ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪ ||  চৈত্র ১৪ ১৪৩০

দেখে আসুন দেশের প্রথম অ্যানাটমি জাদুঘর

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৫:৪২, ১৭ জানুয়ারি ২০২২  

ছবিঃ সংগৃহীত

ছবিঃ সংগৃহীত

এ যেন এক কঙ্কালের রাজ্য। পুরোটাই যেন কঙ্কালপুরি। সারি সারি কঙ্কাল। সব বিভিন্ন প্রাণীর। চারদিকে আরো আছে বিভিন্ন ছোট-বড় প্রাণীর ট্যাকসিডার্মি, যেগুলো সত্যিকার অর্থেই জীবন্ত প্রাণী বলে মনে হবে। বিচিত্র এই প্রাণিজগতের হাজারো প্রাণের এক রোমাঞ্চকর সমন্বয় রয়েছে এই জাদুঘরে। এখানে প্রায় সব প্রজাতির গৃহপালিত প্রাণীর পাশাপাশি বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর কঙ্কাল ও ট্যাকসিডার্মি ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গের নামসহ পরিচিতি রয়েছে। বলছি চট্টগ্রাম অ্যানাটমি জাদুঘরের কথা।

চট্টগ্রাম শহরের প্রাণকেন্দ্র খুলশী এলাকায় অবস্থিত সুন্দর ও বিশাল ক্যাম্পাস নিয়ে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু)। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের অ্যানাটমি ও হিস্টোলজি বিভাগে গড়ে তোলা হয় বাংলাদেশের প্রথম সুবিশাল অ্যানাটমি মিউজিয়াম বা জাদুঘর। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের উচ্চশিক্ষা ও মান্নোনয়নের উপপ্রকল্পের আওতায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে অ্যানাটমি হিস্টোলজি বিভাগের অধীনে গড়ে তোলা হয় এই মিউজিয়ামটি।

প্রাণী দেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও তন্ত্রের অবস্থা গঠন বৈশিষ্ট্য ও কাজ সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের হাতেকলমে শিক্ষাদান করাই এই জাদুঘরের অন্যতম উদ্দেশ্য। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের তত্ত্বীয় জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি ব্যবহারিক শিক্ষার জন্য ওই মিউজিয়াম একটি অত্যাবশ্যকীয় সংযোজন বলতে হবে। তা ছাড়া শিক্ষাবিদদের জন্য নতুন নতুন গবেষণার ক্ষেত্র তৈরিতে এই মিউজিয়াম অন্য রকম ভূমিকা রাখবে। বিশাল পরিসরে প্রতিষ্ঠিত দেশের একমাত্র এই অ্যানাটমি মিউজিয়ামটি বিভিন্ন নিম্ন ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের জন্য বিনোদনের পাশাপাশি প্রাণিজগৎ সম্পর্কে জানার আগ্রহও সৃষ্টি হবে।

মিউজিয়ামটিতে গৃহপালিত ও বন্যপ্রাণীর কঙ্কাল ও মডেলের পাশাপাশি পশুপাখির অঙ্গপ্রত্যঙ্গ স্টাফিং করে রাখা আছে। স্টাফিং হলো মৃত প্রাণীর চামড়া ছাড়িয়ে ট্যানারির মতো বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে পরিষ্কার করে তুলা রড ও জিআই তার দিয়ে প্রাণীর নিজস্ব অবয়ব বহাল রাখা (প্রাচীন মিসরে প্রাণীকে তার হুবহু অবয়ব অক্ষত রাখতে মমি করার মতো)। যদিও মমি বা স্টাফিং এক জিনিস নয়, মধ্যযুগে জ্যোতিষী, ওষুধ চিকিৎসাসামগ্রী প্রস্তুতকারক ও বিক্রেতারা বিভিন্ন প্রাণীর স্টাফিং করে রাখত। এখানে দেশীয় পদ্ধতিকে কয়েকটি অঙ্গের প্লাস্টিনেশন করা হয়েছে।

এই মিউজিয়ামে দেখতে পাবে সংরক্ষিত যেসব কঙ্কাল—মানুষ, হাতি, উট, কুমির, অজগর, গরু, ছাগল, হরিণ, ঘোড়া, ভেড়া, বানর, শূকর, বিড়াল, কুকুর, বাদুর, গিনিপিগ, খরগোশ, হাঁস, কচ্ছপ, মুরগি, কবুতর ও কোয়েল।

স্টাফিং করা প্রাণীদের মধ্যে রয়েছে রাজহংসী, হনুমান, ছাগল, বিড়াল, গুইসাপ, বানর, মোরগ, কবুতর, কাঠঠোকরা, দোয়েল, মাছরাঙা, খরগোশ, গিনিপিগ, টিকটিকিসহ মিউজিয়ামে মানুষ, গরু, ছাগল, শূকর ও খরগোশের ডিএনএ, ক্রোমোজোম, মস্তিষ্ক, চোখ, হৃৎপিণ্ড, জরায়ু, ফুসফুস, কিডনি, বক্ষসহ ইত্যাদি।

অ্যানাটমি মিউজিয়ামে আরো শোভা পাচ্ছে প্রাণিজগতের বিভিন্ন তন্ত্র চিত্র এবং প্রাণিবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞানসহ অ্যানাটমি বিষয়ে অবদান রাখা বিজ্ঞানীদের নাম ও প্রতিকৃতি। এই মিউজিয়ামে রয়েছে প্রায় ৬০টি কঙ্কাল, ৩০টি স্টাফ, ফরমালিনের সংরক্ষিত বিভিন্ন প্রাণীর অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ৫০০টি, বিভিন্ন হাড় দুই হাজার টি, প্রাণীর মডেল ৭৫টি এবং তিন হাজারটি বিভিন্ন প্রকার স্লাইড।

আপনি যদি পাহাড়তলী ফয়স লেক ও চিড়িয়াখানা ঘুরতে যেতে চান তাহলে এই কেন্দ্রটি দেখে আসতে পারেন। ফয়স লেকের আগেই খুলশী এলাকায় অবস্থিত চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়। আপনি মূল গেট থেকে একটু সামনে গেলে প্রশাসনিক ভবনের পাশে হলো অ্যানাটমি জাদুঘর। শুক্র ও শনিবারসহ সরকারি ছুটিতে বন্ধ থাকে সিভাসু। রোববার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে এই জাদুঘর। বিশেষ করে স্কুল ও কলেজের ছেলেমেয়েদের জন্য অনেক কিছু শেখার আছে এই অ্যানাটমি জাদুঘরে।

কীভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যাওয়ার বিভিন্ন এসি ও ননএসি বাস আছে। বিভিন্ন বাসে করে আপনি চট্টগ্রাম পৌঁছাতে পারবেন। আবার ট্রেন বা বিমানেও চট্টগ্রামে যাওয়া যাবে।

খাবার-দাবার

খুলশীতে অনেক ভালো খাবারের দোকান আছে অথবা জিইসি মোড়ে এসে খেতে পারেন বা ফয়স লেক গিয়েও খেতে পারবেন।

পরামর্শ

আপনার মনে রাখতে হবে, সিভাসুতে অবস্থিত যেই অ্যানাটমি জাদুঘরটি দেখতে যাচ্ছেন, তার কিছু নিয়মকানুন আছে। একটু দেখেশুনে চলতে হবে। ছবি তুলতে পারবেন, তবে কাছে গিয়ে নয়, একটু দূর থেকে এবং খুব ছোট শিশুদের সঙ্গে না নেওয়াই ভালো। প্রাণীর কঙ্কাল বা স্টাফিং দেখে শিশুদের কেউ কেউ ভীতও হতে পারে।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়