ঢাকা, শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

নবীর প্রতি দরুদ পড়ার লাভ

ধর্ম ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩:১০, ১৬ নভেম্বর ২০২১  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

দরুদ শব্দের আরবি হলো ‘সলাত’। সলাত শব্দের মূল চারটি অর্থ—দরুদ বা শুভকামনা, তাসবিহ বা গুণকীর্তন, রহমত বা দয়া করুণা ও ইস্তিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা। পরিভাষায় দরুদ বলতে ‘আস সলাত আলান নাবি’, অর্থাৎ নবীজির প্রতি দরুদ পাঠ বা তার জন্য শুভকামনা, তার গুণকীর্তন, তার প্রতি আল্লাহর দয়া করুণা প্রার্থনা বোঝায়।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, বাস্তবিকপক্ষে আল্লাহ মুমিনদের উপর অনুগ্রহ করেছেন যে, তিনি তাদের মাঝে একজন রাসূল পাঠিয়েছেন তাদেরই মধ্য থেকে, যিনি তাদের নিকট তার আয়াতসমূহ পাঠ করেন, তাদেরকে পবিত্র-পরিশুদ্ধ করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন। আর তারা তো এর পূর্বে ছিল স্পষ্ট ভ্রষ্টতার মধ্যে। (সূরা আলে ইমরান ৩ : ১৬৪)

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর পরিচয় দিয়েছেন বিভিন্নভাবে। সূরা আহযাবে আল্লাহ তায়ালা বলেন-

لَقَدْ جَآءَكُمْ رَسُوْلٌ مِّنْ اَنْفُسِكُمْ عَزِیْزٌ عَلَیْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِیْصٌ عَلَیْكُمْ بِالْمُؤْمِنِیْنَ رَءُوْفٌ رَّحِیْمٌ . فَاِنْ تَوَلَّوْا فَقُلْ حَسْبِیَ اللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ عَلَیْهِ تَوَكَّلْتُ وَ هُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِیْمِ.

(হে লোকসকল!) তোমাদের মাঝে তোমাদের মধ্য থেকেই রাসূল আগমন করেছেন, তোমাদের কষ্ট যার নিকট অসহনীয়। যিনি তোমাদের (কল্যাণের) জন্য ব্যাকুল, যিনি মুমিনদের প্রতি অত্যন্ত দয়াপরবশ, পরম মমতাবান। তারপরও যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে (হে নবী) আপনি বলে দিন, আমার জন্য আল্লাহ্ই যথেষ্ট। তিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। তার উপরই আমি ভরসা করি এবং তিনি মহান আরশের মালিক। (সূরা তাওবা ৯ : ১২৮, ১২৯)

হজরত মুহাম্মদ (সা.) উম্মতের প্রতি অত্যন্ত দয়ার্দ্র ও স্নেহশীল ছিলেন। উম্মতের কল্যাণে তিনি সদা ব্যাকুল থাকতেন। উম্মত কীভাবে নাজাত ও মুক্তি লাভ করতে পারে এ চিন্তায় তিনি ছিলেন সদা বিভোর। সর্বোপরি এই উম্মতের উপর রয়েছে তার অবারিত ইহসান-অনুগ্রহ। তাই উম্মতের কর্তব্য হলো, নবীজির সেই অনুগ্রহের দাবি রক্ষা করা।

উম্মতের উপর নবীজির যে সীমাহীন অনুগ্রহ রয়েছে, এর অন্যতম দাবি হচ্ছে নবীজির প্রতি দরূদ ও সালামের নাযরানা পেশ করা। এটা আমাদের উপর নবীজির হক। যেখানে স্বয়ং আরহামুর রাহিমীন ও তার ফেরেশতাগণ নবীজির প্রতি দরূদ প্রেরণ করেন; সেখানে আমাদের মতো নগণ্য উম্মতের দরূদের কোনোই প্রয়োজন নেই প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের। যেখানে খোদ রাব্বুল আলামীন স্বীয় হাবীবকে দান করেছেন মাকামে মাহমুদ-জান্নাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা, সেখানে তার জরুরত নেই আমাদের কারো দরূদ ও সালামের।

কিন্তু তবুও কেন এই নির্দেশ- দরূদ ও সালাম পাঠ করতে হবে তার প্রতি? হ্যাঁ, এতিম এ উম্মতীকে নিজের স্বার্থেই নিবেদন করতে হবে প্রিয় নবী (সা.) এর প্রতি দরূদ ও সালাম- ভক্তি, শ্রদ্ধা ও ভালবাসার সবটুকু দিয়ে। নবীজির প্রতি আমাদের মহব্বত এমন কিছুই দাবি করে।

আল্লাহ তাআলা বলেন-

اِنَّ اللهَ وَ مَلٰٓىِٕكَتَهٗ یُصَلُّوْنَ عَلَی النَّبِیِّ یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا صَلُّوْا عَلَیْهِ وَ سَلِّمُوْا تَسْلِیْمًا.

নিশ্চয় আল্লাহ ও তার ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি ‘সালাত’ প্রেরণ করেন। হে যারা ঈমান এনেছ, তোমরা তার প্রতি ‘সালাত’ পৌঁছাও এবং অধিক পরিমাণে সালাম পেশ কর। (সূরা আহযাব ৩৩ : ৫৬)

হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর প্রতি সালাত ও সালাম পেশ করাকেই আমরা দরূদ বলে অভিহিত করে থাকি। বস্তুত আল্লাহ রাব্বুল আলামীন স্বীয় শান অনুযায়ী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর উপর দরূদ বর্ষণ করেন। ফেরেশতাগণও আপন পর্যায় থেকে দরূদ প্রেরণ করেন নবীজির প্রতি। আর তাই উম্মতেরও কর্তব্য হচ্ছে স্বীয় অবস্থান থেকে মহান মুহসিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি সালাত ও সালাম নিবেদন করা।

আল্লাহ তায়ালা নবীজির ওপর দরূদ বর্ষণ করেন- এর অর্থ কী? এর অর্থ হচ্ছে আল্লাহ তায়ালা নিজ হাবীবের ওপর রহমত বর্ষণ করেন। তার গুণগান ও মর্যাদা বর্ণনা করেন ফেরেশতাদের নিকট। তিনি তার বন্ধুর শ্রেষ্ঠত্ব, বড়ত্ব ও মহত্ত্ব বয়ান করেন এবং তার সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি করতে থাকেন।

আর ফিরিশতাগণ দরূদ প্রেরণ করেন- এর অর্থ হল, ফেরেশতাগণ আল্লাহ তায়ালার নিকট নবীজির মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব তলব করতে থাকেন। বরকতের দোয়া করতে থাকেন নবীজি ও তার পুত পবিত্র পরিবারের জন্য।

আর মুমিনগণ যে দরূদ পেশ করেন- এর অর্থ হল, তারা হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর শেখানো পদ্ধতিতে দরূদ পাঠ করতে থাকেন। মুমিনগণ আল্লাহ তায়ালার নিকট দরখাস্ত করতে থাকেন, ইয়া রব! আপনি আপনার হাবীবের শান ও মান বৃদ্ধি করতে থাকুন। দুনিয়াতে তার আলোচনা সমুন্নত করুন। তার আনীত শরীয়তকে প্রতিষ্ঠিত করুন। তার দ্বীনকে আপনি বুলন্দ করে দিন। আখেরাতে তাকে শ্রেষ্ঠ প্রতিদানে ভূষিত করুন। উম্মতের জন্য তার শাফাআত কবুল করুন। তাকে মাকামে মাহমূদ দান করে সর্বোচ্চ মর্যাদা প্রদান করুন। এভাবে ঊর্ধ্বজগৎ ও ইহজগতের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের মহিমা। (ফাতহুল বারী, হাফেয ইবনে হাজার ১১/ ১৫৫, ১৫৬; আলকওলুল বাদী, হাফেয সাখাবী, পৃ. ৫১-৫৭)

দরূদ শরীফের ফজিলত

আমাদের দরূদ নবীজির কোনো প্রয়োজন নেই। যিনি দরূদ ও সালাম পেশ করবেন তার নিজেরই ফায়দা। দুনিয়া ও আখেরাতের নানাবিধ কল্যাণ সম্পৃক্ত রয়েছে দরূদের সঙ্গে। কুরআনের নির্দেশনাসহ হাদিস শরীফে দরূদের বহু ফজিলত বিবৃত হয়েছে। এখানে কিছু উল্লেখ করা হল।

মুমিনদের প্রতি আল্লাহ তাআলার নির্দেশ

ঈমানদারদের প্রতি আল্লাহ তাআলার নির্দেশ হল, তোমরা নবীজির প্রতি দরূদ ও সালাম পেশ কর। আল্লাহ বলেন-

اِنَّ اللهَ وَ مَلٰٓىِٕكَتَهٗ یُصَلُّوْنَ عَلَی النَّبِیِّ یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا صَلُّوْا عَلَیْهِ وَ سَلِّمُوْا تَسْلِیْمًا.

নিশ্চয় আল্লাহ ও তার ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি ‘সালাত’ প্রেরণ করেন। হে যারা ঈমান এনেছ তোমরা তার প্রতি ‘সালাত’ পৌঁছাও এবং অধিক পরিমাণে সালাম পেশ কর। (সূরা আহযাব ৩৩ : ৫৬)

অতএব দরূদ পাঠের মাধ্যমে মহান রবের মহান নির্দেশ পালিত হয়। এছাড়া যেখানে খোদ রাব্বুল আলামীন স্বীয় হাবীবের প্রতি দরূদ প্রেরণ করছেন, ফেরেশতাগণও পেশ করছেন নবীজির প্রতি দরূদ; ঊর্ধ্বজগতে গুঞ্জরিত হচ্ছে নবীর শানে দরূদ, সেখানে আমিও এই ধরাধাম থেকে দয়ার নবীর প্রতি দরূদ ও সালাম পেশ করার মাধ্যমে শামিল হচ্ছি সেই মুবারক কাফেলায়।

সাহাবায়ে কেরাম অধীর ছিলেন দরূদের জন্যে

ঈমানদারদের উপর যখন আল্লাহ্ তায়ালার পক্ষ থেকে নবীজির প্রতি দরূদ পেশ করার নির্দেশ আসে তখন সাহাবায়ে কেরাম অস্থির হয়ে পড়েন- কীভাবে নবীজির প্রতি দরূদ পেশ করা যায়। তারা এ বিষয়ে নবীজিকে জিজ্ঞাসা করলে নবীজি তাদেরকে দরূদ শরীফ শিখিয়ে দেন। হজরত কা‘ব ইবনে উজরাহ রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন-

لَمَّا نَزَلَتْ اِنَّ اللهَ وَ مَلٰٓىِٕكَتَهٗ یُصَلُّوْنَ عَلَی النَّبِیِّ قَالُوا: كَيْفَ نُصَلِّي عَلَيْكَ يَا نَبِيَّ اللهِ؟ قَالَ: قُولُوا اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ.

যখন

اِنَّ اللهَ وَ مَلٰٓىِٕكَتَهٗ یُصَلُّوْنَ عَلَی النَّبِیِّ یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا صَلُّوْا عَلَیْهِ وَ سَلِّمُوْا تَسْلِیْمًا.

(নিশ্চয় আল্লাহ ও তার ফিরিশতাগণ নবীর প্রতি ‘সালাত’ প্রেরণ করেন। হে যারা ঈমান এনেছ তোমরা তার প্রতি ‘সালাত’ পৌঁছাও এবং অধিক পরিমাণে সালাম পেশ কর।)

আয়াতটি নাযিল হয় তখন সাহাবীগণ বললেন, ইয়া নাবিয়্যাল্লাহ! আমরা আপনার প্রতি কীভাবে দরূদ পাঠ করব? নবীজি বললেন, তোমরা বলো-

اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ.

(হে আল্লাহ! আপনি সালাত ও রহমত বর্ষণ করুন মুহাম্মাদের প্রতি এবং মুহাম্মাদের পরিবার পরিজনের প্রতি। যেভাবে আপনি ইবরাহীমের প্রতি এবং ইবরাহীমের পরিবারের প্রতি রহমত বর্ষণ করেছেন। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত এবং মর্যাদাবান। আপনি বরকত নাযিল করুন মুহাম্মাদের উপর এবং মুহাম্মাদের পরিবারের উপর। যেভাবে আপনি বরকত নাযিল করেছেন ইবরাহীমের পরিবারের উপর এবং ইবরাহীমের পরিবারের উপর। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত এবং মর্যাদাবান।) -মুসনাদে আহমাদ, হাদিস ১৮১৩৩; মুসনাদে ইবনে আবী শাইবাহ, হাদিস ৫০৫

এছাড়া এ ধরনের বর্ণনা আরো অনেক সাহাবী থেকেও এসেছে। সকলে নবীজি থেকে জিজ্ঞাসা করে করে দরূদ শিখে নিয়েছেন।

লক্ষণীয় বিষয় হল, নবীজির প্রতি দরূদ পেশ করার এ নির্দেশনাটিকে সাহাবায়ে কেরাম নিজেদের জন্য অনেক বড় তোহফা মনে করতেন। সহীহ বুখারীর বর্ণনা মতে সাহাবী হযরত কা‘ব রা. তাবেয়ী হযরত আবদুর রহমান ইবনে আবী লাইলাকে বললেন-

أَلاَ أُهْدِي لَكَ هَدِيَّةً سَمِعْتُهَا مِنَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟

আমি কি তোমাকে সেই হাদিয়া দিব না, যা আমি নবীজি থেকে লাভ করেছি? এরপর তিনি তাকে দরূদে ইবরাহীম শিখিয়ে দেন।

তো সাহাবায়ে কেরাম দরূদের এ আমলকে অনেক বড় গনীমত ও উপঢৌকন মনে করতেন এবং এর কদর ও মূল্যায়ন করতেন। (দ্রষ্টব্য : সহীহ বুখারী, হাদিস ৩৩৭০; সহীহ মুসলিম, হাদিস ৪০৬)

যে কারণে আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত বর্ষিত হয়

দরূদ এমন একটি আমল, যার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহ তাআলার করুণা লাভে ধন্য হয়। বান্দা যদি আল্লাহর হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি একবার দরূদ শরীফ পেশ করে আল্লাহ তায়ালার প্রতিদানে তার প্রতি দশ বার রহমত বর্ষণ করেন। নবীজি বলেন-

مَنْ صَلَّى عَلَيَّ وَاحِدَةً صَلَّى الله عَلَيْهِ عَشْرًا.

যে আমার প্রতি একবার দরূদ পাঠ করে আল্লাহ তার প্রতি দশবার রহমত বর্ষণ করেন। (সহীহ মুসলিম, হাদিস ৪০৮; সুনানে আবু দাঊদ, হাদিস ১৫৩০; সুনানে নাসায়ী, হাদিস ১২৯৬; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস ৮৮৫৪, ১০২৮৭)

নেকি লাভ, গুনাহ মাফ এবং মর্যাদা বৃদ্ধি

দরূদের মাধ্যমে যেভাবে আল্লাহর রহমত লাভ হয় তেমনি এর মাধ্যমে অর্জিত হয় বহু নেকি, মাফ হয় বান্দার গুনাহ। পাশাপাশি বৃদ্ধি পেতে থাকে বান্দার মর্যাদা। হাদিস শরীফে এসেছে-

مَنْ صَلَّى عَلَيَّ مِنْ أُمَّتِي صَلَاةً مُخْلِصًا مِنْ قَلْبِهِ، صَلَّى الله عَلَيْهِ بِهَا عَشْرَ صَلَوَاتٍ، وَرَفَعَهُ بِهَا عَشْرَ دَرَجَاتٍ، وَكَتَبَ لَهُ بِهَا عَشْرَ حَسَنَاتٍ، وَمَحَا عَنْهُ عَشْرَ سَيِّئَاتٍ.

আমার যে উম্মতী আমার প্রতি অন্তর থেকে একবার দরূদ পেশ করবে আল্লাহ তাআলা এর বিনিময়ে তার উপর দশবার রহমত বর্ষণ করবেন। তার মর্তবা দশ স্তর পর্যন্ত উন্নীত করবেন। তাকে দশ নেকী দান করবেন এবং তার দশটি গুনাহ মাফ করে দেবেন। (সুনানে কুবরা, নাসাঈ, হাদিস ৯৮৯২, ৯৮৯৩, ১২২১, ১০১২২; সুনানে নাসাঈ, হাদিস ১২৯৭; আমালুল ইয়াউমি ওয়াল লাইলাই, নাসাঈ, হাদিস ৩৬২)

নবীজির শানে দরূদ প্রেরণের মাধ্যমে এভাবে বান্দার সগীরা গুনাহগুলো ঝরতে থাকে, নেকী বৃদ্ধি পেতে থাকে, মর্যাদা বৃদ্ধি হতে থাকে। তার দেহমন পুত-পবিত্র হয় এবং আত্মিক উৎকর্ষ সাধিত হয়। এক বর্ণনায় এসেছে-

صَلُّوا عَلَيَّ فَإِنَّهَا زَكَاةٌ لَكُمْ، وَاسْأَلُوا اللهَ لِي الْوَسِيلَةَ، فَإِنَّهَا دَرَجَةٌ فِي أَعَلَى الْجَنَّةِ، لَا يَنَالُهَا إِلّا رَجُلٌ، وَأَرْجُو أَنْ أَكُونَ أَنَا هُوَ.

তোমরা আমার প্রতি দরূদ পেশ কর। কেননা এটা তোমাদের জন্যে যাকাত স্বরূপ। আর আমার জন্য আল্লাহর নিকট ওসিলা তলব কর। কেননা এটা হচ্ছে জান্নাতের সর্বোচ্চ একটি মাকাম। যা কেবল একজনই লাভ করবে। আমি আশা করি, আমিই হব সেইজন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস ৮৭৭০; ফাযলুস সালাত আলাননাবিয়্যি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, ইসমাঈল আলকাযী, হাদিস ৪৬, ৪৭)

মোটকথা, যাকাত যেভাবে সম্পদের ময়লা দূর করে তার প্রবৃদ্ধি ঘটায় তেমনি দরূদের আমলও মুমিনের দ্বীন-ঈমানকে কলুষমুক্ত করে তাতে নূর এনে দেয় এবং ব্যক্তিকে পরিশুদ্ধ করে। তার পাপগুলো মোচন করে দেয়।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়