ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

ব্যাংক নিয়ে বিএনপির নীলনকশা যেভাবে ব্যর্থ হলো

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:৪১, ৩ ডিসেম্বর ২০২২  

ব্যাংক নিয়ে বিএনপির নীলনকশা যেভাবে ব্যর্থ হলো

ব্যাংক নিয়ে বিএনপির নীলনকশা যেভাবে ব্যর্থ হলো

বিএনপি নেতারা চেয়েছিলেন ব্যাংকিং খাতে একটি গোলযোগ সৃষ্টি করতে। ব্যাংকে টাকা নেই এরকম একটি গুজব ছড়িয়ে কিছু ব্যাংককে দেউলিয়া বানিয়ে ফেলতে। পাশাপাশি জনগণের মধ্যে একটা অনাস্থা এবং আতঙ্ক সৃষ্টি করতে। আর সেজন্যই গুজব ছড়ানো হয়েছিল যে, ব্যাংকে টাকা নেই। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্রুত এবং দায়িত্বশীল আচরণের কারণে এই নীলনকশা বাস্তবায়ন হয়নি। একাধিক সূত্র বাংলা ইনসাইডারকে নিশ্চিত করেছেন যে, ব্যাংকে তারল্য সংকট, ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যাবে, ব্যাংক টাকা দিতে পারছে না ইত্যাদি প্রচারণার পিছনে ছিলো বিএনপির একটি নীলনকশা।

এই নীলনকশার মূল মাস্টারপ্ল্যান এসেছিল লন্ডন থেকে। বিএনপিকে কিছু কিছু বুদ্ধিজীবী ধারণা দিয়েছিল যে, শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশে আইএমএফ এর কাছ থেকে ঋণের টাকা পাবে না। এজন্য বিএনপির পক্ষ থেকে একটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করা হয়েছিল যারা আইএমএফকে বাংলাদেশ সম্পর্কে কিছু তথ্য দিতে এবং সেই সমস্ত তথ্যের ভিত্তিতে আইএমএফ বাংলাদেশকে ঋণ দিতে অপারগতা জানাবে। বিএনপি নেতাদের ধারণা ছিলো যে, এই ধরনের সিদ্ধান্ত যদি শেষ পর্যন্ত আইএমএফ নেয় তাহলে সরকারের জন্য একটা কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হবে, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে সরকারের ইমেজ তলানিতে চলে যাবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিএনপির ওই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। আইএমএফ বাংলাদেশকে ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা দিতে সম্মত হয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে প্রথম ঋণ পাওয়া যাবে। আইএমএফ যখন বাংলাদেশকে ঋণ দিতে সম্মত হলো ঠিক তার পরপরই ‘ব্যাংকে টাকা নেই’ শীর্ষক গুজব ছড়ানো হলো।

একাধিক অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, বিএনপি প্রথম সারির পাঁচজন নেতা নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। বিএনপির একজন প্রভাবশালী নেতা একটি স্ট্যাটাস দিয়ে বলেন যে, ‘ব্যাংকে ৫ লাখ টাকা তুলতে গিয়েছিলাম কিন্তু ব্যাংকে টাকা নেই, কি হবে।’ এই স্ট্যাটাসকে অনুসরণ করে বিএনপির আরও অন্তত ৫ জন নেতা ভিন্ন ভিন্ন অংক বসিয়ে ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে প্রায় একই রকম স্ট্যাটাস দেন, যার মূল বক্তব্য হলো তারা ব্যাংকে গিয়েছিলেন কিন্তু ব্যাংকে গিয়ে টাকা পাননি।

গোয়েন্দা সূত্রগুলো এই পাঁচজন নেতাকে চিহ্নিত করেছেন এবং এ ব্যাপারে অনুসন্ধান করে দেখা গেছে যে, যারা এই সমস্ত স্ট্যাটাসগুলো দিয়েছেন তারা আদৌ ব্যাংকে ঐদিন ওই পরিমাণ টাকা তোলার জন্য কোনো চেক দেননি এবং এবং তাদের যে সমস্ত ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট রয়েছে সে সমস্ত ব্যাংকে ওই দিন কোনো টাকাই তাদের অ্যাকাউন্ট থেকে উত্তোলন করার জন্য কোনোরকম চেক প্রদান করা হয়নি। তাহলে কীসের ভিত্তিতে তারা এটি দিলেন?

বিএনপির একজন নেতা তার বাড়িতে কর্মীদের ডেকে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, যার ব্যাংকে যাকে যত টাকা আছে সে একাউন্ট থেকে টাকা তুলতে হবে। তাদের কথায় কিছু কিছু বিএনপির নেতা ব্যাংকে লাইন ধরে দাড়িয়ে টাকা উত্তোলন শুরু করেছিলেন। তবে টাকা উত্তোলনের চেয়েও ওই কর্মীরা ফেসবুকে নানা রকম স্ট্যাটাস দিতে থাকেন যাতে জনমনে আতঙ্ক এবং উদ্বেগ সৃষ্টি হয়। বিএনপির লক্ষ ছিল যে, এই সমস্ত ফেসবুকের স্ট্যাটাস এবং ইউটিউবের ভাষ্য দেখে যাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট আছে তারা সকলেই ব্যাংকে যাবে এবং টাকা উত্তোলন করবে।

যেকোনো একটি ব্যাংকের শাখায় সব গ্রাহকরা যদি টাকা উত্তোলনের জন্য যান তাহলে সেই ব্যাংকের শাখাটি তা দিতে অক্ষম, এটি সার্বজনীন একটি বিষয়। কাজেই এই ফাঁদেই ব্যাংকগুলোকে ফেলতে চেয়েছিল বিএনপি। কিন্তু সাধারণ মানুষরা খুব দ্রুতই বুঝতে পারে যে, এটা বিএনপির কৌশল। তাছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকও দ্রুত এ বিষয়ে বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে যার ফলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। বিএনপি=র আরেকটি নীলনকশা ভেস্তে গেছে।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়