ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৯ মার্চ ২০২৪ ||  চৈত্র ৫ ১৪৩০

সব কাজ ডিজিটালি করার পথ খুলছে

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৬:০৮, ৫ আগস্ট ২০২০  

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

কোভিড-১৯ মহামারীতে লকডাউনের মধ্যে ডিজিটালি চলছে অফিস-আদালত। তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে অফিস চালাতে নতুন আইনের দরকার না হলেও বিচার কার্যক্রম চালাতে অধ্যাদেশ জারি করতে হয়েছিল।

এই অভিজ্ঞতা থেকে শুধু মহামারী বা জরুরি পরিস্থিতিতে নয়; যে কোনো সময় যে কোনো কাজ ডিজিটালি করতে আইন করতে যাচ্ছে সরকার।

‘ডিজিটাল গভর্ন্যান্স আইন- ২০২০’ এর খসড়া ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ মঙ্গলবার রাতে এই খসড়া প্রকাশ করে তার উপর মতামত চেয়েছে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে দাপ্তরিক কাজে গতি আনা ছাড়াও সেবা পদ্ধতি সহজ করতে এই আইন করা হচ্ছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

এই আইন পাস হলে চিঠি বা দলিলে ইলেকট্রনিক স্বাক্ষর দেওয়া যাবে। সরকারি দপ্তরে আদায়যোগ্য অর্থ আদায় করা যাবে ডিজিটালি। বেতন-ভাতা, পেনশন, অনুদান, ক্ষতিপূরণ এবং বৃত্তি অর্থও দেওয়া যাবে এই পদ্ধতিতে।

এছাড়া যে কোনো চুক্তির পাশাপাশি দলিল বা কাগজপত্র ডিজিটালি উপস্থাপন করা যাবে। অডিও-ভিজুয়াল প্রযুক্তি ব্যবহার করে কনফারেন্স, সভা ছাড়াও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শুনানি, সাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরা করার পথ খুলবে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ই-গভর্নেন্স অধিশাখার যুগ্ম-সচিব দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ২০১৭ সালে এই আইন প্রণয়নের কাজ শুরু হয়। এরপর অংশীজনদের নিয়ে সাব-কমিটি গঠন করা হয়েছিল।

“২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাইজেশনের কথা ঘোষণা করেছিলেন, এখন আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। কোভিড-১৯ এর সময় এটির প্রয়োজনীয়তা মানুষ ব্যাপকভাবে টের পেয়েছে।”

করোনাভাইরাসের মহামারীতে লকডাউনের মধ্যে সরকারকে বেশিরভাগ কাজই ডিজিটালি করতে হয়েছে। সভা, সেমিনার, ক্লাস, বিচার কার্যক্রমসহ বিভিন্ন কাজ চলছে ডিজিটালি। সঙ্কটকালে বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা বাড়ি বসে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

যুগ্ম-সচিব হুমায়ূন কবীর বলেন, “আমাদের এখন সব কাজই করতে হবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে, এর আইনগত বৈধতা দরকার, অনেক লিগ্যাল ইস্যুজ আছে। এই আইনে সব বিষয়েই বলা আছে।”

ডিজিটালি সব কাজ করতে এর আইনি বৈধতার প্রয়োজন রয়েছে। লকডাউনের মধ্যে ডিজিটালি বিচার কার্যক্রম চালাতে অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছিল। ডিজিটাল কার্যক্রম নিয়ে বিভিন্ন সময় সার্কুলার জারি করা হলেও অনেক ক্ষেত্রে তা আইনি বৈধতা পায় না।

‘অনেক কিছু সার্কুলারে কাভার করে না’ বলে মত দিয়ে হুমায়ূন কবীর বলেন, “এ বিষয়ে অনেক আইনেই অনেক কিছু বলা আছে, সবকিছুকে একসঙ্গে করা হচ্ছে।”

এই আইন কার্যকর হলে যে কোনো পরিস্থিতিতে ডিজিটাল পদ্ধতিতে যে কোনো কাজ করলে তার আইনি বৈধতা থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, এই আইন হলে জনগণের তথ্য পাওয়া অনেক সহজ হবে।

“আমরা বেসিক্যালি সবকিছু ওপেন করে দিচ্ছি। কারণ যত বেশি ওপেন হবে তত বেশি স্বচ্ছতা থাকবে, তখন কেউ চাইলেও ইলিগ্যাল কিছু করতে পারবে না।”

আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, কোনো পত্র বা দলিলে ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক স্বাক্ষর দিয়ে সম্পাদন করা যাবে। কোনো আইনে দলিল, সাময়িক দলিল, সত্যায়িত অনুলিপিসহ অন্য কোনো কাগজপত্র উপস্থাপনের বাধ্যবাধকতা থাকলে তা ডিজিটাল মাধ্যমে প্রেরণ, প্রদর্শন বা গ্রহণ করা যাবে।

এই আইন কার্যকর হলে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে চুক্তি করা যাবে জানিয়ে খসড়ায় বলা হয়েছে, সেক্ষেত্রে চুক্তির প্রস্তাব, প্রস্তাব গ্রহণ, প্রস্তাব বাতিল এবং তাতে সম্মতি প্রদান অথবা চুক্তি সম্পাদন সম্পর্কিত যে কোনো যোগাযোগ স্বীকৃত ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পাদিত হবে।

“যদি চুক্তি সম্পাদনের স্থান সম্পর্কে অস্পষ্টতা দেখা দেয় তবে চুক্তি সম্পাদনের স্থান বলতে সাধারণভাবে সম্পাদনকারীদের প্রধান কার্যালয় বা সচরাচর বসবাসের স্থান বোঝাবে।

“সম্পাদিত কোনো চুক্তি কেবল এ কারণে অগ্রাহ্য, অযথার্থ ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের অযোগ্য বলে প্রতিপন্ন করা যাবে না যে চুক্তিটি ইলেক্ট্রনিক মাধ্যম ব্যবহার করে সম্পাদন করা হয়েছিল।”

খসড়ায় বলা হয়েছে, “সরকারি দপ্তরগুলো অনলাইনে পাওয়া আবেদন, ডিজিটাল নথি এবং অন্যান্য অ্যাপ্লিকেশন, ডাটাবেজ, ডিজিটাল কনটেন্ট, সফটওয়ারের তথ্য সংরক্ষণের জন্য ডিজিটাল তথ্যভাণ্ডার তৈরি ও পরিচালনা করতে পারবে।

“তবে শর্ত থাকে যে, তথ্যভাণ্ডারটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে এবং তা এমন স্থানে হতে হবে যে তাতে সংরক্ষিত বিষয়গুলো কোনো উপায়ে তার রক্ষণাবেক্ষণ আইনানুগভাবে নিয়োজিত ব্যক্তিও যথযাথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া পরিবর্তন ঘটাতে পারবে না।”

এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণে সকল সরকারি দপ্তর সেবাপ্রদান প্রতিশ্রুতিতে বর্ণিত সেবা ডিজিটাল পদ্ধতিতে দিতে অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার তৈরি করতে পারবে বলে খসড়ায় বলা হয়েছে।

“প্রত্যেক সরকারি দপ্তরে তথ্য ও সেবা সম্বলিত একটি তথ্য বাতায়ন থাকবে যা জাতীয় তথ্য বাতায়নে সংযুক্ত থাকবে এবং দপ্তরগুলো নিজ নিজ বাতায়নে তথ্য, উপাত্ত ও সেবা সন্নিবেশ এবং হালনাগাদ করবে।”

খসড়া অনুযায়ী, সেবা প্রদান প্রতিশ্রুতি প্রণয়ন করে হালনাগাদ তথ্য-উপাত্ত তথ্য বাতায়নে প্রকাশ ও কার্যালয়ের দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে।

সরকারি দপ্তরগুলোতে ডিজিটাল পদ্ধতিতে কাজ করতে সব কর্মচারীকে ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক স্বাক্ষর সার্টিফিকেট দেওয়া হবে উল্লেখ করে খসড়ায় বলা হয়েছে, এই আইন হলে সরকারি চাকরিজীবীরা দেশের বাইরে অবস্থান করলেও ডিজিটাল পদ্ধতিতে যে কোনো কাজ করতে পারবেন।

“অডিও-ভিজুয়াল প্রযুক্তি ব্যবহার করে কনফারেন্স, সভা ইত্যাদি অনুষ্ঠান করা যাবে। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শুনানি, সাক্ষ গ্রহণ ও জেরা করা যাবে।”

সরকারি দপ্তরগুলোতে আদায়যোগ্য অর্থ ডিজিটাল পদ্ধতিতে আদায় করা যাবে। এছাড়া ডিজিটাল পদ্ধতিতে বেতন-ভাতা, পেনশন, অনুদান, ক্ষতিপূরণ, বৃত্তি দেওয়া যাবে বলেও খসড়ায় বলা হয়েছে।

“জৈবিক বা শারীরিক বা অন্য কোনো তথ্য যা একক বা যৌথভাবে একজন ব্যক্তিকে বা সিস্টেমকে শনাক্ত করে তা সরকার কর্তৃক নির্দেশিক পদ্ধতিতে ব্যক্তির বা সিস্টেমের পরিচয় নিশ্চিতে ব্যবহার করা যাবে।”

খসড়ায় বলা হয়েছে, সরকারি দপ্তরের জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতে এবং জনগণের সেবায় উদ্ভাবনকে অধিকতর গতিশীল করতে সরকার একটি উন্মুক্ত সরকারি উপাত্ত প্ল্যাটফর্ম তৈরি করবে যেখানে সরকারি দপ্তরগুলো নির্দিষ্ট মানদণ্ড ও পদ্ধতি অনুসরণ করে উপাত্ত সংযোজন করবে।

এই আইন পাস হলে সরকারি কাজে নোটিস দেওয়ার প্রয়োজন হলে তা ডিজিটাল পদ্ধতিতে তা দেওয়া যাবে; তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা এবং রেজিস্ট্রার ডিজিটাল সিস্টেমে সংরক্ষণ ও ব্যবহার করা যাবে।

এই আইনের কোনো বিধানের সঙ্গে অন্য কোনো আইনের কোনো বিধান অসাম্যঞ্জস্য হলে ওই আইনের বিধানের সঙ্গে এই আইনের বিধান যতখানি অসামঞ্জস্য হবে সেসব ক্ষেত্রে এই আইনের বিধান কার্যকর থাকবে বলে খসড়ায় বলা হয়েছে।

এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণে সরকার সরকারি গেজেট দিয়ে প্রয়োজনীয় বিধি প্রণয়ন করতে পারবে বলেও খসড়ায় বলা হয়েছে।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়