ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

‘দ্য কেরালা স্টোরি’নিয়ে কেন এত বিতর্ক, কী আছে এতে?

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩:১৭, ৯ মে ২০২৩  

‘দ্য কেরালা স্টোরি’নিয়ে কেন এত বিতর্ক, কী আছে এতে?

‘দ্য কেরালা স্টোরি’নিয়ে কেন এত বিতর্ক, কী আছে এতে?

‘দ্য কেরালা স্টোরি, বলিউডের সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা। ছবিটি নিয়ে ভারতজুড়ে চলছে বিতর্ক। এরই মধ্যে তামিলনাড়ু রাজ্যের সব সিনেমা হল থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে ছবিটি। পশ্চিমবঙ্গেও নিষিদ্ধ করা হয়েছে সিনেমাটির প্রদর্শন।

সম্প্রতি ইউটিউবে ছবির ট্রেলার প্রকাশ করা হয়। তা দেখেই বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে। তারপরও সময় মতো মুক্তি দেওয়া হয় পরিচালক সুদীপ্ত সেনের ‘দ্য কেরালা স্টোরি। এরপরই তোলপাড় শুরু হয় গোটা ভারতে। কেউ ছবিটিকে সমর্থন করছেন, কেউ এর বিপক্ষে সরব হয়েছেন। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজেও ছবিটিকে সমর্থন করেছেন।

কিন্তু ঠিক কী আছে এই ছবিতে? কেন এত বিতর্ক ছবিটি নিয়ে? অনেকে বলছেন, বিবেক অগ্নিহোত্রীর ‘দ্য কাশ্মীর ফাইল্স’কেও ছাপিয়ে যাচ্ছে আদা শর্মা অভিনীত ‘দ্য কেরালা স্টোরি’।

ছবিটির মূল চিত্রনাট্য সাজানো হয়েছে যে বিষয়টিকে কেন্দ্র করে, তা নিঃসন্দেহে বিতর্কিত। এই ছবিতে হিন্দু নারীদের উপর ইসলাম আগ্রাসনের কাহিনি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতায় জোরদার হয়েছে বিতর্ক।

ছবিটির কেন্দ্রীয় চরিত্রের নাম শালিনী উন্নিকৃষ্ণণ। হিন্দু এই তরুণী ভাগ্যের ফেরে হয়ে উঠেছেন ফাতিমা। অর্থাৎ, তার ধর্ম পরিবর্তন করা হয়েছে। পরিকল্পনামাফিক ‘ফাঁদ’ পেতে শালিনীকে ফাতিমা করে তোলার কাহিনি দেখিয়েছেন পরিচালক সুদীপ্ত।

শুধু হিন্দু থেকে মুসলমান হয়ে যাওয়াই নয়, এই ধর্মীয় পরিবর্তন শালিনীর জীবনেও বয়ে এনেছে চরম দুর্ভাগ্য। তাকে সিরিয়ার জঙ্গি দলে যোগ দিতে বাধ্য করা হয়। ধর্মান্তরিত নারীর অসহায় জীবন সংগ্রামকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়েছে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’।

পরিচালক দেখিয়েছেন, শুধু হিন্দু নয়, কেরালায় এই ধর্মান্তরণের ‘ফাঁদে’ পা দিয়ে সর্বনাশ ডেকে এনেছেন খ্রিস্টান নারীরাও। এই ছবির ট্রেলারে দাবি করা হয়েছে, কেরালা থেকে ৩২ হাজার নারী ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্মান্তরিত হতে বাধ্য হয়েছেন।

সুদীপ্ত নিজে অবশ্য এই ছবিকে ‘ইসলামবিরোধী’ বলার ঘোর বিরোধী। তিনি জানিয়েছেন, সন্ত্রাসবাদবিরোধী একটি ছবি তিনি তৈরি করেছেন। নেপথ্যে রয়েছে অনেক গবেষণা, পরিশ্রম এবং তথ্যের চুলচেরা বিশ্লেষণ।

পরিচালকের কথায়, “আমি কখনওই বলিনি কেরালায় যেসব মেয়েদের ধর্মান্তরণ হচ্ছে তারা আইসিস-এ যোগ দিচ্ছেন। আমার প্রশ্ন, মেয়েগুলো একেবারে উবে যাচ্ছে কীভাবে?’’ কেরালায় ধর্মান্তরণকে ঘিরে নিষ্ঠুর এবং করুণ চক্র চলছে বলে দাবি পরিচালকের।

তিন নারীকে নিয়ে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’। সত্য ঘটনা অবলম্বনে এই চিত্রনাট্য সাজিয়েছেন বলে দাবি পরিচালক সুদীপ্তের। তিনি জানিয়েছেন, যাদের কাহিনি এই ছবিতে দেখানো হয়েছে, “তাদের একজন এখনও আফগানিস্তানের জেলে বন্দি। অন্যজন আত্মহত্যা করেছেন। বিচারের অপেক্ষায় তার মা-বাবা প্রহর গুনছেন। অন্য আরেক মেয়ে এখন গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন যাকে ক্রমাগত ধর্ষণ করা হয়েছে।”

এই ছবিকে ইতোমধ্যেই করমুক্ত বলে ঘোষণা করেছে মধ্যপ্রদেশের বিজেপি সরকার। একাধিক রাজ্যে বিজেপি নেতা হিন্দু নারীদের জড়ো করে ছবিটি দেখাচ্ছেন। দাবি, গোটা ভারতের সমস্যার কথা বলে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’।

বিজেপিশাসিত কর্নাটকে ভোট আসন্ন। সেখানেও নির্বাচনের প্রচারে গিয়ে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মুখে শোনা গেছে সুদীপ্তের ছবির কথা। মোদীর দাবি, এই ছবি সমাজে সন্ত্রাসবাদের মুখোশ খুলে দেবে।

এদিকে, যে কেরালাকে নিয়ে এত কাণ্ড, সেই বামশাসিত রাজ্যে ছবিটি নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছিল। শেষ পর্যন্ত প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন স্পষ্ট জানান, “ইচ্ছাকৃতভাবে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়িয়ে দিতে এই ধরনের ছবি তৈরি করা হয়েছে।”

সিপিএম, কংগ্রেসের মতো বিজেপিবিরোধী দলগুলো একযোগে এই ছবিকে ‘প্রচারসর্বস্ব’ বা ‘রাজনৈতিক প্রচারমূলক’-এর আখ্যা দিয়েছে। আঙুল উঠেছে সঙ্ঘ পরিবারের দিকেও।

মুক্তির আগে ছবিটি থেকে অন্তত ১০টি দৃশ্য বাদ দিতে হয়েছে। ‘দ্য কেরালা স্টোরি’র উপর কাঁচি চালিয়েছে সেন্সর বোর্ড। কেরালার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভিএস অচ্যুতানন্দের সাক্ষাৎকারের অংশও বাদ পড়েছে।

বেশ কিছু দৃশ্যে হিন্দু দেবদেবীদের নিয়ে সংলাপ ছিল। তাই সেসব দৃশ্য বাদ পড়েছে। ছবিতে একটি সংলাপ ছিল, যেখানে বলা হয় ‘ভারতীয় কমিউনিস্টরা দু’মুখো’। ‘ভারতীয়’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয়েছে এই সংলাপ থেকে।

‘দ্য কেরালা স্টোরি’র একটি দৃশ্যে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “আগামী দু’দশকে এই রাজ্য মুসলিম অধ্যুষিত রাজ্যে পরিণত হবে।” বিতর্কিত সংলাপের জন্য এই গোটা দৃশ্যই বাদ দেওয়া হয়েছে।

ছবির নায়িকা আদা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই বিতর্ক নিয়ে মুখ খুলেছেন। সমালোচকদের কাছে তার আর্জি, যারা বিতর্কে ইন্ধন দিচ্ছেন, তারা আগে ছবিটি দেখুন। তারপর তা নিয়ে মন্তব্য করুন। নিজস্ব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে মতামত তৈরি করার অনুরোধ জানিয়েছেন আদা।

অনেকে বলছেন, ভারতের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সুদীপ্তের এই ছবি বিতর্কে ঘি ঢেলেছে। বিজেপিও ভোটের মাঠে ছবিটিকে হাঁতিয়ার বানিয়েছে।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়