ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৯ মার্চ ২০২৪ ||  চৈত্র ৫ ১৪৩০

সোনিয়া গান্ধীর হাতেই থাকছে কংগ্রেসের নেতৃত্ব

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:১১, ২৫ আগস্ট ২০২০  

ছবি: সোনিয়া গান্ধী

ছবি: সোনিয়া গান্ধী

ভারতের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের সভাপতি পদে সোনিয়া গান্ধীই থাকছেন। আগামী ৬ মাসের মধ্যে নতুন সভাপতি নির্বাচিত করা হবে। এই ছয় মাস অন্তর্বর্তীকালীন সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন তিনি।

সোমবার সোনিয়া গান্ধীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসে দলটির ওয়ার্কিং কমিটি। উত্তেজনা, শোরগোল এবং অবশেষে নেতৃত্ব পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হওয়া বৈঠকে ওয়ার্কিং কমিটির অনুরোধ মেনে অন্তর্বর্তীকালীন সভাপতি হিসেবে সোনিয়া কাজ চালিয়ে যেতে রাজি হন।

ভার্চুয়াল বৈঠক শেষে জানানো হয়, নতুন সভাপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরুর বিষয়ে ওয়ার্কিং কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের পেশ করা প্রস্তাব সর্বসম্মত ভাবে গ্রহণ করে ওয়ার্কিং কমিটি স্থির করেছে, আগামী ছ’মাসের মধ্যে এআইসিসি-র পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন ডেকে নতুন সভাপতি নির্বাচন করা হবে।

কংগ্রেসের একটি সূত্র জানায়, সোনিয়া তার সমাপ্তি ভাষণে নেতৃত্ব পরিবর্তন চেয়ে ২৩ জন কংগ্রেস নেতার চিঠি পাঠানোর প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘আমি মর্মাহত হয়েছি। কিন্তু তারা আমার সহকর্মী। আসুন আমরা এক সঙ্গে কাজ করি।’

নেতৃত্ব পরিবর্তন চেয়ে ২৩ জন নেতার চিঠি ঘিরে দলের মধ্যে টানাপড়েনের মধ্যেই সোমবার বেলা ১১টা থেকে শুরু হয় কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক। শুরুতেই রাহুল গান্ধীর মন্তব্য ঘিরে বৈঠক উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

সোনিয়া দলের অন্তর্বর্তী সভানেত্রী পদ থেকে অব্যাহতি চাওয়ার পরে আজকের বৈঠকে তার উত্তরসূরি মনোনয়নের বিষয়টিই মূল আলোচ্য ছিল। দলের নেতৃত্ব পরিবর্তন চেয়ে ২৩ জন নেতার লেখা চিঠির পরই সোনিয়া দলের শীর্ষ পদে থাকতে অনীহার কথা জানিয়ে ‘পূর্ণ সময়ের সভাপতি’ মনোনয়নের সুপারিশ করেছিলেন।

কংগ্রেস সূত্র জানায়, ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের সূচনাতেও অন্তর্বর্তী সভানেত্রীর পদ থেকে তিনি ‘নিষ্কৃতি’ চান। কিন্তু মনমোহন জানিয়ে দেন, সোনিয়ার নেতৃত্বের প্রতি দলের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। মনমোহনকে সমর্থন করেন এ কে অ্যান্টনি।

এর আগে রাহুল গান্ধী এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর কেউই কংগ্রেস সভাপতির দায়িত্বে নিতে আগ্রহী নয় বলেই কংগ্রেস সূত্রে জানা যায়।

ভারতে বিগত দুই নির্বাচনে বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির কাছে ধরাশায়ী হয় দেশটির ঐতিহ্যবাহী দল কংগ্রেস। নির্বাচনের পর দলীয় ব্যর্থতার দায় নিয়ে কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে সরে দাঁড়ান রাহুল গান্ধী।

এমন পরিস্থিতিতে দলীয় নেতৃত্বের অনুরোধে শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও কংগ্রেস সভাপতির দায়িত্ব নিতে সম্মন হন সোনিয়া গান্ধী। কিন্তু দলে সংস্কার ও পূর্ণ সময়ের নেতৃত্বের দাবি জানিয়ে সোনিয়া গান্ধীকে লেখা ২০ জনের বেশি নেতার চিঠির জেরে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কংগ্রেস নেত্রী।

সোনিয়া সরে দাঁড়ালে ফের রাহুলকেই সভাপতি পদে নিয়ে আসার দাবি কংগ্রেসের মধ্যে জোরালো হয়। তবে দলীয় সূত্র জানাচ্ছে, এখনই ফের কংগ্রেস সভাপতির দায়িত্ব নিতে নারাজ রাহুল।

বর্তমানে বিভিন্ন ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেভাবে সমালোচনা করে যাচ্ছেন, সেটাই করে যেতে চাইছেন রাহুল।

অন্যদিকে প্রিয়াঙ্কাও স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে, দলীয় সভাপতি নয়, বরং জেনারেল সেক্রেটারির যে দায়িত্ব তিনি বর্তমানে সামলাচ্ছেন, সেই কাজই করার বিষয়ে তিনি আগ্রহী।

তবে দলের এই বিতর্কিত পরিস্থিতির মধ্যে অনেক নেতাই সোনিয়া গান্ধীকেই সভাপতি হিসেবে চান। পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং বলেন, ‘বিজেপির মতো শক্তিশালী দল যেখানে দেশের সংবিধান এবং গণতান্ত্রিক নীতিতে ধ্বংস করে দিতে বসেছে, সেখানে এখন এই ধরনের ইস্যুতে সোচ্চার হওয়ার সময় নয়।’ 

সোনিয়াকেই সভাপতি হিসেবে পছন্দ ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেলেরও। রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট বলেন, ‘যদি তিনি সভাপতিত্ব ছাড়ার বিষয়ে মনস্থির করেই ফেলেন, তাহলে রাহুল গান্ধী এগিয়ে এসে কংগ্রেসের হাল ধরুন।’

আবার ‘পরিবারতন্ত্রে’র অবসান ঘটিয়ে গান্ধী পরিবারের বাইরের কোনো নেতাকে কংগ্রেসের কমান্ড তুলে দেয়ার পক্ষে কংগ্রেসের আরেকটি অংশ ।

সংস্কারপন্থী নেতাদের মধ্যে রয়েছেন গুলাম নবি আজাদ, আনন্দ শর্মা, কপিল সিব্বাল, মুকুল ওয়াসনিক, মণীশ তিওয়ারি, শশী থারুর এবং হরিয়ানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভূপিন্দর সিং হুডার নাম আছে।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়