ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আওয়ামী লীগ

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:১৫, ২১ অক্টোবর ২০২১  

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

উগ্র সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ার আহ্বান জানিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার প্রেক্ষাপটে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ‘সম্প্রীতি সমাবেশ ও শান্তি শোভাযাত্রা’ কর্মসূচিতে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা এ প্রতিশ্রুতি দেন।

তারা বলেন, সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিষদাঁত ভেঙে দেওয়া হবে। এ দেশে তাদের মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে দেওয়া হবে না। বাংলার মাটিতে তাদের ঠাঁই হবে না। আওয়ামী লীগ রাজপথে আছে থাকবে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে তারা বলেন, আপনারা আমাদের ভাই; আপনাদের ভয় নাই, শেখ হাসিনা আপনাদের সঙ্গে আছে, আওয়ামী লীগ আপনাদের পাশে আছে। সমাবেশ শেষে দীর্ঘ শোভাযাত্রা কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। 

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সম্প্রীতি সমাবেশ শুরু হয়। এতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা এই অপশক্তি প্রতিরোধ করব। হিন্দু ভাইদের বলব, আপনাদের ভয় নাই, শেখ হাসিনা আপনাদের সাথে আছে, আওয়ামী লীগ আপনাদের পাশে আছে।

বৃষ্টি উপেক্ষা করে কেন্দ্রীয়, ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরা সমাবেশে অংশ নেন। সেখানে ট্রাকের ওপর অস্থায়ী মঞ্চে দাঁড়িয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।

সমাবেশ শেষে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয়। গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট, শিক্ষা ভবন, দোয়েল চত্বর হয়ে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। দীর্ঘ শোভাযাত্রার সামনের অংশ বেলা ১২টা ১০ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পৌঁছলেও পেছনের অংশ তখনো কেন্দ্রীয় কার্যালয়েই ছিল। এদিকে আওয়ামী লীগের সমাবেশ ও শোভাযাত্রায় জনসমাগমের কারণে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর আশপাশের সড়কের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। যানজটের প্রভাব পরে আশপাশের এলাকাগুলোতেও।

সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আজকে মন্দিরে হামলা, প্রতিমা ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ- এগুলো ২০০১ সালে বিএনপি সরকার যে নির্যাতন চালিয়েছিল, তার পুনরাবৃত্তি।

আন্দোলনে ব্যর্থ, নির্বাচনে ব্যর্থ, বিএনপি আজ সাম্প্রদায়িক শক্তিকে উসকে দিয়ে সাম্প্র্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে। আবার নতুন করে সম্প্রদায়িক হামলা-সন্ত্রাস শুরু করেছে।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনার আমলে প্রত্যেকটি দুর্গাপূজায় হাজার হাজার মণ্ডপে পূজা চলেছে। কোনো ঘটনা ঘটেনি। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে হঠাৎ হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা শুরু হয়েছে।

সাধারণ সম্পাদক বলেন, আওয়ামী লীগ রাজপথ ছাড়ে নাই। সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার নির্দেশে সারা বাংলাদেশে আজ সম্প্রীতি সমাবেশ হচ্ছে, শান্তিপূর্ণ শোভাযাত্রা হচ্ছে।

আওয়ামী লীগ রাজপথে আছে। তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশ ভারতে মুসলমান আছে, তাদের জানমালের কথাও আমাদের ভাবতে হবে। হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের যে উসকানি দেওয়া হচ্ছে, তাতে ভারতের একটা বড় অংশ মুসলমানদের জীবনকেও বিপন্ন করে ফেলছে। তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক অপশক্তির মোকাবিলা করে তাদের ‘সমুচিত জবাব’ দিতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা সারাদেশে ‘প্রস্তুত আছে’। 

সমাবেশে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে রুখবই। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে সব ধর্মের মানুষ নিরাপদে বসবাস করবে। যারাই সন্ত্রাস করবে তাদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, যারা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছেন, সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে আগুন দিচ্ছেন, তাদের হুঁশিয়ার করে দিচ্ছি। তাদের অবশ্যই খুঁজে বের করা হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের খুঁজে বের করে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করবে। জবাব দিতে হবে তাদের, কেন তারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও শান্তি বিনষ্ট করছে। 

সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, সাম্প্রদায়িক এই হামলায় যারাই জড়িত, তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। অসাম্প্রদায়িক এই বাংলাদেশে কোনো সাম্প্রদায়িক অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না।

সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, তারা (বিএনপি-জায়ামাত) জানে ভোটের মাধ্যমে এই সরকারকে পরাজিত করতে পারবে না। এজন্য ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে ষড়যন্ত্রের জাল বুনছে। মুক্তিযুদ্ধের সকল শক্তিকে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।

দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুউল আলম হানিফ বলেন, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা দেখার জন্য আমরা যুদ্ধ করিনি। এই বাংলাদেশ দেখার জন্য ৩০ লাখ শহিদ আত্মাহুতি দেননি।

যেসব মৌলবাদী, ধর্মান্ধ এখনো ধর্মের দোহাই দিয়ে একাত্তরের মতো সমাজে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে, যারা এখনো ঘরবাড়ি জ্বালাচ্ছে, তাদেরকে আমরা একাত্তরের মতোই প্রতিহত করে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ গড়ব। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, সম্প্রীতি নষ্ট করার লক্ষ্যে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘর উপাসনালয়ে হামলা চালানো হয়েছে।

এর পেছনে গভীর ষড়যন্ত্র আছে। আওয়ামী লীগ এই অপশক্তির বিরুদ্ধে সারা দেশে সতর্ক রয়েছে। এই অপশক্তিকে উৎখাত না করা পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সংগ্রাম চলতে থাকবে।

সমাবেশে আরও অংশ নেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, এসএম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুস সবুর, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, মহিলা সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি প্রমুখ।

সম্প্রীতি সমাবেশ ও শোভাযাত্রায় অংশ নিতে মঙ্গলবার সকাল থেকে আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরা রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে জড়ো হন।

তাদের অনেকেই সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান লেখা ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে আসেন। এতে ‘ধর্ম যার যার, বাংলাদেশ সবার’

‘সাম্প্রদায়িকতাকে রুখে দাও’; ‘বাংলার হিন্দু, বাংলার বৌদ্ধ, বাংলার খ্রিস্টান, ‘বাংলার মুসলমান, আমরা সবাই বাঙালি’- সহ নানা স্লোগান লেখা ছিল। বৃষ্টি উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের এ সময় নানা স্লোগান দিতে দেখা যায়। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে স্লোগানে স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে পুরো গুলিস্তান এলাকা।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়