত দিন অবস্থান করবে?’ উত্তরে তিনি বলেন, ‘সে চল্লিশ দিন অবস্থান করবে। প্রথম দিনটি হবে এক বছরের মত লম্বা। দ্বিতীয় দিনটি হবে এক মাসের মতো। তৃতীয় দিনটি হবে এক সপ্তাহের মত। আর বাকী দিনগুলো দুনিয়ার স্বাভাবিক দিনের মতই হবে।’ 

আমরা বললাম, ‘যে দিনটি এক বছরের মত দীর্ঘ হবে, সেদিন কি এক দিনের নামাজই যথেষ্ট হবে?’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘না; বরং তোমরা অনুমান করে সময় নির্ধারণ করে নামাজ পড়বে।’

কারা দাজ্জালের অনুসরণ করবে?

দাজ্জালের অধিকাংশ অনুসারী হবে ইহুদি, তুর্কী এবং অনারব লোক। তাদের অধিকাংশই হবে গ্রাম্য মূর্খ এবং মহিলা। ইহুদিরা মিথ্যুক কানা দাজ্জালের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী, দাজ্জাল হবে তাদের বাদশা। তার নেতৃত্বে তারা বিশ্ব পরিচালনা করবে।

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, দাজ্জালের অধিকাংশ অনুসারী হবে ইহুদি এবং মহিলা। তিনি আরও বলেন, ইস্পাহানের সত্তর হাজার ইহুদি দাজ্জালের অনুসরণ করবে। তাদের সবার পড়নে থাকবে সেলাই বিহীন চাদর।

গ্রাম্য অশিক্ষিত লোকেরা মূর্খতার কারণে এবং দাজ্জালের পরিচয় সম্পর্কে তাদের জ্ঞান না থাকার কারণে দাজ্জালের অলৌকিক ক্ষমতা দেখে তারা ফিতনায় পড়বে। নারীদের ব্যাপারটিও অনুরূপ। তারা সহজেই যে কোনো জিনিষ দেখে প্রভাবিত হয়ে থাকে।

দাজ্জালের ফিতনা থেকে বাঁচার উপায়

হজরত মুহাম্মদ (সা.) দাজ্জালের ফিতনা হতে রেহাই পাওয়ার উপায়ও বলে দিয়েছেন। তিনি উম্মাতকে একটি সুস্পষ্ট দ্বীনের উপর রেখে গেছেন। সকল প্রকার কল্যাণের পথ প্রদর্শন করেছেন এবং সকল অকল্যাণের পথ হতে সতর্ক করেছেন। উম্মাতের উপরে যেহেতু দাজ্জালের ফিতনা সবচেয়ে বড়; তাই তিনি দাজ্জালের ফিতনা থেকে কঠোরভাবে সাবধান করেছেন এবং দাজ্জালের লক্ষণগুলো সুস্পষ্ট করে বর্ণনা করেছেন। যাতে মুমিন বান্দাদের জন্য এই প্রতারক, ধোকাবাজ ও মিথ্যুক দাজ্জালকে চিনতে অসুবিধা না হয়।

ইমাম সাফারায়েনী (র.) বলেন, প্রতিটি বিজ্ঞ মুসলিমের উচিৎ তার ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী-পরিবার এবং সকল নারী-পুরুষদের জন্য দাজ্জালের হাদিসগুলো বর্ণনা করা। বিশেষ করে ফিতনায় পরিপূর্ণ আমাদের বর্তমান যামানায়। দাজ্জালের ফিতনা থেকে বাঁচার উপায়গুলো নিম্নরূপ:-

এক. ইসলামকে সঠিকভাবে আঁকড়িয়ে ধরা

ইসলামকে সঠিকভাবে আঁকড়িয়ে ধরা এবং ঈমানের উপর অটল থাকাই দাজ্জালের ফিতনা থেকে বাঁচার একমাত্র উপায়। যে মুমিন আল্লাহর নাম ও তার অতুলনীয় সুমহান গুণাবলী সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করবে, সে অতি সহজেই দাজ্জালকে চিনতে পারবে।

দুই. দাজ্জালের ফিতনা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা

হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমি নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নামাজের ভিতরে দাজ্জালের ফিতনা থেকে আশ্রয় চাইতে শুনেছি । তিনি নামাজের শেষ তাশাহুদে বলতেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَمِنْ عَذَابِ النَّارِ وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ

অনুবাদ: হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কবরের আযাব, জাহান্নামের আযাব, জীবন-মরণের ফিতনা এবং মিথ্যুক দাজ্জালের ফিতনা থেকে আশ্রয় চাই।

তিন. দাজ্জাল থেকে দূরে থাকা

হজরত মুহাম্মদ (সা.) দাজ্জালের কাছে যেতে নিষেধ করেছেন। কারণ সে এমন একজন লোকের কাছে আসবে, যে নিজেকে ঈমানদার মনে করবে। দাজ্জালের কাজ-কর্ম দেখে সে বিভ্রান্তিতে পড়ে ঈমান হারা হয়ে যাবে। মুমিনের জন্য উত্তম হলো, সম্ভব হলে সে সময়ে মদীনা অথবা মক্কায় বসবাস করার চেষ্টা করা। কারণ দাজ্জাল তথায় প্রবেশ করতে পারবেনা।

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি দাজ্জাল বের হওয়ার কথা শুনবে সে যেন তার কাছে না যায়। আল্লাহর শপথ! এমন একজন লোক দাজ্জালের নিকটে যাবে, যে নিজেকে ঈমানদার মনে করবে। অতঃপর সে দাজ্জালের সঙ্গে প্রেরিত সন্দেহময় জিনিষগুলো ও তার কাজ-কর্ম দেখে বিভ্রান্তিতে পড়ে ঈমান হারা হয়ে তার অনুসারী হয়ে যাবে। হে আল্লাহ! আমরা আপনার কাছে দাজ্জালের ফিতনা থেকে আশ্রয় চাই।

চার. সূরা কাহাফ পাঠ করা

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাজ্জালের ফিতনার সম্মুখিন হলে মুমিনদেরকে সূরা কাহাফ মুখস্থ করতে এবং তা পাঠ করতে আদেশ করেছেন। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি সূরা কাহাফের প্রথম দশটি আয়াত মুখস্থ করবে, সে দাজ্জালের ফিতনা হতে হেফাযতে থাকবে।

দাজ্জালের শেষ পরিণতি

সহিহ হাদিসের বিবরণ অনুযায়ী, ঈসা ইবনে মারইয়াম (আ.)-এর হাতে দাজ্জাল নিহত হবে। মক্কা-মদীনা ব্যতীত পৃথিবীর সকল দেশেই সে প্রবেশ করবে। তার অনুসারীর সংখ্যা হবে প্রচুর। সমগ্র দুনিয়ায় তার ফিতনা ছড়িয়ে পড়বে। সামান্য সংখ্যক মুমিনই তার ফিতনা থেকে রেহাই পাবে।

ঠিক সে সময় দামেস্ক শহরের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত এক মসজিদের সাদা মিনারের উপর ঈসা (আ.) আকাশ থেকে অবতরণ করবেন। মুসলমানগণ তার পার্শ্বে একত্রিত হবে। তাদেরকে সাথে নিয়ে তিনি দাজ্জালের দিকে রওনা দিবেন। দাজ্জাল সে সময় বায়তুল মাকদিসের দিকে অগ্রসর হতে থাকবে। অতঃপর ঈসা (আ.) ফিলিস্তীনের লুদ্দ শহরের গেইটে দাজ্জালকে পাকড়াও করবেন। ঈসা (আ.) কে দেখে সে পানিতে লবন গলার ন্যায় গলতে শুরু করবে।

ঈসা (আ.) তাকে লক্ষ্য করে বলবেন, তোমাকে আমি একটি আঘাত করবো, যা থেকে তুমি কখনও রেহাই পাবে না। ঈসা (আ.) তাকে বর্শা দিয়ে আঘাত করবেন। অতঃপর মুসলমানেরা তার নেতৃত্বে ইহুদিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। মুসলমানদের হাতে দাজ্জালের বাহিনী ইহুদির দল পরাজিত হবে। তারা কোথাও পালানোর স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পেছনে একজন ইহুদি লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পেছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদি লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে গোপন করার চেষ্টা করবে। কেননা সেটি ইহুদিদের বৃক্ষ বলে পরিচিত।

সহিহ মুসলিম শরীফে আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يُقَاتِلَ الْمُسْلِمُونَ الْيَهُودَ فَيَقْتُلُهُمُ الْمُسْلِمُونَ حَتَّى يَخْتَبِئَ الْيَهُودِيُّ مِنْ وَرَاءِ الْحَجَرِ وَالشَّجَرِ فَيَقُولُ الْحَجَرُ أَوِ الشَّجَرُ يَا مُسْلِمُ يَا عَبْدَ اللَّهِ هَذَا يَهُودِيٌّ خَلْفِي فَتَعَالَ فَاقْتُلْهُ إِلَّا الْغَرْقَدَ فَإِنَّهُ مِنْ شَجَرِ الْيَهُودِ

ততক্ষণ পর্যন্ত কিয়ামত হবে না, যতক্ষণ না মুসলমানেরা ইহুদিদের সঙ্গে যুদ্ধ করবে। অতঃপর মুসলমানগণ ইহুদিরকে হত্যা করবে। ইহুদিরা গাছ ও পাথরের আড়ালে পালাতে চেষ্টা করবে। কিন্তু কেউ তাদেরকে আশ্রয় দিবে না। গাছ বা পাথর বলবে, হে মুসলমান! হে আল্লাহর বান্দা! আমার পেছনে একজন ইহুদি লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা করো। তবে ‘গারকাদ’ নামক গাছের পেছনে লুকালে গারকাদ গাছ কোন কথা বলবে না। এটি ইহুদিদের গাছ বলে পরিচিত।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়