ঢাকা, সোমবার   ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

এজেন্ট ব্যাংকিং ঋণ বিতরণেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:২৯, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  

এজেন্ট ব্যাংকিং ঋণ বিতরণেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে

এজেন্ট ব্যাংকিং ঋণ বিতরণেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে

ঋণ বিতরণেও এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এজেন্ট ব্যাংকিং। গত এক বছরে এ সেবার আওতায় প্রায় ৫০ শতাংশ ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে। একই সময়ে আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে ২০ শতাংশের মতো। শুধু তাই নয়, এ সময়ে যে পরিমাণ আমানত বেড়েছে, তার ৮২ শতাংশই ঋণ হিসেবে বিতরণ করা হয়েছে। অর্থাৎ এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের কল্যাণে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ ঋণও পাচ্ছে। এ ছাড়া এ সেবা ব্যবহার করে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সেও বড় প্রবৃদ্ধি হচ্ছে।

খাতসংশ্লিষ্টরা মনে করেন, দেশে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের বিকল্প নেই। এর মাধ্যমে মানুষের দৌরগোড়ায় ব্যাংকিং সেবাকে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। এটা ব্যাংকের খরচও বাঁচিয়েছে। তারা জানান, গ্রাহকরাও কম খরচে ও দ্রুত সময়ে ব্যাংকে না গিয়ে প্রায় সব সেবা পাচ্ছে এজেন্ট বুথে। ফলে প্রতিদিনই বাড়ছে গ্রাহক ও লেনদেনের পরিমাণ। গত এক বছরে এ সেবায় ৩৯ লাখেরও বেশি গ্রাহক বেড়েছে। এ জন্য ব্যাংকগুলোও তাদের এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম প্রতিনিয়ত বাড়াচ্ছে।

এজেন্ট ব্যাংকিং হলো শাখা না খুলে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে সেবা দেওয়ার একটি ব্যবস্থা। ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনাসংক্রান্ত নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। নীতিমালায় প্রথমে শুধু পল্লী এলাকায় এজেন্ট ব্যাংকিং করার সুযোগ দেওয়া হলেও পরের বছর নীতিমালা কিছুটা সংশোধন করে পৌর ও শহর অঞ্চলেও এজেন্ট ব্যাংকিং চালুর সুযোগ দেওয়া হয়। এ পর্যন্ত ৩১টি ব্যাংককে এজেন্ট ব্যাংকিং চালুর অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক; যার সবগুলোই কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাসাবাড়ির নিচে বা বাসাবাড়ি থেকে একটু দূরে স্থানীয় হাঁটবাজারে এজেন্ট আউটলেট বা বুথেই ব্যাংকের মতো প্রায় সব ধরনের সেবা পাওয়া যাচ্ছে। এজেন্ট আউটলেটে একজন গ্রাহক সহজেই তার বায়োমেট্রিক বা হাতের আঙুলের স্পর্শের মাধ্যমে হিসাব পরিচালনা করতে পারেন। অ্যাকাউন্ট খোলার সুবিধা থেকে শুরু করে আমানতের টাকা জমা ও উত্তোলন, মোবাইল ফোন রিচার্জ, টাকা স্থানান্তর (দেশের ভেতর), রেমিট্যান্সের অর্থ উত্তোলন, ইউটিলিটি বিল এবং যানবাহনের লাইসেন্স ও ফিটনেস ফি গ্রহণ, বিভিন্ন প্রকার ঋণ বিতরণ ও আদায় এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সব ধরনের ভাতা এ সেবার মাধ্যমে সুবিধাভোগীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এ সেবায় বাড়তি কোনো চার্জও নেই। এ ছাড়া ডেবিট কার্ড, চেকবই ও ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের সুবিধাও নিতে পারেন এজেন্ট ব্যংকিংয়ের গ্রাহকরা। ফলে এ সেবার জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রতি ত্রৈমাসিকে এজেন্ট ব্যাংকিং নিয়ে একটা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সর্বশেষ ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আওতায় গ্রাহকদের খোলা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ১৪ লাখ ১৯ হাজার ৯৭৫টি, যা ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিল ১ কোটি ৭৪ লাখ ৭৫ হাজার ৯৪৯টি। ফলে গত এক বছরে এই সেবার আওতায় গ্রাহক বেড়েছে প্রায় ৩৯ লাখ ৪৪ হাজার ২৬ জন। এর মধ্যে ২০২৩ সালের শেষ তিন মাসে বেড়েছে ৭ লাখ ৩৫ হাজার ৪৩৮ জন। প্রতিবেদন বলছে, এজেন্ট ব্যাংকিং গ্রাহকের বড় অংশই গ্রামের মানুষ। এ সময়ে গ্রামে গ্রাহক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৮৪ লাখ ১৯ হাজার ৮০ জন। অন্যদিকে এজেন্ট ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টধারীর মধ্যে নারী গ্রাহকের সংখ্যা এখন ১ কোটি ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৯৭৭ জন।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২২ সাল শেষে এজেন্ট ব্যাংকিয়ে আমানতের পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ১৫৮ কোটি টাকা, যা ২০২৩ সাল শেষে দাঁড়িয়েছে ৩৬ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা। ফলে গত এক বছরে এজেন্ট ব্যাংকিয়ে আমানত বেড়েছে প্রায় ৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা বা ২০ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এর মধ্যে শেষ তিন মাসে আমানত বেড়েছে ১ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২৯ শতাংশ।

অন্যদিকে ২০২৩ সাল শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আওতায় ঋণ বিতরণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা, যা ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিল ১০ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। ফলে গত এক বছরে এই সেবায় ঋণ বিতরণ বেড়েছে প্রায় ৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা বা ৪৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এর মধ্যে শেষ তিন মাসে ঋণ বিতরণ বেড়েছে প্রায় ১ হাজার ২১৪ কোটি টাকা বা ৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ। অর্থাৎ শেষ তিন মাসে এই সেবায় আমানতের চেয়ে ঋণ বিতরণ বেশি হয়েছে।

শুধু আমানত ও ঋণ বিতরণই নয়, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আওতায় প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বিতরণেও বড় প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। প্রতিবেদন বলছে, গত বছরে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আওতায় রেমিট্যান্স বিতরণ বেড়েছে প্রায় ২৮ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা বা ২৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ। এর মধ্যে শেষ তিন মাসে রেমিট্যান্স বিতরণ বেড়েছে ৬ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা বা ৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়