ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বড় হচ্ছে পোশাকের অপ্রচলিত বাজার

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:৫৪, ১৪ জানুয়ারি ২০২৩  

বড় হচ্ছে পোশাকের অপ্রচলিত বাজার

বড় হচ্ছে পোশাকের অপ্রচলিত বাজার

অপ্রচলিত বাজারে দেশের পোশাক রফতানি বাড়ছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) অপ্রচলিত বাজারে পোশাক রফতানি বেড়েছে ৩২ শতাংশের বেশি। আগের অর্থবছরের এই সময়ে প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় সাড়ে ২৮ শতাংশ। এদিকে, পোশাক রফতানির প্রধান বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) প্রথম ৬ মাসে পোশাক রফতানি বেড়েছে ১৬ দশমিক ৬১ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ১ দশমিক ১১ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ১১ দশমিক ৮৯ শতাংশ ও কানাডায় ২৮ দশমিক ৪২ শতাংশ। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে এ তথ্য উঠে এসেছে। অপ্রচলিত বাজার বড় হওয়াকে ইতিবাচক ইঙ্গিত হিসাবে দেখছেন পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা। রফতানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভবিষ্যতে অপ্রচালিত বাজার আরও বড় হবে বলে প্রত্যাশা তাদের।

দেশের পোশাক রফতানির প্রধান বাজার ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। এর বাইরের বাজারগুলো অপ্রচলিত বাজার হিসাবে পরিচিত। এই বাজারের মধ্যে রয়েছে জাপান, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, ভারত, কোরিয়া রিপাবলিক, চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মেক্সিকো, সৌদি আরব, তুর্কি, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, চিলি, ব্রাজিল ও অন্যান্য দেশ।

ইপিবি’র পরিসংখ্যান বলছে, অপ্রচলিত বাজারগুলোতে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে পোশাক রফতানি বেড়েছে ৩২ দশমিক ১৯ শতাংশ। আগের অর্থবছরের (২০২১-২২) একই সময়ে রফতানি বেড়েছিল ২৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ। দেশের পোশাক মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ’র তৈরি এক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) অপ্রচলিত বাজারে পোশাক রফতানি হয়েছে ৪ হাজার মিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। আগের অর্থবছরে এই আয় ছিল প্রায় ৩ হাজার মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ বছর ব্যবধানে অপ্রচিলত বাজারে পোশাক রফতানি বেড়েছে প্রায় এক হাজার মিলিয়ন ডলার।

তথ্যমতে, অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সবচেয়ে বেশি পোশাক রফতানি বেড়েছে মালয়েশিয়ায়। দেশটিতে দেশের পোশাক রফতানি বেড়েছে ৯৭ দশমিক ৫২ শতাংশ। রফতানি বৃদ্ধির দিক থেকে পরের অবস্থানে রয়েছে তুর্কি, দেশটিতে পোশাক রফতানি বেড়েছে ৮৩ দশমিক ৭০ শতাংশ। জাপানে ৪২ দশমিক ৫৪ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়ায় ২৯ দশমিক ৫২ শতাংশ, ভারতে ৪৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ, কোরিয়ায় ৩৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ, চীনে ১৫ দশমিক ২৭ শতাংশ, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২২ দশমিক ২৮ শতাংশ, মেক্সিকোতে ৫১ দশমিক ১২ শতাংশ, সৌদি আরবে ৪১ দশমিক ৬২ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকায় ৭ শতাংশ ও ব্রাজিলে ৫৭ শতাংশ রফতানি বেড়েছে। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে রাশিয়ায় রফতানি কমেছে ৪৭ শতাংশ। এছাড়া চিলিতে রফতানিতে কমেছে ৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

এদিকে, দেশের পোশার রফতানির প্রধান বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) প্রথম ৬ মাসে পোশাক রফতানি বেড়েছে ১৬ দশমিক ৬১ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ১ দশমিক ১১ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ১১ দশমিক ৮৯ শতাংশ ও কানাডায় ২৮ দশমিক ৪২ শতাংশ।

ইপিবির তথ্যমতে, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নে দেশর পোশাক রফতানি বেড়ে ১১.৫০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। গত ২০২১-২০২২ অর্থবছরের একই সময়ে রফতানি ছিল ৯.৮৭ বিলিয়ন ডলার। চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে স্পেন এবং ফ্রান্সে রফতানি ১৭.৬২ শতাংশ এবং ৩৩.০৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১.৭০ বিলিয়ন ডলার ও ১.৪১ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। পোল্যান্ডে দেশের রফতানি ১৮.৪৩ শতাংশ কমেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দেশের তৈরি পোশাক রফতানি ৪.২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যেখানে যার প্রবৃদ্ধি মাত্র ১.১১ শতাংশ । যুক্তরাজ্য ও কানাডায় রফতানি ১১.৮৯ ও ২৮.৪২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে যথাক্রমে ২.৩৯ বিলিয়ন ডলার এবং ৭৭৪.১৬ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

জানতে চাইলে পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘যদি ইউরোপীয় ইউনিয়নে আমাদের প্রধান রফতানি বাজারগুলোর দিকে লক্ষ করি, তাহলে দেখতে পাই, জার্মানিতে আমাদের রফতানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ বেড়ে ৩ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে স্পেন এবং ফ্রান্সে আমাদের রফতানি যথাক্রমে ১৭ দশমিক ৬২ শতাংশ ও ৩৩ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ বেড়ে ১ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার এবং ১ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। অপ্রচলিত বাজারে আমাদের পোশাক রফতানি আগের বছরের একই সময়ের তুলায় ৩২.১৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩.০৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ৪.০৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। প্রধান দেশগুলোতে তৈরি পোশাক রফতানিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা গেলেও চলতি অর্থবছরের আগের মাসগুলোর তুলনায় প্রবৃদ্ধি কমেছে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে আগামী মাসে প্রবৃদ্ধি আরও হ্রাস পেতে পারে।’

দেশের নীটওয়্যার পোশাক মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘আমরা বেশ কয়েক বছর ধরেই অপ্রচলিত বাজারে মনোযোগ দিচ্ছি। কারণ প্রচলিত বাজারে আমাদের যা রফতানি হওয়ায়, যেভাবে বাজার ধরার কথা ছিল, সেখানে সেই রফতানি হচ্ছে। অপ্রচলিত বাজারে আরও অনেক বেশি রফতানি বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। সরকার অপ্রচালিত বাজারে রফতানির ক্ষেত্রে প্রণোদনা দিচ্ছে। এর কারণেও অপ্রচলিত বাজারে রফতানি বাড়ছে।’

তিনি বলেন, ‘চীন অনেক বাজার থেকে নিজেদের সরিয়ে নিচ্ছে। যেমন জাপান চীন থেকে সরে গেছে। সেখানে একটা গ্যাপ তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ সেই গ্যাপ পূরণের চেষ্টা করছে। চীন যেসব যায়গা থেকে সরে গেছে সেখানে বাংলাদেশের জন্য সুযোগ তৈরি হয়েছে, অপ্রচালিত বাজারে রফতানি বাড়ার এটিও একটি কারণ। অর্থাৎ পোশাক রফতানিতে অপ্রচলিত বাজার বড় হচ্ছে। সেখানে আমাদের রফতানির পরিমাণ বাড়ছে এবং ভবিষ্যতে আরও বাড়বে।’

জানতে চাইলে এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি ও বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বিশ্বব্যাপী মন্দার মধ্যেও প্রচলিত ও অপ্রচলিত সব বাজারে পোশাক রফতানি বৃদ্ধি সত্যিকার অর্থেই অপ্রত্যাশিত। এটি বিস্ময়কর পারফরমেন্স। কারণ বিশ্বে মন্দা চলছে। সব ধরনের উপকরণের দাম বেড়েছে। আমরা আমাদের পণ্যের সঠিক দাম পাচ্ছি না। ক্রয়াদেশও কমেছে। সবমিলিয়ে মুনাফা করা যাচ্ছে না। প্রতিযোগীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে কোনোরকমে টিকে আছি। এরমধ্যেও আমাদের রফতানি বেড়েছে, প্রবৃদ্ধি ভালো হয়েছে- এটি নিঃসন্দেহে উৎসাহব্যাঞ্জক ও আনন্দের খবর।’

বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘অপ্রচলিত বাজার নিয়ে আমরা কাজ করছি। দেশগুলোতে রফতানি বাড়াতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জাপান, মালয়েশিয়া ও ভারতে রফতানি বাড়াতে আমাদের নানামুখী কাজ চলছে। ভবিষ্যতে চীনেও আমাদের রফতানি বাড়বে। নতুন বছরে আমাদের বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রথম কয়েক মাস হয়ত রফতানিতে নেতিবাচক প্রবণতা থাকতে পারে। তবে অন্যদের তুলনায় আমাদের রফতানি প্রবৃদ্ধি বেশি থাকবে বলে প্রত্যাশা।’

সর্বশেষ
জনপ্রিয়