ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে রং তুলিতে ফুটে উঠলো লোকজ ঐতিহ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৪:২৯, ৭ নভেম্বর ২০২২  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

সৌন্দর্য বৃদ্ধি আর লোকজ ঐতিহ্য তুলে ধরতে সড়কের পাশে চিত্রাঙ্কনের কাজ করেছে একদল শিল্পী। রং তুলির ছোঁয়ায় সড়কের দুই পাশের ঢালে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে, লতাপাতা, ফুল-পাখির পাশাপাশি বাংলার বিলুপ্তপ্রায় চিত্রকর্ম। আর এসব চিত্রকর্ম দেখতে ভিড় করছেন স্থানীয়রা। স্পটগুলো পরিণত হয়েছে বিনোদন কেন্দ্রে।

ময়মনসিংহ জেলা শহর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে গফরগাঁও উপজেলার এশিয়ান হাইওয়ের ঢালী বাড়ি মোড়ে সড়কের পাশে বিভিন্ন চিত্রকর্ম ফুটিয়ে তুলেছেন একদল চিত্রশিল্পী। এই চিত্রাঙ্কন দিয়ে গফরগাঁও উপজেলাকে দেশের মডেল টাউন হিসাবে গড়ে তুলতে চান ডেনমার্ক প্রবাসী বিখ্যাত চিত্রশিল্পী রুহুল আমীন কাজল।

চিত্রকর্ম দেখতে আসা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মিথুন আহমেদ বলেন, এসব চিত্রকর্ম মনোমুগ্ধকর। বাচ্চারা খুবই আনন্দ পায়। লোকজ ঐতিহ্য ফুটিয়ে তোলায় সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ।

ডেনমার্ক প্রবাসী বিখ্যাত চিত্রশিল্পী রুহুল আমীন কাজল ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা রঙ তুলির ছোঁয়ায় ফুটিয়ে তুলছেন বিভিন্ন চিত্রকর্ম। লোকজ সুন্দর প্রকল্পের নামে এই দল একদিকে তুলে ধরছে গফরগাঁওয়ের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য অন্য দিকে এই উপজেলা সম্পর্কে মানুষের মনের ভুল ধারণা মুছে দিতে। আগামী পাঁচ বছরে বিভিন্ন জায়গায় গফরগাঁওয়ের ঐতিহ্য, লোকজ সংস্কৃতি তুলে ধরতে তিনশ থেকে চারশো চিত্রকর্ম করা হবে।

১৯৯৪ সালে সুইডেনে কার্নিভালে ট্রাফিক আর্ট (সড়কচিত্র) এঁকে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লেখান গফরগাঁও উপজেলার মশাখালী ইউনিয়নের চিত্রশিল্পী রুহুল আমিন কাজল। তিনি ইউরোপের নানা দেশে ছবি একে সুনাম অর্জন করেছেন। এই শিল্পীর কলোনি সিরিজের চিত্রকর্মগুলো বেশ সমাদৃত। তিনি ডেমোক্রজি, কিলিজিয়ন, ইভিলাইজেশন' শিরোনাম ব্যবহার করে নতুন শব্দ তৈরি করেছেন। নিজ জন্মস্থানের শিল্প, নান্দনিকতা ও সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতেই তিনি মহাসড়কে এঁকেছেন এসব চিত্রকর্ম।

চিত্রশিল্পী কাজলের সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন চিত্রশিল্পী জ. ই. সুমন। তিনি বলেন, আমরা ১০ অক্টোবর থেকে সড়ক চিত্রাঙ্কনের কাজ শুরু করেছিলাম। এই সড়ক চিত্রাঙ্কনের কাজ চলেছে গত ৫ নভেম্বর পর্যন্ত। আমাদের এই প্রজেক্ট ২০ দিন চলার কথা ছিল। কিন্তু, বৃষ্টি কারণে ও শুক্রবারে বন্ধ ছিল। যে কারণে পাঁচদিন বেশি কাজ করেছি।

তিনি বলেন, রুহুল আমিন কাজলের জন্ম জেলার গফগাঁওয়ে। তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজ করছেন। তাই, তিনি এখন নিজের দেশে কাজ করবেন বলে গফরগাঁওয়ে সড়ক চিত্রাঙ্কনের কাজ শুরু করেছেন। এরপর দেশব্যাপী তিনি চিত্রাঙ্কনের কাজ করবেন।

সুমন বলেন, এখানে যারা সড়ক চিত্রাঙ্কনের কাজ করছেন। তাদের সবাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড্রয়িং অনার্স-মাস্টার্স করেছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ড্রয়িংয়ে অনার্স মাস্টার পড়ুয়া অনেক শিক্ষার্থী রয়েছেন। আমি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ড্রয়িং পেইন্টিংয়ে অনার্স মাস্টার করে ঢাকা বেশ কিছুদিন কাজ করেছি। আমাদের মতো সবাই যদি নিজ জন্মস্থান ছেড়ে বাইরে চলে যায়। তাহলে নিজ এলাকার উন্নয়নের কাজ কে করবে। এসব চিন্তা করেই নিজ এলাকাতে কাজ শুরু করেছি এবং দেশব্যাপী আমরা এই কাজ করব বলে চিন্তা করেছি।

‘এলাকায় শিশু কিশোরদের জন্য চিত্রাঙ্কন শেখার ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা আছে আমাদের। এটা কাজল ভাইয়ের পছন্দ হয়েছে। তিনি আমাদের সহায়তা করবেন। আমরা অচিরেই শিশু কিশোরদের চিত্রাঙ্কন শেখানোর কাজ শুরু করব।’

তিনি আরও বলেন, আমরা গফরগাঁও উপজেলাকে দেশের মধ্যে একটি মডেল টাউন হিসাবে গড়ে তুলব। এখানে যে দিকেই মানুষ তাকাবে, সেদিকেই আমাদের চিত্রাঙ্কন দেখতে পারবে এবং চিত্রাঙ্কনে শিক্ষণীয় অনেক বিষয় থাকবে। যা দেখে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম শিখবে এবং দেশর জন্য কাজ করবে।

চিত্রশিল্পী কাজল বলেন, আমি ১৯৮৬ সালে ডেনমার্কে চলে যাই। এখনো সেখানেই বসবাস করি। কিন্তু দেশের প্রতি ভালবাসা থেকে প্রতিবছরই দেশে আসি। এইবার দেশে এসে স্থানীয় সংসদ সদস্য ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের কাছে সড়কের দুই পাশে চিত্রাঙ্কনের আগ্রহের কথা বলি। সংসদ সদস্যের সম্মতি ও পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে চিত্রাঙ্কন শুরু করি। এই সড়ক চিত্রাঙ্কন দিয়ে গফরগাঁও উপজেলাকে দেশের মডেল টাউন হিসাবে গড়ে তুলতে চাই।

তিনি আরও বলেন, আমি প্রতি বছর দেশে ২১শে ফেব্রুয়ারি পালন করি। প্রতিবছর এসময় আমি চিত্রাঙ্কনের কাজ করে থাকি। যতদিন বেঁচে আছি, আমি প্রতিবছর দেশে এসে চিত্রাঙ্কনের কাজ করব।

আরও পড়ুন
সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়