ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

রাজাকারদের প্রত্যক্ষ সহায়তায় গণহত্যা ও ধর্ষণ করেছে পাকিস্তানি সেনারা

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:৩৯, ৬ ডিসেম্বর ২০২১  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

১৯৭১ সালের মার্চ মাসে পাকিস্তানি সেনারা যখন বাঙালি জাতির ওপর নির্মম গণহত্যা ও ধর্ষণে মেতে ওঠে, ঠিক তখনই তাদের সহায়তার জন্য বাঙালিদের মুষ্ঠিমেয় একটি অংশকে নিয়ে গঠন করা হয় বিশেষ বাহিনী। মূলত এখানে বসবাসকারী অবাঙালিদের মধ্য থেকে ১৩ হাজার সদস্যকে নিয়ে গঠিত হয় ইপকাফ, জেনারেল জামশেদ ছিল এর প্রধান। স্থানীয় বাঙালি দালালদের নিয়ে গঠন করা হয় মুজাহিদ ও রাজাকার বাহিনী। এছাড়াও বিশেষ অপারেশনের জন্য আল বদর ও আল শামস নামে আরো দুটি বিশেষ বাহিনী গঠন করে পাকিস্তানি জান্তারা। এসবের প্রধান ছিল গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মুজাহিদরা।

রাজাকার, আল বদর ও আল শামস বাহিনীর ব্যাপারে পাকিস্তানি জেনারেল এ কে নিয়াজী তার আত্মজীবনীতে লিখেছে, এসব বাহিনীর সবাই ছিল স্থানীয় বাঙালি। রাজাকার বাহিনীতে প্রায় ৫০ হাজার সদস্য ছিল। তাদের প্রশিক্ষণের জন্য ব্যাটল স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। নিয়মিত আর্থিক সুবিধাসহ বিভিন্ন সুবিধা নেওয়ার বিনিময়ে এসব বাহিনীর সদস্যরা সরাসরি পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগিতা করেছে।

নিয়াজী আরো লিখেছে, ২৫ মার্চ বাঙালি জাতির ওপর ভয়ানক গণহত্যার মিশন চালানো হয়েছিল গভর্নর জেনারেল টিক্কা খানের নির্দেশে। এবং সেই অভিযান পরিচালনা করা হয়েছিল জেনারেল রাও ফরমান আলীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে।

তবে ১৯৮৮ সালে বাঙালি সাংবাদিক মুসা সাদিককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জেনারেল টিক্কা খান বলেছে, ‘২৫ মার্চ রাতে রেডিওতে বিশেষ ফ্রিকোয়েন্সিতে শেখ মুজিব স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এরপর তাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেই আমি। তবে যে শেখ মুজিব তোমাদের বাঙালি জাতিকে দাসত্ব থেকে মুক্তি দিয়েছে, তার জন্ম না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না। যে মুজিবকে আমরা পাকিস্তানিরা হত্যা করার সাহস পাইনি, কিন্তু তোমাদের মধ্যকার কিছু বেজন্মাই তাকে হত্যা করেছে।

কারবালার পর এতো বড় ট্রাজেডি আর নেই। তবে যে গণহত্যা ও ধর্ষণের জন্য পাকিস্তানি সৈন্যদের দায়ী করে বাঙালিরা, সেই দায় শুধু পাকিস্তানিদের না।’

এর কারণ হিসেবে কসাই টিক্কা খান আরো জানায়,  ‘স্থানীয় বাঙালিরাই শান্তি কমিটির সদস্য হয়েছিল। আমরা পাকিস্তানিরা তোমাদের দেশের রাস্তাঘাট চিনতাম না। বাঙালি রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনীর সদস্যরাই আমাদের সব চিনিয়ে নিয়ে গেছে। তারা যাদের চিহ্নিত করে দিয়েছে, আমাদের সেনারা সেখানে অপারেশন করেছে। যুদ্ধের পর বিস্তারিত তদন্তের মাধ্যমে বেরিয়ে এসেছে যে, পিস কমিটির লোকরাই তাদের নিজেদের আখের গোছানোর জন্য আমাদের সৈনিকদের নিয়ে এসব অপকর্ম করিয়ে নিয়েছে। এই দায় শুধু পাকিস্তানিদের না, স্থানীয় কিছু বাঙালিরও (রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনীর সদস্যদের)।’

এমনকি পাকিস্তানি জামায়াতের দলীয় প্রকাশনা ‘আলবদর’ গ্রন্থে বলা হয়েছে- বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর সেখানকার আল বদর বাহিনীর সদস্যরা আত্মগোপন করেছিল; আন্ডারগ্রাউন্ডে থেকে যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করেছে, যত দিন পর্যন্ত বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল। পরবর্তীতে সামরিক সরকার জামায়াতকে আবারো রাজনীতি করার সুযোগ দিলে, তারা আবারো সবাই মিলে জামায়াতের ছায়াতলে পুরোদমে কাজ শুরু করে।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়