ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে চেষ্টা করবো ভিএআর নিয়ে আসতে: সালাউদ্দিন

স্পোর্টস ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:৪৬, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১  

বাফুফে সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিন

বাফুফে সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিন

ফুটবল মানেই নিখাদ আনন্দ। নিরানন্দও আছে। একটি ফুটবল ম্যাচ নিয়ে দুইভাগে বিভক্ত হয়ে যায় গোটা বিশ্ব। বিনোদন, বিতর্ক-কত কিছুই না থাকে ফুটবলে। রেফারিং নিয়ে বিতর্ক তো থাকেই।

রেফারির সিদ্ধান্ত নিয়ে দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে মারামারি, প্রাণহানীরও অনেক ঘটনা আছে বিশ্বে। বাংলাদেশের ফুটবল নিয়ে তুলকালাম কম হয়নি এক সময়।

চলমান প্রিমিয়ার লিগে রেফারিং নিয়ে বেশ কিছু বিতর্ক উঠেছে। সর্বশেষ গত শনিবার বসুন্ধরা কিংস ও শেখ জামালের ম্যাচে। শেষ দিকে শেখ জামালের গাম্বিয়ান ফরোয়ার্ড ওমর জোবের বিপক্ষে একটি ফাউলের সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন রেফারি জালাল উদ্দিন।

জোবে বলটি কিংসের জালে পাঠিয়ে গোলের উল্লাসও করেছিলেন। কিন্তু গোল দেয়ার আগে তিনি জোবেকে আটকানোর চেষ্টা করা বসুন্ধরা কিংসের ডিফেন্ডার তপু বর্মনকে ফাউল করেছেন- এমন সিদ্ধান্ত দিয়েছেন রেফারি।

এ নিয়ে এখন চলছে বিতর্কের ঝড়। রেফারির ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল। নানা মানুষের নানা মন্তব্য। এমন এক সময় সোমবার দুপুরে বাফুফে সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিন গণমাধ্যমের নানা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। বাফুফে সভাপতির বক্তব্যের চৌম্বুক অংশগুলো এখানে তুলে ধরা হলো।

প্রশ্ন : সম্প্রতি প্রিমিয়ার লিগে রেফারির একটি সিদ্ধান্ত বেশ আলোচিত। রেফারির মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বাফুফে সভাপতি হিসেবে এ নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?

কাজী সালাউদ্দিন : রেফারির বিরুদ্ধে এই অভিযোগটা আগে থেকেই করে আসছে ক্লাবগুলো, যখন সিদ্ধান্ত পক্ষে না যাচ্ছে। আমি একটু পেছনে গেলাম, তখন থেকেই তারা অভিযোগগুলো করে আসছে। টেলিভিশনে খেলা দেখানোর পর স্লো-মোশনে দেখা যায় কি হয়েছে, না হয়েছে। কিন্তু বিবৃতি তারা আগেই দিয়ে দেন। দুঃখের বিষয় হলো- কিছুকিছু ভিত্তিহীন অভিযোগ দিচ্ছেন ক্লাব কর্মকর্তারা।

প্রশ্ন : এখন তো বিতর্ক এড়াতে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। অনেক দেশের ঘরোয়া ফুটবলেও আছে। বাফুফের এমন কোনো পরিকল্পনা আছে কী?

কাজী সালাউদ্দিন : রেফারির এই সমস্যা গোটা পৃথিবীতেই আছে। এজন্যই ফিফা ভিডিও অ্যাসিট্যান্ট রেফারি (ভিএআর) ব্যবহারের নতুন নিয়ম করেছে। এছাড়া তো আর উপায় নেই। কারণ, রেফারিও তো মানুষ। এ জন্য আমরাও ভিএআর এর জন্য ফিফার টেকনিক্যাল বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছি সাধারণ সম্পাদককে।

কারণ, এখানে হারলেই রেফারির বিপক্ষে অভিযোগ আমরা করি। মাঝেমাঝে যুক্তি থাকে, মাঝেমাঝে যুক্তি থাকে না। আমরা ভিডিও অ্যাসিট্যান্ট রেফারি (ভিএআর) পদ্ধন্তি চালুর উদ্যোগ নিয়েছি। এটা চালু করলে সবচেয়ে বড় জিনিস হবে বিতর্ক থেকে বের হতে পারবো।

প্রশ্ন : বিতর্কিত ওই সিদ্ধান্তের ভিডিও কি দেখেছেন? দেখলে আপনার কি মনে হয়েছে?

কাজী সালাউদ্দিন : আমি দেখেছি। ৫-৬ অ্যাঙ্গেল থেকে দেখলে কিছু অ্যাঙ্গেল থেকে মনে হবে গোল, কিছু অ্যাঙ্গেল থেকে মনে হবে ফাউল। একটু আগেও আমি ভিডিওটা দেখলাম। সেখানে দেখলাম স্ট্রাইকারের হাত গোটা ডিফেন্ডারের ওপরে। আবার আরেক দিক থেকে দেখলে বোঝা যায় না। তাই খুবই কঠিন এ্ সিদ্ধান্ত দেয়া।

প্রশ্ন : ওই ভিডিওটা নাকি ফিফায় পাঠানো হয়েছে?

কাজী সালাউদ্দিন : হ্যাঁ। ফেডারেশনে টেকনিক্যাল কটিমির ৭-৮ জনকে নিয়ে বসেছিলাম। সবাই বিভক্ত। চার-পাঁচজন বলছেন গোল দিতে পারে, আর দুই-চারজন বলেছেন এটা গোল নয়, ফাউল। আমি কোনো সিদ্ধান্তও দেবো না, বক্তব্যও দেবো না এটার ওপর। আমরা যেটা করেছি, ভিডিওটা ফিফায় পাঠিয়েছি। ওরা কি বলে দেখি।

প্রশ্ন : ভিএআর পদ্ধতি চালু করা অনেক কঠিন একটা বিষয়। কতটা সম্ভব বলে আপনি মনে করেন?

কাজী সালাউদ্দিন : এটা আমাদের সম্ভব করতেই হবে। কারণ হলো- আমাদের এখানে শৃঙ্খলার ঘাটতি আছে। যার যা ইচ্ছা টিভিতে বলে বেড়ায়। কিছুর ভিত্তি থাকে, কিছুর থাকে না। ফুটবল ফেডারেশনের কাজ না কে কি বললো সেটা দেখার, বন্ধ করার।

আমি মনে করি এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হারলেই যে বলে রেফারির কথা। আমি শেখ জামাল আর বসুন্ধরার খেলা নিয়ে আলাপ করছি না। আমি সার্বিকভাবে বলছি। তাতে যতই কষ্ট হোক, আমাদের যতটুকু শক্তি আছে তা দিয়ে চেষ্টা করবো যাতে ভিএরআর আনতে পারি।

প্রশ্ন : আপনার কথায় মনে হচ্ছে রেফারির পক্ষেই বলছেন। আসলে কি তাই?

কাজী সালাউদ্দিন : আমি কারো পক্ষে বলছি না। আমি এখানে কোনো পক্ষ দিতে আসিনি। এটা ফুটবল ম্যাচ। আমি এটা মনে করি না যে, রেফারিরা পক্ষপাতিত্বমূলক বাঁশি বাজান। ভুল হতেই পারে। নাও হতে পারে। রেফারিতো মানুষ। আমি করো পক্ষ নিতে আসিনি, কারো বিপক্ষেও না। আমি সার্বিক অবস্থা নিয়ে বললাম।

প্রশ্ন : এ ধরনের আলোচিত সিদ্ধান্ত কি পাল্টানো সম্ভব?

কাজী সালাউদ্দিন : আমি নিজে খেলে এসেছি তো। আমি ১৪-১৫ বছর লিগ খেলেছি। হারলে আমাদের সাপোর্টাররা বলতো রেফারির দোষ। কোনো আইন নাই যে, ম্যাচের ফল পাল্টে দিতে পারি। আমার কাছে যে আইন আছে তাতে কোনো রেফারি যদি এ ধরনের ভুল করে থাকে, আমি থাকে ম্যাচ থেকে বাইরে রাখতে পারি।

প্রশ্ন : ভিএআর চালু করতে পারলে তো বিতর্ক অনেক কমে যাবে তাই?

কাজী সালাউদ্দিন : অবশ্যই। ভিএআর টা হলে বড় উপকার হবে যে, সবাই শান্তিতে থাকতে পারবে। তাতে যে জিতবে বা হারবে তারা বুঝবে সবকিছু সঠিকই হয়েছে। এ জন্য যতই কস্ট হোক, ফেডারেশনের অগ্রাধিকার হলো ভিএআর আনা। আমি এটা অনুভব করি যে, একটা দল অনুশীলন করছে, ম্যাচ জিততে আসছে তারা যদি রেফারির দোষে হারে তার থেকে দুঃখের বিষয় আর নেই।

প্রশ্ন : ভিএআর আনলেন, তারপরও যদি বিতর্ক থাকে? কারণ, সেগুলোতে পরিচালনা করবেন আমাদের রেফারিরাই।

কাজী সালাউদ্দিন : আমরা সেটাও ভেবেছি। কারণ, আমার কাছে এক একজন এক এক রকম ব্যখ্যা দিচ্ছেন। এটা একটা বিতর্ক। যা ২৪ ঘণ্টা থাকে। এ জন্য ভিএআরটা আমাদের দরকার।

ভিএআর চালুর পরও অনেকে হয়তো বলবেন টেকনিশিয়ান ঠিকমতো দেখেনি। সেজন্য আজকে দুপুরে অফিসকে বলেছি, শুধু ভিএআর আনবা না, সঙ্গে দুইজন বিদেশি টেকনিক্যাল লোক আনবা, যারা ভিএআর এর রেজাল্ট দেবে। যাতে আমরা এই বিতর্ক থেকে বের হয়ে আসতে পারি।

প্রশ্ন : নিজেদের উদ্যোগে বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন কিনা?
কাজী সালাউদ্দিন : হ্যাঁ। আমি অফিসকে বলবো এই সিদ্ধানতটার একটা তদন্ত করে দেখতে।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়