ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

পাহাড়ের গায়ে রহস্যময় ঝুলন্ত কফিন

ফিচার ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৫:৩৫, ১৭ মে ২০২১  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

নদী, পর্বত ও বনের সমন্বয়ে অপূর্ব প্রাকৃতিক স্বর্গরাজ্য দক্ষিণ চীন। এটি চীনের রহস্যঘেরা প্রাচীন ঐতিহ্য সমৃদ্ধ অঞ্চল, যা ইয়াংজি নদীর অববাহিকায় অবস্থিত। এর মূল রহস্য হলো ঝুলন্ত কফিন। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, প্রায় তিন হাজার বছর আগে এই অঞ্চলে ঝুলন্ত কফিনে মরদেহ সমাহিত করার রীতি ছিল।

দক্ষিণ চীনের এই ঝুলন্ত কফিনগুলো সত্যি অবিশ্বাস্য ও রহস্যময়। একেবারে খাঁড়া পাহাড়ের গায়ে ১৩০ মিটার উঁচুতে এগুলো থাকে। কয়েক দশক ধরে গবেষকরা এই রহস্যময় সমাধির ও এ সম্পর্কিত আচার অনুষ্ঠানের কারণ উদঘাটনের চেষ্টা করেছেন।

পাহাড়ে সমাধির কারিগর যারা

চীনে ঝুলন্ত কফিনে সমাহিত করার ইতিহাস কয়েক হাজার বছরের পুরনো। প্রায় তিন হাজার বছরের পুরনো ঝুলন্ত কফিনের সমাধি পাওয়া যায় চীনের ফুজিয়ান প্রদেশে। 

ধারণা করা হয়, এই রীতির প্রাচীন নিদর্শনটি সেখানকারই। সেখান থেকেই এই রীতি দক্ষিণ চীনের হুবেই, সিচুয়ান, ইউনানসহ অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।

বিশেষজ্ঞদের ধারণা, চীনের ‘বো’ নামের একটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সর্বপ্রথম ঝুলন্ত কফিনে সমাহিত করার রীতির প্রচলন করেছিল। মিং রাজবংশের (১৩৬৮ সাল থেকে ১৬৪৪ সাল পর্যন্ত) শেষের দিকে ‘বো’ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যায়। যার ফলে ঝুলন্ত কফিনে সমাহিত করার প্রথাও কালের গর্ভে হারিয়ে যায়। 

ধারণা করা হয়, মিং রাজবংশের সময় ‘বো’ জাতি অত্যাচার নিপীড়নের শিকার হয়েছিল। তবে তাদের অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার সঠিক কারণ সম্পর্কে জানা যায়নি।

‘বো’জনগোষ্ঠী ঝুলন্ত কবরস্থান কেন তৈরি করেছিল?

সমতল কিংবা মূল আবাসস্থল থেকে দূরে নদীর অববাহিকায় খাঁড়া পাহাড়ের গায়ে ‘বো’ জনগোষ্ঠীর সমাধিস্থল তৈরির কারণ সম্পর্কে অনেক মতামত প্রচলিত আছে। এই মতামতের সবগুলোই প্রাচীন আধ্যাত্মিক বিশ্বাসের সঙ্গে সম্পর্কিত।

বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর মধ্যে পূর্বপুরুষের উপাসনার রীতি হাজার পূর্বে থাকার প্রমাণ রয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে, অনেক চীনা জনগোষ্ঠীর লোকেরা তাদের মৃত প্রিয়জনদের বিশেষভাবে সমাহিত করতো। এর মূল কারণ ছিল পূর্বপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো। 

‘বো’ জনগোষ্ঠীর লোকেরা তাদের মৃত প্রিয়জনকে সন্তুষ্ট করার জন্য পাহাড়ের শক্ত জায়গায় সমাহিত করতো বলে ধারণা করা হয়। অনেকে মনে করেন, তাদের বিশ্বাস ছিল উঁচু স্থানে সমাহিত করা হলে পূর্বপুরুষদের আত্মা খুব খুশি হবে। আর পূর্বপুরুষরা সন্তুষ্ট হলে তারাও সুখে-শান্তিতে জীবনযাপন করতে পারবে বলে ধারণা ছিল ‘বো’ জনগোষ্ঠীর।

অন্য একটি মতবাদ থেকে জানা যায়, ‘বো’ জনগোষ্ঠীর লোকেরা আত্মা এবং দেহের অমরত্বে বিশ্বাসী ছিল। সে কারণেই মৃতদেহগুলো সুরক্ষিত রাখতে উঁচু পাহাড়ের ঢালে ঝুলন্ত কফিনে সমাহিত করতো, যাতে মৃতদেহগুলো দীর্ঘদিন ভালো থাকে।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়