ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪ ||  চৈত্র ১৫ ১৪৩০

দেশের সর্বাধুনিক ডিপোতে রূপান্তরিত হয়েছে বিএম কনটেইনার ডিপো

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৮:৪৭, ৬ জুন ২০২৩  

দেশের সর্বাধুনিক ডিপোতে রূপান্তরিত হয়েছে বিএম কনটেইনার ডিপো

দেশের সর্বাধুনিক ডিপোতে রূপান্তরিত হয়েছে বিএম কনটেইনার ডিপো

একটি মৃত্যুপুরী থেকে এক বছরের ব্যবধানে দেশের সর্বাধুনিক ডিপোতে রূপান্তরিত হয়েছে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপো। বসানো হয়েছে অত্যাধুনিক ফায়ার সেফটি সিস্টেম। মানা হচ্ছে আইএমডিজি (ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম ডেঞ্জারাস গুডস) কোডের সবগুলো শর্তও। নতুন করে বানানো হয়েছে আমদানি-রপ্তানি পণ্য রাখার শেড। পুরো ডিপোতে এখন নতুনত্বের ছোঁয়া।

ডিপো কর্তৃপক্ষ বলছে, পুরো ডিপোকে নতুন করে গড়ে তোলা হয়েছে। নিহত সবার পরিবারকে দেওয়া হয়েছে ক্ষতিপূরণের অর্থ। আহতদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে। পাশাপাশি ডিপোতে পণ্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকেও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।

জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরের ২০ কিলোমিটারের মধ্যে সীতাকুণ্ডের কেশবপুরে ২৪ একর জায়গায় বিএম ডিপো গড়ে ওঠে। ২০১১ সালের মে মাসে ডিপোর অপারেশন শুরু হয়। গত বছরের ৪ জুন দিনগত রাতে বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীসহ মারা যান ৫১ জন। দুর্ঘটনায় প্রায় হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করে আসছে ডিপো কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানটি ফায়ার সার্ভিসের নিহত কর্মীদের ১৫ লাখ ও আহতদের ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়েছিলেন। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নিহত ১৩ পরিবারকে ১৫ লাখ টাকা করে দিয়েছে বিএম ডিপো কর্তৃপক্ষ। আহতদেরও দেওয়া হয়েছে প্রতিশ্রুত ক্ষতিপূরণ।

ডিএনএ পরীক্ষায় ৪২ জনের পরিচয় শনাক্ত হয়। অন্যদের পরিচয় শনাক্ত না হলেও ডিপো কর্তৃপক্ষ বলছে, পরিচয় শনাক্ত যাদের হয়নি এমন পরিবারকেও ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে হতাহতদের ক্ষতিপূরণ ও চিকিৎসাসহ এ পর্যন্ত ২৬ কোটি ২৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা খরচ করেছে ডিপো কর্তৃপক্ষ।

নিজেদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যারা মারা গেছেন, তাদেরও ক্ষতিপূরণের ১০ লাখ টাকা করে দেওয়াসহ সবার বেতন-বোনাস চলমান রাখা হয়েছে বলে জানান ডিপোর কর্মকর্তারা। দুর্ঘটনায় নিজের বাম হাত হারিয়েছেন ডিপোর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন) নুরুল আকতার। দুর্ঘটনার সময় তিনি ডিউটিতে ছিলেন না। আগুন লাগার খবর পেয়ে ছুটে যান তিনি। এরপরই বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের আগ পর্যন্ত অন্য সহকর্মীদের নিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিষ্ঠানের সম্পদ রক্ষায় কাজ করছিলেন তিনি। একপর্যায়ে বিকট শব্দে বিস্ফোরণে উড়ে যায় তার বাম হাত। বর্তমানে শারীরিকভাবে সুস্থ নুরুল আকতারের আরও উন্নত চিকিৎসার পদক্ষেপ নিয়েছে ডিপো কর্তৃপক্ষ। ক্ষতিগ্রস্ত হাতে রোবটিক হ্যান্ড প্রতিস্থাপন করা হবে।

নুরুল আকতার বলেন, ‘দুর্ঘটনায় আমি হাত হারিয়েছি, এতে আমার কোনো আক্ষেপ নেই। আমার প্রতিষ্ঠান আমার সব দায়িত্ব নিয়েছে। এখন বাম হাতে রোবটিক হ্যান্ড লাগানো হবে। স্বাভাবিক না হলেও ওই হাতে কাজ করতে পারবো, অনুভূতি পাবো বলে আশা।’

তিনি বলেন, শুধু ৪ জুনের বিস্ফোরণের ঘটনা নয়। চার বছর আগে আমাদের এক কর্মচারী মারা গেছেন। তার প্রতি মাসের বেতন এখনো পরিশোধ করা হচ্ছে। তার পরিবারের অন্য যে কেউ কর্মক্ষম না হওয়া পর্যন্ত ডিপো কর্তৃপক্ষ বেতন-বোনাস চালিয়ে যাচ্ছে। গত বছরের দুর্ঘটনায় যারা হতাহত হয়েছেন, আহতদের মধ্যে যারা এখনো কাজে যোগ দিতে পারেননি, তাদের পরিবারের কাছে প্রতি মাসে নিয়মিত বেতন-ভাতা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এ ধরনের নজির বাংলাদেশে কম প্রতিষ্ঠানেই রয়েছে।

বর্তমানে ডিপোর আহত ১১ জন ভারতে চিকিৎসাধীন। আরও কয়েকজন কাজে জয়েন করেছেন, তারাও শিডিউল অনুযায়ী উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাবেন।

৫ জুন সরেজমিনে সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে গিয়ে দেখা যায়, এক বছর আগে আগুনে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া ডিপোটি আর আগের মতো নেই। ডিপো অভ্যন্তরের পুরো চিত্রই পাল্টে গেছে। প্রায় দুই লাখ ৮২ হাজার ঘনফুটের নতুন তিনটি সিএফএস (কনটেইনার ফ্রেইট স্টেশন) বানানো হয়েছে। বিপজ্জনক পণ্যের জন্য ১২ হাজার বর্গফুটের আলাদা শেড। সিএফএস ও শেডগুলোতে এখন পণ্য রাখা হয়েছে। এখানে শ্রমিকরা কার্গো ও কনটেইনারে পণ্য ওঠানো-নামানো করছেন।

ডিপোতে প্রবেশেও আনা হয়েছে কড়াকড়ি। এর মধ্যে নিরবচ্ছিন্নভাবে আসা-যাওয়া করছে কনটেইনারবাহী লরি। ডিপোর অভ্যন্তরের চারদিকে ফায়ার ওয়াটার ও ফোম টাইপ হাইড্রেন্ট বসানো হয়েছে। রাখা হয়েছে বালিভর্তি বালতি এবং ফায়ার এক্সটিংগুইসারও। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এরই মধ্যে আহতরা সুস্থ হয়ে অনেকে কাজে ফিরেছেন। অনেকে বিদেশে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

কথা হলে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ক্যাপ্টেন মাইনুল আহসান বলেন, বিএম ডিপোতে লাগা আগুন আমাদের অন্তরে দাগ কেটে গেছে। আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি। এরই মধ্যে আমরা ডিপোর শতভাগ অপারেশন শুরু করতে পেরেছি।

তিনি নিজেও একজন মাস্টার মেরিনার এবং আইএমডিজি কোড বিশেষজ্ঞ। বড় বড় জাহাজ পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার ঝুলিতে। কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএম ডিপোর দুর্ঘটনা এক বছর পেরিয়েছে। আমরা এক বছর যুদ্ধ করেছি। এই এক বছরের মধ্যেই আমরা এখন বিশ্বমানের একটি ডিপো বানিয়েছি। যেখানে নিরাপত্তার ব্যাপারে কোনো ছাড় দেওয়া হয়নি। এরই মধ্যে ফায়ার ডিটেকশন অ্যান্ড প্রটেকশন সিস্টেম সংযোজন করা হয়েছে।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়