ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া মুক্ত দিবস আজ

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:০৬, ৬ ডিসেম্বর ২০২১  

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

আজ (৬ ডিসেম্বর) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালে এই দিনে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর কবল থেকে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে আখাউড়া মুক্ত হয়। 

বীর মুক্তিযোদ্ধারা অসীম সাহসে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীকে পরজিত করে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেন পৌর শহরের সড়ক বাজার  পোস্ট অফিসের সামনে। আখাউড়া মুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা মুক্ত হতে শুরু করে। 

২৫ মার্চ রাতে পাক বাহিনী ঢাকায় আক্রমণ করলে সে দিন থেকেই সারা বাংলাদেশে পাক বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের ত্রিপুরা ঘেষা আখাউড়া ছিল পূর্বাঞ্চলীয় প্রবেশদার ৭১ রণাঙ্গনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জনপদ ছিল। এ যুদ্ধে এলাকার মানুষদের অবদান সবচেয়ে বেশি। 

এদিকে বোরবার সন্ধ্যায় পৌর শহরের সড়ক বাজার অ্যাডভোকেট সিরাজুল হক মুক্তমঞ্চে সন্ধ্যায় হঠাৎ করে জ্বলে উঠল এক হাজার প্রদীপ। 

স্থানীয় লোকজন উৎসব মুখর পরিবেশে এ দৃশ্য দেখেন। মুহূর্তের মধ্যে মুক্তমঞ্চের চারদিকে লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে। প্রদীপ প্রজ্জলনের সময় এক মিনিট বিদ্যুৎ বন্ধ রাখা হয়। তাছাড়া এদিকে দিনটিকে স্মরণ করে রাখতে উপজেলা প্রশাসন, পৌর প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড দুইদিন ব্যাপী নানা কর্মসূচি হাতে নেন। এরমধ্যে সন্ধ্যায়  এক হাজার প্রদীপ প্রজ্জলন করা হয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইউএনও রুমানা আক্তার, পৌরসভা মেয়র তাকজিল খলিফা কাজল, সাবেক বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সৈয়দ জামশেদ শাহ, মো. বাহার মিয়া, উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক সাবেক অধ্যক্ষ জয়নাল আবেদীন, যুগ্ম আহবায়ক মো. মনির হোসেন, মো. সেলিম ভূইয়া, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল হালিম হেলাল, বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন স্বাধীনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
  
তাছাড়া সোমবার স্থানীয় স্মৃতিসৌধে পুস্পমাল্য অর্পণ, আনন্দ র‌্যালি, পোস্ট অফিসের স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। 

১৯৭১ সালে ৭ মার্চ জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের পর থেকে আখাউড়া উপজেলার সর্বস্তরের জনগণ মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। মুক্তিযোদ্ধা পরিচালনার জন্য দেশ প্রেমিক, বুদ্ধিজীবী, ছাত্র, যুবক, শ্রমিকনেতা কর্মীসহ সর্বস্তরের জনগণের উপস্থিতিতে আখাউড়ায় গঠন করা হয় সর্ব দলীয় সংগ্রাম পরিষদ। ওই পরিষদের নেতৃত্বে ছিলেন কাজী ওয়াহেদুর রহমান লিলু মিয়া। 

এস ফোর্সের অধিনায়ক লে. কর্নেল সফিউল্লার তত্বাবধানে এ যুদ্ধ চলতে থাকে। ৩০ নভেম্বর ও ১লা ডিসেম্বর আখাউড়া উত্তরে সীমান্তবর্তী আজমপুর, রাজাপুর, সিঙ্গারবিল, মিরাশানি এলাকায় আধুনিক অস্ত্রে সস্ত্রে পাক বাহিনীর সঙ্গে মুক্তি বাহিনীর যুদ্ধ হয়। টানা ৩ দিন চলে এ যুদ্ধ।  

এ যুদ্ধ অন্তত ৩৫ পাক সেনা নিহত হয়। বন্দী করা হয় ৫ জনকে। মুক্তি বাহিনীর নায়েক সুবেদার আশরাফ আলী খান এ সময় শহীদ হন। আহত হয় অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মারমুখি আক্রমণে পাক বাহিনী দাঁড়াতে পাড়েনি। তারা তখন পিছু হটতে লাগলেন। ৩ ডিসেম্বর রাতে মুক্তিবাহিনীরা আজমপুর অবস্থান নিলে সেখানেও অভিরাম যুদ্ধ হয়। ওই যুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর ১১ জন সৈন্য নিহত হয়। 

মুক্তিবাহিনীর ২ সিপাহী ও ১ নায়েক সুবেদার শহীদ হন। ৪ও ৫ ডিসেম্বর যুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর প্রায় ১৭০ জন সৈন্য নিহত হয়। তখন গোটা আখাউড়া এলাকা মুক্তিবাহিনীর দখলে চলে আসে। অভিরাম যুদ্ধের পর  ৬ ই ডিসেম্বর আখাউড়া পুরোপুরি হানাদার মুক্ত হয়।

তাছাড়া আখাউড়া থানা খণ্ড যুদ্ধের উল্লেখযোগ্য স্থানগুলো হলো খরমপুর, দেবগ্রাম, তারাগন, নয়াদিল, দরুইন, টানমান্দাইল, গঙ্গাসাগর, কর্নেল বাজার, মনিয়ন্দসহ বিভিন্ন স্থান রয়েছে। আখাউড়ার মাটিতে রয়েছে অসংখ্য গণ কবর। বীর শেষ্ঠ মোস্তফা কামাল আখাউড়ার মাটিতেই শহীদ হন। তাছাড়া বীর উত্তম শহীদ সাফিলের জম্ম আখাউড়ার মাটিতেই। 

আরও পড়ুন
সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়