ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪ ||  চৈত্র ১৫ ১৪৩০

সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ফ্লিনকে ক্ষমা করে দিলেন ট্রাম্প

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৬:৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২০  

ছবি: মাইকেল ফ্লিন

ছবি: মাইকেল ফ্লিন

কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআইকে মিথ্যা বলার দায় স্বীকার করে নেয়া সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিনকে ক্ষমা করে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

এর মাধ্যমে ‘নির্দোষ’ একজন মানুষের পেছনে ডেমোক্র্যাটদের অন্তহীন তাড়ার চূড়ান্ত সমাপ্তি ঘটল বলে মন্তব্য করেছে হোয়াইট হাউস।

ট্রাম্প বলেছেন, ফ্লিনকে ক্ষমা করার বিষয়টি ছিল ব্যাপকভাবে প্রত্যাশিত এবং শেষ পর্যন্ত তা করতে পেরে তিনি নিজেকে ‘সম্মানিত’ মনে করছেন।

রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলোচনা এবং সে বিষয়ে এফবিআই এবং ট্রাম্প প্রশাসনকে মিথ্যা তথ্য দেয়ার অভিযোগ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এই নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও লেফটন্যান্ট জেনারেলের বিরুদ্ধে। যে কারণে তাকে পদ থেকে সরিয়েও দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

বিদায়বেলায় ফ্লিনের সেই ‘দোষ’ ক্ষমা করে দেয়ায় তার বিরুদ্ধে আর কোনো অভিযোগ থাকবে না।

ক্ষমা ঘোষণা করার পর ফ্লিন এবং তার পরিবারকে ট্রাম্প টুইট করে অভিনন্দন জানিয়েছেন। ফ্লিনও এর প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের পতাকার একটি ইমোজি ও বাইবেলের একটি চরণ পোস্ট করেন।

জেরেমিয়াহ ১:১৯ চরণটিতে বলা হয়েছে, “‘তারা তোমার বিরুদ্ধে লড়বে, কিন্তু তোমাকে ছাড়িয়ে যেতে পারবে না। কেননা, আমি তোমাদের সঙ্গে রয়েছি, এবং তোমাদের উদ্ধার করবো,’ঘোষণা করেছেন ঈশ্বর।

ফ্লিনের সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্পর্ক ছিল নাটকীয়। ডেমোক্র্যাটপন্থি হয়েও ২০১৬ সালের মার্কিন নির্বাচনের সময় প্রকাশ্যে ট্রাম্পকে সমর্থন করেছেন ফ্লিন। ট্রাম্পের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা এতটাই বেড়েছিল যে ভোটে জেতার পরদিনই ফ্লিনের নাম নিজের নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং আন্তর্জাতিক বিষয় ও সামরিক ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টের প্রধান কাউন্সেলর হিসেবে ঘোষণা করেন ট্রাম্প। একাধিক অনুষ্ঠানে সেসময় ট্রাম্প ও ফ্লিনকে একসঙ্গে দেখা গেছে।

কিন্তু, সে সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ক্ষমতা পাওয়ার মাত্র ২৩ দিনের মাথায় ফ্লিনকে পদ থেকে সরিয়ে দেন ট্রাম্প। ফ্লিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তিনি ওয়াশিংটনে রাশিয়ার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেখানে রাশিয়ার ওপর জারি করা মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কথা হয়েছে। ফ্লিন সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন সেসময় অভিযোগ করে, ফ্লিন ওই বৈঠকের বিষয়ে মার্কিন প্রশাসন ও এফবিআইর কাছে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন।

এরপর ২০১৭ সালে ফ্লিন দোষ স্বীকার করেন এবং ক্ষমা প্রার্থনা করেন। যদিও ২০২০ সালের শুরুর দিকে ফ্লিন ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন তুলে নেন। তার সঙ্গে অন্যায় হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন। শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প ক্ষমা করে ফ্লিনের ওপর থেকে সব অভিযোগ তুলে নিলেন।

মাইকেল ফ্লিনের বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ রয়েছে। ২০১৬ সালে মার্কিন নির্বাচনে রাশিয়ার ভূমিকা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করছেন ডেমোক্র্যাটরা। ট্রাম্পের অভিশংসন মামলাতেও সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ডেমোক্র্যাটদের অভিযোগ, সে ঘটনাতেও ফ্লিনের ভূমিকা ছিল। যদিও এখন পর্যন্ত সে মামলায় ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে কোনো তথ্য প্রমাণ মেলেনি।

সাংবিধানিকভাবেই মার্কিন প্রেসিডেন্টদের ক্ষমা করার অধিকার আছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আট বছরে ২১২ জনকে ক্ষমা করেছিলেন। চার বছরে ট্রাম্প ক্ষমা করেছেন ২৮ জনকে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে সবচেয়ে কম ক্ষমা করেছেন ট্রাম্প।

ফ্লিনকে ক্ষমা করে দেয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন তার দল রিপাবলিকান পার্টির সদস্যরা।

“জেনারেল ফ্লিন কোনো রুশ এজেন্ট নন। তিনি ছিলেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একটি তদন্ত ও বিচারের শিকার,” বলেছেন সাউথ ক্যারোলাইনার সেনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম।

প্রতিনিধি পরিষদের সংখ্যালঘু অংশের নেতা রিপাবলিকান সাংসদ কেভিন ম্যাককার্থি টুইটে লিখেছেন, “জেনারেল ফ্লিনের সঙ্গে যা হয়েছে, তা জাতীর জন্য অমর্যাদাকর। নির্দিষ্ট একটি রাজনৈতিক দলকে ধারণ করার জন্য কোনো মার্কিনিকেই এভাবে নিশানা বানানো উচিত নয়।”

তবে ডেমোক্র্যাটদের প্রতিক্রিয়া একেবারেই বিপরীত।প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্র্যাট স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন, “দুঃখজনকভাবে এই ক্ষমা হচ্ছে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ব্যর্থ হওয়ার পরও ট্রাম্প যে কার্যালয়ে তার শেষ দিনগুলোকে কাজে লাগিয়ে আইনের শাসনকে খর্ব করার পরিকল্পনা করছেন তার প্রমাণ।”

সর্বশেষ
জনপ্রিয়