ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৯ মার্চ ২০২৪ ||  চৈত্র ৪ ১৪৩০

নৌকা চালিয়ে ও টিউশনি করে জিপিএ-৫ পেয়েছে শাপলু

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৪:৫৩, ৮ জুন ২০২০  

চরম দারিদ্রতার মধ্যে বাবার সাথে নৌকা চালিয়ে আর নিজে টিউশনি করে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে শাপলু মিয়া। সে কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের খলাপাড়া গ্রামের দরিদ্র কৃষক ও নৌ-চালক কামাল মিয়ার তৃতীয় পুত্র।

ঘাগড়া আঃ গণি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র শাপলু মিয়া বিজ্ঞান শাখা থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে এই কৃতিত্বপূর্ণ ফল অর্জন করেছে। পরীক্ষার ফরম পুরণের টাকা টিউশনি করে ও বাবার সাথে নৌকা-চালিয়ে যোগাড় করতে হয়েছে তাকে।

জানা গেছে, ৬ ভাই-বোনের মধ্যে শাপলু তৃতীয়। ছোট দুই ভাই মাদরাসায় পড়ছে। বড় ভাই বাবার সাথে কৃষি কাজ ও বর্ষার সময় নৌকা চালিয়ে সংসার চালায়। পড়াশোনা ও টিউশনির ফাঁকে শাপলু বাবাকে কৃষি কাজ ও নৌকা চালানোতে সহযোগিতা করতো।

শাপলু এর আগে খলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে। ষষ্ঠ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার পরই তার জীবন যুদ্ধ শুরু হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে থাকাকালীন সময়ে খলাপাড়া স্কুলের প্রধান শিক্ষক দেওয়ান জহির ইয়ার চৌধুরী ও সহকারী শিক্ষক শ্যামল চন্দ্র বণিকের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ও বিভিন্ন আর্থিক সহযোগিতায় শাপলু এগিয়ে এসেছে।

শাপলুর নিজের বাড়িতে পড়াশোনার কোন ব্যবস্থা না থাকায় সে শিক্ষকদের বাড়িতে পড়াশোনা করত। অষ্টম শ্রেণি থেকে সে টিউশনি শুরু করে। সামান্য টাকা দিয়ে বই খাতা কিনে সে জেএসসি পরীক্ষা দেয়। জেএসসি’তেও সে জিপিএ-৫ পায়।

জেএসসিতে ভাল ফলাফলে তার উদ্দীপনা বেড়ে যায়। দারিদ্রতার সাথে বাস করলেও তা তার লেখাপড়ায় বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। জেএসসি পাশের পর দুই শিক্ষক দেওয়ান জহির ইয়ার চৌধুরী ও শ্যামল চন্দ্র বণিকর তাকে আরো বেশি সহযোগিতা করতে থাকেন।

এছাড়া ঘাগড়া আঃ গণি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক শফিকুল ইসলাম গণিত বিষয়ে বিনা বেতনে পরীক্ষার পূর্ব পর্যন্ত শাপুলকে প্রাইভেট পড়িয়ে গেছেন।

পরীক্ষার পূর্বে পড়াশোনার খরচ চালাতে যখন শাপলু হিমশিম খাচ্ছিল, তখন এক হৃদয়বান ব্যক্তি তাকে কিশোরগঞ্জ শহরে তার বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে শাপলু ওই ব্যক্তির একটি ছোট সন্তানকে প্রাইভেট পড়ানো শুরু করে। প্রাইভেটের ফাঁকে সে নিজেও বাড়ি থেকে কিছু টাকা নিয়ে কোচিং ক্লাস শুরু করে। তার বাবা পুরো টাকা ঋণ করে পাঠাত।

শাপলু খুব কষ্টে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। আজকের এই সফলতার পেছনে সবচেয়ে বেশি উৎসাহ দিয়েছে শিক্ষক ও তার দরিদ্র মা-বাবা।

আরো বেশি সুযোগ পেলে তার ফলাফল আরো ভালো হতো বলে শাপলু মনে করে। শাপলু ভবিষ্যতে ডাক্তারি পড়াশোনার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন
সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়