ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪ ||  চৈত্র ১৫ ১৪৩০

বাণিজ্যিকভাবে পুদিনা পাতার চাষ

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৭:১৪, ২২ মে ২০২৩  

বাণিজ্যিকভাবে পুদিনা পাতার চাষ

বাণিজ্যিকভাবে পুদিনা পাতার চাষ

পুদিনা পাতা ঔষধিগুণসম্পন্ন মসলাজাতীয় ফসল। কৃষকরা এ ফসল আগে থেকেই চাষ করেন, তবে শুধু ওষুধ হিসেবে ব্যবহারের জন্য খুবই অল্প পরিমাণে জমিতে পুদিনা পাতা চাষ করা হতো। বর্তমানে কিছু কৃষক এ ফসল বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে অপ্রত্যাশিত লাভবান হচ্ছেন। বাজারে পুদিনা পাতার চাহিদাও বেড়েছে অনেক গুণ। লালমনিরহাট মসলা গবেষণা উপকেন্দ্র কৃষকদের পুদিনা পাতা বাণিজ্যিকভাবে চাষ করতে উদ্বুদ্ধ ও সহযোগিতা করছে। বোরহানি তৈরি করতে পুদিনা পাতার ব্যবহারও অনন্য। মসলা গবেষণা সূত্র জানায়, রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলা লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, রংপুর ও নীলফামারীতে এ বছর ১০০ জন কৃষক চার হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে পুদিনা পাতা চাষ করেছেন। প্রত্যেক কৃষক ৫-১৫ শতাংশ জমিতে এ ফসল চাষ করেছেন। প্রতি শতাংশ জমিতে ৮০-১০০ কেজি পুদিনা পাতা উৎপন্ন হয়ে থাকে। প্রতি কেজি পুদিনা পাতা ২০০-৩০০ টাকা কেজি দরে পাইকারি বিক্রি হয়ে থাকে। বাজারে প্রতি কেজি পুদিনা পাতা ৪০০-৫০০ টাকা দরে খুচরা বিক্রি হচ্ছে। পুদিনা পাতা চাষ করতে কৃষকদের তেমন খরচ হয় না। শুধু জৈব সার ব্যবহার ও সেচ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হয়। তবে অন্য ফসলের চেয়ে এ ফসলের পরিচর্যা বেশি করতে হয়। পানি জমে থাকে না এমন জমিতে এ ফসলের চাষ করতে হয়। সারা বছরই পুদিনা পাতা উৎপন্ন হয়ে থাকে। তবে বর্ষাকালে পুদিনা পাতার উৎপাদন কিছুটা ব্যাহত হয়। লালমনিরহাট সদর উপজেলার কর্ণপুর গ্রামের কৃষক রহুল আমীন বলেন, তিনি কয়েক বছর ধরে বসতভিটার পাশে ১০ শতাংশ জমিতে বাণিজ্যিকভাবে পুদিনা পাতার চাষ করছেন। প্রতি বছরই ১০ শতাংশ জমির পুদিনা পাতা বিক্রি করে ২ লক্ষাধিক টাকা আয় করছেন। সবজি বিক্রেতা ও হার্বাল মেডিসিন কোম্পানি তার কাছ থেকে পুদিনা পাতা কেনে। মাঝে-মধ্যে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভোক্তাদের কাছে পুদিনা পাতা পাঠিয়ে দেন তিনি। রুহুল আমীন বলেন, ’২৩ বছর আগে ঔষধি হিসেবে বসতভিটার পাশে পুদিনা পাতার কয়েকটি চারা রোপণ করি। তিন-চার বছর পর ১০ শতাংশ জমিতে পুদিনা পাতা চাষ শুরু করি। এখন পুদিনা পাতার চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। পুদিনা পাতা ভর্তা ও শরবত করে খাওয়া যায়। পেটের যে কোনো সমস্যা দূর করতে পুদিনা পাতার উপকারিতা অপরিসীম। রক্ত সঞ্চালনে পুদিনা পাতা খুবই জরুরী। আমাদের গ্রামে প্রায় সব বাড়িতে পুদিনা পাতা চাষ করা হয়। কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে আমি একাই পুদিনা পাতার চাষ করছি। অনেকে আমার গাছ থেকে পুদিনা পাতার চাষ পদ্ধতি শিখে চারা নিয়ে যাচ্ছেন’। লালমনিরহাট সদর উপজেলার ভাটিবাড়ী গ্রামের কৃষক অনিল চন্দ্র রায় বলেন, তিনি আগে থেকে পুদিনা পাতা চাষ করতেন, তবে তা বাণিজ্যিক ছিল না। দুই বছর থেকে তিনি ৫ শতাংশ জমিতে বাণিজ্যিকভাবে পুদিনা পাতা চাষ করছেন। পুদিনা পাতা চাষ করে অপ্রত্যাশিতভাবে লাভবান হচ্ছেন। গ্রামের লোকজন তার কাছ থেকে পুদিনা পাতা নেন ওষুধ হিসেবে ব্যবহারের জন্য। তিনি বলেন, ‘পুদিনা পাতা উৎপন্ন করতে আমাদের তেমন খরচ হয় না, তবে নিয়মিত পরিচর্যা করতে হয়’। লালমনিরহাট শহরে গোশালা বাজারে সবজি বিক্রেতা আবদুস সালাম বলেন, তারা বিভিন্ন স্থান থেকে কৃষকদের কাছ থেকে পুদিনা পাতা কেনেন। প্রতি কেজি পুদিনা পাতা ৩০০-৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন। পুদিনা পাতার অধিকাংশ ভোক্তাই হলেন শহরের অধিবাসী। অনেক সময় পুদিনা পাতার জন্য অগ্রিম অর্ডারও পাওয়া যায়। আমরা কৃষকদের কাছ থেকে পুদিনা পাতা কিনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাইকারদের কাছে পাঠিয়ে দেই। লালমনিরহাট মসলা গবেষণা উপকেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোস্তাক আহমেদ  বলেন, ঔষধিগুণসম্পন্ন মসলাজাতীয় পুদিনা পাতা এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু হয়েছে। রংপুর অঞ্চলের বিভিন্ন গ্রাম থেকে কৃষকরা তাদের কাছ থেকে পুদিনা পাতার চারা সংগ্রহ করছেন। কৃষকদের পুদিনা পাতা উৎপাদনে টেকনিক্যাল পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে পুদিনা পাতা চাষে সফলতা অর্জনকারী কৃষক হলেন রুহুল আমীন। তার মাধ্যমেও কৃষকদের বাণিজ্যিভাবে পুদিনা পাতা চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। পুদিনা পাতার চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। মানুষ এখন খুবই স্বাস্থ্য সচেতন। শুধু ফাস্ট ফুড ও রেস্টুরেন্টে পুদিনা পাতা খাচ্ছেন না, তারা বাড়িতেও নিয়মিত পুদিনা পাতার ব্যবহার করছেন। আমরা চায়ের সঙ্গে নিয়মিত পুদিনা পাতা খাচ্ছি। কৃষকরা পুদিনা পাতা উৎপন্ন করলে তা বিক্রির জন্য কোনো সমস্যায় পড়তে হবে না।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়