ঢাকা, বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতিতে গুরুত্ব

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:৫৬, ২৯ নভেম্বর ২০২০  

করোনা মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি

করোনা মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি

২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীনে অজানা রোগে সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়। পরে এ রোগের নাম হয় করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)। ওই সময়ে চীনে শনাক্ত হলেও বাংলাদেশে নিশ্চিতভাবে শনাক্ত হয় চলতি বছরের ৮ মার্চ। এরপর ব্যাপকভাবে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে। হু হু করে বেড়ে যায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার। মাঝে কিছুটা কমে আসে এর ঊর্ধ্বগামিতা। তখন দেশে খুব একটা শীত ছিল না। বিভিন্ন সময়ে শীত থাকা দেশগুলোয় করোনা আক্রান্তের ও মৃত্যুর হার অনেকে বেশি লক্ষ করা গেছে। বাংলাদেশে চলতি শীত মৌসুম শুরু সঙ্গে সঙ্গে সংক্রমণ বাড়ছে। বাড়ছে মৃত্যুও। এই শীতে করোনা বাড়তে পারে-আগে থেকেই এমন ধারণা ছিল বিশেষজ্ঞদের। আগাম প্রস্তুতির পরামর্শও দিয়েছেন তারা। সেভাবেই দেশে প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

ভাইরাসটি শনাক্তের পর প্রতিষেধক তৈরিতে অনেক দেশে চেষ্টা চালালেও নিশ্চিত কোনো প্রতিষেধক এখনো আবিষ্কার হয়নি। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভাইরাসটি নাক-মুখ ও চোখ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে। শ্বাসনালী থেকে ফুসফুসে গিয়ে প্রদাহ সৃষ্টি করে। তাই প্রথম গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে সংক্রমণ ঠেকানো। ভাইরাস যাতে শরীরে প্রবেশ না করে, সেজন্য মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিতে কঠোর সরকার। মাস্ক নিশ্চিতে প্রতিদিনই সারা দেশে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। সবাইকে সচেতন করা হচ্ছে। বাজার, বাসস্ট্যান্ড, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সচেতনতায় মাইকিং করা হচ্ছে। এ ছাড়া বেশি আক্রান্ত হলে চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। রাজধানীতে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল থাকলেও কোনো কোনো বিভাগে নেই।

এদিকে ঢাকায় ১৯ হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য ৩ হাজার ৫১৯টি সাধারণ ও ৩০৫টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে। চট্টগ্রামের রয়েছে ৭৭০টি সাধারণ ও ৩৯টি আইসিইউ শয্যা। সারা দেশে অন্যান্য হাসপাতালে ৭ হাজার ১৬৪টি সাধারণ ও ২২১টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে। সবমিলিয়ে সারা দেশে মোট ১১ হাজার ৪১৮টি সাধারণ ও ৫৫৫টি আইসিউই শয্যা রয়েছে। সারা দেশে অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে ১৩ হাজার ৬০৩টি। হাইফ্লো নাজাল ক্যানল সংখ্যা ৬০৪ ও অক্সিজেন কনসেনট্রেটর সংখ্যা ৩৯৭টি। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা স্বল্পসময়ে সম্পন্ন করা; রোগ নির্ণয় ও সংশ্লিষ্ট ল্যাবরেটরি পরীক্ষার ধরন নির্ধারণ সম্প্রসারণ করা; শনাক্তকরণ পরীক্ষার হার কাক্সিক্ষত পর্যায়ে উন্নিত করতে ‘কোভিড-১৯ ল্যাবরেটরি পরীক্ষা নীতিমালা, ২০২০’ প্রণয়ন করা হয়েছে। যেসব এলাকায় পিসিআর টেস্টের ব্যবস্থা নেই এবং যেসব এলাকায় রোগী বেশি হবে, সেসব জায়গায় দ্রুত শনাক্তের জন্য অ্যান্টিজেন টেস্টের ব্যবস্থা নীতিমালায় যুক্ত করা হয়েছে।

নীতিমালার আলোকে শিগগিরই কার্যক্রম চালুর কথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, আমেরিকার দেওয়া ১০০ ভেন্টিলেটরসহ নতুন ৩০০ ভেন্টিলেটর প্রত্যন্ত এলাকায় পাঠানো হবে; উপজেলা পর্যায়ে যেখানে আইসিইউ সেবা নেই। এর ব্যবহার পদ্ধতি এতটাই সহজ যে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ছাড়াই ব্যবহার করা যায়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (আইএইএস) বলেন, পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য যথেষ্ট প্রস্তুতি আছে।

আমাদের চট্টগ্রাম ব্যুরোপ্রধান শাহীন আলম জানিয়েছেন, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে চট্টগ্রামে করোনার সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী।

চট্টগ্রাম বিভাগের স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহারিয়ার কবীর জানিয়েছেন, মানুষ সচেতন না হলে সংক্রমণ আরও বাড়বে। অতীতের অভিজ্ঞতা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর প্রস্তুতি নিয়েছে।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, বিগত ঘটনাকে মাথায় রেখে সব রকমের প্রস্তুতি নিয়েছি। আইসিইউ, সিসিইউর সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল ও হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ১০টি করে আইসিইউ শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া বেসরকারি হাসপাতালে ১০০টি আইসিইউ শয্যা প্রস্তুত রয়েছে। যার মধ্যে ৫০টি কোভিড এবং বাকিগুলো নন কোভিড রোগীদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে। এছাড়াও ব্যক্তিপর্যায়ে আইসোলেশন সেন্টারগুলোও খোলার জন্য বলা হয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ওমর ফারুক বলেন, করোনার এই সময়ে ঘর থেকে বাইরে যাওয়ার সময় স্বাস্থ্যবিধি মানতে জেলা প্রশাসন থেকে অনুরোধ করা হয়েছে। এরপরও রাস্তাঘাটে যানবাহনে মাস্ক না পরে ঘোরাফেরা করায় প্রতিদিন ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অর্থদণ্ড দিয়ে সচেতন করা হচ্ছে। এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি রাকিবুল হাসান রুবেল জানান, ময়মনসিংহ বিভাগীয় পরিচালক স্বাস্থ্য ডা. মো. শাহ আলম জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগের সব বদলি স্থগিত করা হয়েছে। করোনা রোগীদের জন্য ৫২০টি শয্যা, ১৭টি আইসিইউ এবং ১৫টি কেবিন প্রস্তুত রয়েছে। তাছাড়াও স্বাস্থ্য বিভাগ, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে মানুষকে সচেতন করতে মাস্ক বিতরণসহ বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ছাইফুল ইসলাম জানান, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২২০টি শয্যা, ১০টি আইসিইউ প্রস্তুত রয়েছে। আরও ১০টি আইসিইউ প্রস্তুতের কাজ চলছে।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌসের বরাত দিয়ে রাজশাহী ব্যুরোপ্রধান জিয়াউল গনি সেলিম জানান, ভেন্টিলেটর সুবিধাসহ ১৫টি আইসিইউ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ৪০০ সিলিন্ডার অক্সিজেন, ২৮টি হাইফ্লো ন্যাজাল ডিভাইস ও ১৫টি অক্সিজেন কন্সেন্ট্রেটর মজুদ রয়েছে। প্রতিদিন হাসপাতালের ল্যাবে ১৬০টি নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।

রাজশাহী জেলা সিভিল সার্জন ডা. এনামুল হক বলেন, সেকেন্ড ওয়েব মোকাবিলায় বড় ধরনের কোনো প্রস্তুতি নেই। রাজশাহীর করোনা পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক আছে। আগামীতে যেন সংক্রমণ না বাড়ে এজন্য ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ নিশ্চিত করতে কড়া নজরদারি করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত করোনা ডেডিকেটেড কোনো হাসপাতাল প্রস্তুত করা হয়নি। পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, বর্তমানে সারা দেশে ১১৮টি পরীক্ষাগারে করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন
সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়