ঢাকা, রোববার   ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৫ ১৪৩১

শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:৪১, ২৭ মার্চ ২০২৪  

শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ

শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ

‘সব কটা জানালা খুলে দাও না/ আমি গাইবো গাইবো বিজয়েরই গান/ ওরা আসবে চুপিচুপি/ যারা এই দেশটাকে ভালোবেসে দিয়ে গেছে প্রাণ/ সব কটা জানালা খুলে দাও না।’ গতকাল মহান স্বাধীনতা দিবসে বাঙালি জাতি হৃদয়ের সবকটা জানালা খুলে দিয়ে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের মহান আত্মত্যাগের কথা। শপথ নিয়েছে সেই কাক্সিক্ষত স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার, যে বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে ‘জয় বাংলা’ শব্দের নিনাদ তুলে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বাংলার সূর্য সন্তানেরা। স্বাধীনতা দিবসের প্রত্যুষে রাজধানীর উপকণ্ঠে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সফররত ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগেল ওয়াংচুক। ৫৪তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আমন্ত্রণে ভুটানের রাজা চার দিনের সরকারি সফরে এখন বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ভুটানই প্রথম বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। দীর্ঘ ১১ বছর পর ওয়াংচুক তাঁর পত্নীসহ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঢাকায় এসেছেন। এর আগে সর্বশেষ ২০১৩ সালে রাজা ও রানি বাংলাদেশ সফর করেন। ভোর ৫টা বেজে ৫৭ মিনিটে প্রথমে রাষ্ট্রপতি জাতীয় স্মৃতিসৌধের শহীদ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী এবং ভুটানের রাজা পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

পুষ্পস্তবক অর্পণের পর রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং ভুটানের রাজা ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের অমর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনীর একটি সুসজ্জিত চৌকশ দল এ সময় রাষ্ট্রীয় সালাম জানায় এবং বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়। রাষ্ট্রপ্রধান, সরকার প্রধান এবং ভুটানের রাজা স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে রাখা দর্শনার্থী বইতে স্বাক্ষর করেন।

পরে দলের নেতাদের সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দলের পক্ষ থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধে আরেকটি পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।

এ সময় জাতীয় সংসদের স্পিকার, ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রিসভার সদস্যরা, জ্যেষ্ঠ রাজনীতিবিদ, তিন বাহিনীর প্রধানরা, সংসদ সদস্যরা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিদেশি কূটনীতিক, বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধি এবং পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

পরে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম জাতীয় স্মৃতিসৌধের শহীদ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষ হলে সর্ব সাধারণের জন্য স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। দেশের নানা প্রান্ত থেকে শ্রদ্ধা জানাতে ছুটে আসা মানুষের ঢল নামে স্মৃতিসৌধে। ফুলে ফুলে ভরে ওঠে শহীদ বেদি।

মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেছে ‘অভিযাত্রী’ নামে একটি সংগঠন। ইতিহাসের পথরেখায় ‘শোক থেকে শক্তি : অদম্য পদযাত্রা’ শীর্ষক স্লোগানে শীর্ষক এই পদযাত্রায় গতকাল যোগ দিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।

বেলা ১২টা পর্যন্ত স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, আঞ্চলিক লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), নির্বাচন কমিশন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, বিভিন্ন স্কুল ও কলেজ, মৎস্য অধিদফতর, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সমাজ ও জাতি গঠন (সজাগ), স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ), বাংলাদেশ গণ আজাদী লীগ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, আশুলিয়া থানা শ্রমিক লীগ, ঢাকা আইনজীবী সমিতি, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, জাতীয় পার্টি, জাকের পার্টি, জাতীয় শ্রমিক লীগ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), জাতীয় যুব জোট, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, বাংলাদেশ সাম্যবাদী আন্দোলন, গণতন্ত্রী পার্টি, গণ অধিকার পরিষদ (নূর-রাশেদ), গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন, বাসদ, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, গণফোরাম, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, রক্তধারা-৭১ (মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের উত্তরসূরি)-সহ আরও বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন।

স্বাধীনতা দিবসে দেশকে ‘সোনার বাংলা’ হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিজ্ঞা প্রধানমন্ত্রীর : মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে স্বাধীনতার চেতনায় বাংলাদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ে তোলার প্রতিজ্ঞা পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল জাতীয় স্মৃতিসৌধে একাত্তরের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পর পরিদর্শন বইয়ে এ প্রতিজ্ঞার কথা লেখেন তিনি।

পরিদর্শন বইয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লিখেছেন, ‘আজ ২৬ মার্চ, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। আজকের দিনে আমি পরম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। আমি শ্রদ্ধা জানাই বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি এবং পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে নির্যাতিতা মা-বোনদের প্রতি। গভীর বেদনাভরা ক্লান্ত হৃদয়ে স্মরণ করছি আমার মা বেগম ফজিলাতুন নেছা এবং আমার তিন ছোট ভাই কামাল, জামাল, রাসেলসহ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকদের নির্মম বুলেটের আঘাতে যারা শাহাদাতবরণ করেছেন তাদের।’

এ সময় তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিহত জাতীয় চার নেতার প্রতিও শ্রদ্ধা জানান; যাদের ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী লেখেন, ‘আজ এই মহান দিবসে আমাদের প্রতিজ্ঞা- স্বাধীনতার চেতনায় বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ে তুলব, ইনশা আল্লাহ।’ দেশের সব জনসাধারণকে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের শুভেচ্ছাও জানান শেখ হাসিনা। ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে পরিদর্শন বইয়ের লেখা শেষ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ধানমন্ডিতে মানুষের ঢল : মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে মানুষের ঢল নামে। আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষ স্বাধীন বাংলার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

সকালে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর প্রাঙ্গণে প্রথমে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি এবং স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা ও প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা উপস্থিত ছিলেন। পরে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে নিয়ে শেখ হাসিনা দলের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে আরেকবার পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

এরপর সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় ধানমন্ডি ৩২ নম্বর। আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। শ্রদ্ধা জানায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধা : মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল আহাদ চৌধুরী ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব সফিকুল বাহার মজুমদার টিপুর নেতৃত্বে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আনোয়ার হোসেন ভুঁইয়া, নুর ইসলাম মোল্লা, মো. শাহজাহান, আনোয়ার হোসেন, কমান্ডার আবুল বাসার, মো. জামাল খাঁ প্রমুখ।

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস-২০২৪’ উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট উন্মোচন করেছেন। গতকাল সকালে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে এক অনুষ্ঠানে ১০ টাকা মূল্যের স্মারক ডাকটিকিট, ১০ টাকার উদ্বোধনী খাম এবং ৫ টাকার একটি ডাটা কার্ড উন্মোচন করেন। অনুষ্ঠানে একটি বিশেষ সিলমোহর ব্যবহার করা হয়। আজ বুধবার ঢাকা জিপিওর ফিলাটেলিক ব্যুরো থেকে স্ট্যাম্প, ফাস্ট ডে কভারস এবং ডাটা কার্ড বিক্রি শুরু হবে। পরবর্তীতে সারা দেশের অন্যান্য জিপিও এবং প্রধান পোস্ট অফিসেও এসব পাওয়া যাবে।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়