ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

মুনিয়ার আত্মহত্যার মামলায় আনভীরকে অব্যাহতি

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৭:০৪, ২৩ জুলাই ২০২১   আপডেট: ১৭:০৫, ২৩ জুলাই ২০২১

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর গুলশানের একটি ফ্ল্যাটে মোসারাত জাহান মুনিয়ার আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলায় বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরের জড়িত থাকার সত্যতা মেলেনি। এজন্য মামলাটি থেকে তার অব্যাহতি চেয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে পুলিশ। 

গত ১৯ জুলাই ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী এ প্রতিবেদন দাখিল করেন।

বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখা সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে। 

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২৬ এপ্রিল সন্ধ্যার পর গুলশান-২ এর ১২০ নম্বর রোডের ১৯ নম্বর ফ্ল্যাট থেকে মোসারাত জাহান (মুনিয়া) নামের এক তরুণীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ওই তরুণীর বোন নুসরাত জাহান বাদী হয়ে গুলশান থানায় বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরকে আসামি করে মামলা করেন।

বাদী মামলার এজাহারে বলেন, মোসারাত জাহান (২১) মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী। দুই বছর আগে মামলার আসামি সায়েম সোবহান আনভীরের (৪২) সঙ্গে মোসারাতের পরিচয় হয়। পরিচয়ের পর থেকে তারা বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় দেখা করতেন এবং সব সময় মোবাইলে কথা বলতেন। একপর্যায়ে দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। 

২০১৯ সালে মোসারাতকে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে আনভীর রাজধানীর বনানীতে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন। সেখানে তারা বসবাস করতে শুরু করেন। ২০২০ সালে আসামির পরিবার এক নারীর মাধ্যমে এ প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি জানতে পারে। এরপর আসামির মা মোসারাতকে ডেকে ভয়ভীতি দেখান এবং তাকে ঢাকা থেকে চলে যেতে বলেন। আসামি কৌশলে তার (বাদী নুসরাতের) বোনকে কুমিল্লায় পাঠিয়ে দেন এবং পরে বিয়ে করবেন বলে আশ্বাস দেন। 

সবশেষ ২০২১ সালের ১ মার্চ মোসারাতকে প্ররোচিত করেন আনভীর। তিনি বাসা ভাড়া নিতে বাদী নুসরাত ও তার স্বামীর পরিচয়পত্র নেন। ফুসলিয়ে তিনি মোসারাতকে ঢাকায় আনেন। তিনি গুলশানের ১২০ নম্বর সড়কে বাসা (ফ্ল্যাট-বি-৩) ভাড়া নেন। ফ্ল্যাটের একটি কক্ষে আনভীর ও মুনিয়া স্বামী-স্ত্রীর মতো ছবি তুলে তা বাঁধিয়ে রাখেন। আনভীর বাসায় এলে কক্ষটি পরিপাটি করে রাখা হতো। বোনের মাধ্যমে মামলার বাদী জানতে পারেন, আসামি তাকে বিয়ে করে বিদেশে স্থায়ী হবেন। কারণ, দেশে থাকলে আনভীরের মা–বাবা তাকে কিছু না করলেও তার বোনকে (মুনিয়া) মেরে ফেলবেন। গত ১ মার্চ থেকে আনভীর মাঝে মধ্যে ফ্ল্যাটে আসা-যাওয়া করতেন।

বাদী এজাহারে আরো বলেন, ২৩ এপ্রিল মোসারাত তাকে ফোন করেন। মোসারাত তাকে বলেছেন, আনভীর তাকে বকা দিয়ে বলেছেন, কেন তিনি (মোসারাত) ফ্ল্যাটের মালিকের বাসায় গিয়ে ইফতার করেছেন, ছবি তুলেছেন। ফ্ল্যাটের মালিকের স্ত্রী ফেসবুকে ছবি পোস্ট করেছেন। এ ছবি ‌পিয়াসা দেখেছেন। পিয়াসা মালিকের স্ত্রীর ফেসবুক বন্ধু। এখন পিয়াসা তার মাকে সবকিছু জানিয়ে দেবেন। তিনি (আনভীর) দুবাই যাচ্ছেন, মোসারাত যেন কুমিল্লায় চলে যান। আসামির মা জানতে পারলে তাকে (মোসারাত) মেরে ফেলবেন। দুদিন পর ২৫ এপ্রিল মোসারাত তাকে ফোন করেন। 

ওই সময় তিনি কান্নাকাটি করে বলেন, আনভীর তাকে বিয়ে করবেন না, শুধু ভোগ করেছেন। আসামিকে উদ্ধৃত করে মোসারাত বলেন, আসামি তাকে বলেছেন, তিনি (মোসারাত) তার শত্রুর সঙ্গে দেখা করেছেন।

মোসারাতকে তিনি ছাড়বেন না। মোসারাত চিৎকার করে বলেন, আসামি তাকে ধোঁকা দিয়েছেন। যেকোনো সময় তার বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তারা (বাদী নুসরাতের পরিবার) যেন দ্রুত ঢাকায় আসেন। নুসরাত তার আত্মীয়-স্বজন নিয়ে বেলা দুইটার দিকে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় রওনা দেন। আসার পথে বারবার মোসারাতের ফোনে ফোন করেন, কিন্তু তিনি আর ফোন ধরেননি। গুলশানের বাসায় পৌঁছে দরজায় নক করলে ভেতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে নিচে নেমে আসেন। তারা নিরাপত্তারক্ষীর কক্ষ থেকে বাসার ইন্টারকমে ফোন করেন। পরে ফ্ল্যাটের মালিকের নম্বরে ফোন দিলে মিস্ত্রি এনে তালা ভেঙে ঘরে ঢোকার পরামর্শ দেন। মিস্ত্রি ডেকে তালা ভেঙে ভেতরে ঢোকার পর তিনি দেখেন, তার বোন ওড়না পেঁচিয়ে শোয়ার ঘরের সিলিংয়ে ঝুলে আছেন।

এজাহারে আরো উল্লেখ করা হয়, পুলিশ এসে ওড়না কেটে মোসারাতের মৃতদেহ নামায়। আলামত হিসেবে আসামির সঙ্গে ছবি, আসামির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে লেখা ডায়েরি ও তার ব্যবহৃত দুটি মুঠোফোন নিয়ে যায় পুলিশ।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়