ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪ ||  চৈত্র ১৫ ১৪৩০

রাবিতে স্বগৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে ‘সুবর্ণ জয়ন্তী টাওয়ার’

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৪:৫৮, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১  

সুবর্ণ জয়ন্তী টাওয়ার

সুবর্ণ জয়ন্তী টাওয়ার

প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে ভরপুর সবুজ, শ্যামল, মনোমুগ্ধকর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষা, সংস্কৃতির পাশাপাশি এখানকার নয়নকাড়া অবকাঠামোর জন্যেও এর পরিচিতি রয়েছে। স্বনামধন্য কিছু শিল্পীর সুনিপুণ কারুকাজে তৈরি বিভিন্ন স্থাপনা বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে এর উৎকর্ষতা। তেমনি একটি দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা ‘সুবর্ণ জয়ন্তী টাওয়ার’। ইতিহাস ও ঐতিহ্য জানাতে স্বগৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে টাওয়ারটি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই জোহা চত্বর। জোহা চত্বরের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অগ্রণী ব্যাংকের পশ্চিম পাশে তাকালে দেখা মিলবে দৃষ্টিনন্দন এই সুবর্ণ জয়ন্তী টাওয়ারটির। এটি ইস্পাতের তৈরি একটি ম্যুরাল। এতে তুলে ধরা হয়েছে সভ্যতার ক্রমবিকাশ।

বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরের সময়ের উজ্জ্বল ইতিহাসকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ২০০৩ সালের ২১ থেকে ২৩ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হয় এক অনাড়ম্বর ‘সুবর্ণজয়ন্তী’ অনুষ্ঠান। সে সময়কালকে স্মৃতির মণিকোঠায় ধরে রাখার জন্য নির্মাণ করা হয় টাওয়ারটি। অপরূপ সুন্দর এই নান্দনিক স্থাপনার ভাস্কর শিল্পী মৃণাল হক। জানা যায়, দৃষ্টিনন্দন এই স্থাপনা নির্মাণ এবং তার পাশে একটি ম্যুরাল তৈরি করতে ব্যয় হয় প্রায় ১৫ লাখ টাকা।

ইস্পাতের তৈরি এই ম্যুরালটির দিকে তাকালে দেখা যাবে সুনিপুণ কারুকার্য। টাওয়ারটির মাঝে আছে কয়েকটি পায়রা। কোনোটি ডানা মেলে আছে। মনে হবে এই বুঝি উড়াল দেবে। আবার কোনোটি ঝুপটি মেরে বসে আছে। টাওয়ারটির নিচে তাকালে দেখা যায় টাইলসে বাঁধানো চতুর্দিক ঘিরে ক্ষুদ্র এক জলধারা। সেটার চারপাশে ঘিরে দর্শনার্থীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে বসার সুন্দর জায়গা।

টাওয়ারের খুব কাছেই ইস্পাতের তৈরি একটি দেয়াল রয়েছে। দেয়ালটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইস্পাতের কান্না’। যা টাওয়ারের সৌন্দর্যকে আরো বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। শিল্পী তার সুনিপুন হাতের ছোঁয়ায় ফুটিয়ে তুলেছেন গ্রামবাংলার আবহমান চিত্র। দেয়ালে তাকালে দেখতে পাওয়া যায় মালবাহী ভ্যান, ঘোড়ার গাড়ি, সাইকেল। কর্মব্যস্ত মানুষের দৈনন্দিন জীবন চিত্র। যা দেখে যে কাউকে প্রাচীন গ্রামবাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে স্মরণ করতেই হবে। আরো আছে স্মৃতিসৌধের মতো মহান এক কারুকাজ, যার নিচে আছে ফুটন্ত সূর্যমুখী ফুল। শহীদ মিনারের কারুকাজও করা আছে, আছে ইস্পাত দিয়ে তৈরি মুক্তিযোদ্ধার কারুকাজ, যা মহান মুক্তিযুদ্ধে একাত্তরের গণহত্যার কথা মনে করিয়ে দেয়। সেই কারুকাজগুলো শিকল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।

নির্মাণের সময় থেকেই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে গৌরব আর ঐতিহ্যের জানান দিচ্ছে টাওয়ারটি। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন জায়গা থেকে দর্শনার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিড় জমায় এই টাওয়ারটি দেখতে। অসংখ্য ইতিহাসের স্মৃতিবিজড়িত হয়ে এভাবেই কালের সাক্ষী হয়ে থাকবে যত দিন থাকবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী এম কামিল আহমেদ বলেন, ক্যাম্পাসের অনেকগুলো নজরকাড়া স্থাপনার মধ্যে ‘সুবর্ণ জয়ন্তী টাওয়ার’ অন্যতম। অযত্ন আর অবহেলায় জৌলুস হারানোর পথে ছিল গৌরবের প্রতীক টাওয়ারটি। যতন করে রঙ করা হয়েছে। ফলে নতুন রঙে রঙিন হয়ে শোভা ছড়াচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্বিত্বের সঙ্গে জুড়ে থাকা স্থাপনাটি। নান্দনিকতায় ভরপুর অনিন্দ্য সুন্দর এই ম্যুরালটি সত্যিই চাকচিক্যময়। এই চাকচিক্যময়তা থাকুক সব সময়।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়